আজ ৪৯ তম বিজয় দিবস। ১৯৭১এর মুক্তিযোদ্ধো চলাকালিন সময় যেকজন মুক্ত স্বাধীন বাংলা ও ধর্মনিরপেক্ষতার স্বপ্ন দেখছিলেন তার মধ্যে প্রাক্তন সংসদ স্বর্গীয় চিত্তরঞ্জন সূতার মহাশয় ছিলেন অন্যতম এবং মুক্তিযোদ্ধের অন্যতম প্রধান সংগঠক।
বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতে মুক্তিযোদ্ধের মহান শুভার্থী ভারতের তৎকালিন প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্ধিরা গান্ধী পশ্চিমবঙ্গ সরকারের এবং প্রবাসী বাংলাদেশ সরকার ও মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে যোগাযোগের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ছিলেন বঙ্গবন্ধুর শ্রেষ্ঠ সারথী ও বাংলাদেশ স্বাধীনতা আন্দোলনের নিভৃত কূটনৌতিক তৎপরতার মধ্যমনি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব জানতেন পাকিস্তান আক্রমন করবেই তাই অসহযোগ আন্দোলন চলাকালেই বঙ্গবন্ধু ঠিক করে রেখেছিলন কোথায় গেলে কিকি সাহায্য পাওয়া যাবে।
৭১ এর ১৮ই ফেব্রুয়ারী ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে ডেকে পাঠিয়েছিলেন, শেখ মনি, তোফায়েল আহন্মদ, আব্দুল রাজ্জাক ও সিরাজুল আলম খানকে সেখানে জাতীয় চার নেতাও উপস্থিত ছিলেন।
বঙ্গবন্ধু তাদের বললেন পড় মুখস্ত কর, একটি ঠিকানা ২১ ডাঃরাজেন্দ্র রোড নর্দানপার্ক ভবানীপুর কোলকাতা(সানিভিলা)। আমরা পড়লাম মুখস্ত করলাম। বঙ্গবন্ধু বললেন ওখানেই হবে তোমাদের জায়গা।
ওখান থেকেই মুক্তিযোদ্ধাদের সংগঠিত করবে, আর ওটাই ছিল চিত্তরঞ্জন সূতার মহাশয়ের বাড়ীর ঠিকানা। এতেই অনুমান করা যাবে স্বাধীনতা সংগ্রামে চিত্ত বাবুর কতটা গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা ছিল।
যৌথ সিদ্বান্তের ভিত্তিতে এপ্রিলের প্রথম দিক আওয়ামী লীগের নির্বাচিত সকল সংসদ সদস্য, নেতা ও কর্মীদের নিয়ে চিত্ত সুতার এক বিশেষ সভায় বসেন সেখানেই উদ্ভুত পরিস্থিতিতে কি করনীয় ও কর্মপন্হা নিয়ে আলোচনা এবং সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
এখানে একটি প্রবাসি সরকার গঠনের জন্য সদস্য নির্বাচন করা হয়, এখান থেকে দশজন নেতাকে নিয়ে চিত্ত সুতার ১০ এপ্রিল দিল্লীতে গমন করেন এদের শ্রীমতি ইন্ধিরা গান্ধীর সাথে পরিচয় করানোর জন্য। বাংলাদেশের প্রবাসী সরকারের নাম দিল্লী থেকে ঘোষনা করা হয়। স্বাধীনতা সংগ্রামের বাংলাদেশের অস্হায়ী সরকার ও ভারত সরকারের মধ্যে চিত্তরঞ্জন সূতার অনুঘটকের কাজ করেন। ঢাকায় পাকসেনার অভিযান শুরু হওয়ার কয়েকদিনের মধ্যে ভারতের সীমান্ত এলাকায় বিভিন্ন আশ্রয় শিবির মুক্তি বাহিনীর প্রশিক্ষন ও অস্ত্র সরবরাহ তথা তিন মাসের মধ্যে অস্হায়ী সরকার গঠন এর ঘটনা প্রবাহ তার প্রমান করে। এ বিষয় পূর্ব প্রস্তুতি ছাড়া কিছুতেই সম্ভব ছিল না, আর এখানেই নিহিত আছে চিত্তরঞ্জন সূতার মহোদয়ের ভূমিকা।
এব্যাপারে ১৯৭১ সালে গঠিত বাংলাদেশ কমান্ড কাউন্সিলের সদস্য আব্দুল রাজ্জাকের দেয়া এর সাক্ষাৎকারের উদ্ধৃতি দিয়ে মিঃ মাসাদুল হক তার "" বাংলাদেশ স্বাধীতনা যুদ্ধে "র" এবং সি, আই, এ,-এর ভূমিকা বইয়ে লিখেন।‘‘মুজিব সরকারের প্রধান কাজই ছিল লক্ষ লক্ষ শরনার্থীদের আশ্রয় দেয়া মুক্তিযোদ্ধা সংগ্রহ করা ও তাদের প্রশিক্ষন দেয়া এবং যুদ্ধোর সফল ব্যাবস্থাপনা করা। সকল কাজেই চিত্ত সুতার বিশেষ ভূমিকা পালন করেন।
চিত্তরঞ্জন সূতারের রাজনৈতিক প্রেরনার মূল উৎস ছিলেন অন্তারালের যোদ্ধা তার সহধর্মীনি মঞ্জুশ্রী দেবী, বাংলাদেশ স্বাধীনতা আন্দোলনের নেপথ্যে চিত্তরঞ্জন সূতারে মত মঞ্জুশ্রী দেবীও গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা পালন করেন। তার মৃত্যুর পর স্টেটসম্যান পত্রিকায় ১৯ নভেম্বর ২০০১ , 'A patrion passes away, শিরোনামে একটি খবর ছাপা হয় যার বঙ্গানুবাদ এরকম"" এক খবরে প্রকাশ প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবর রহমান ১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে কলকাতার রাজভবনে এক অনুষ্ঠানে অতিথিদের সাথে মঞ্জুশ্রী দেবীর পরিচয় করিয়ে দিয়ে বলেন---- ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের আগে যে ধরনের গোপন গোপন সংবাদ মিলিটারীদের চোঁখ এড়িয়ে তার ধানমন্ডির বাড়ীতে দেয়া নেয়া করতেন সেটা পাক সরকার জানতে পারলে ওনার ১০ বার ফাঁসি হতে পারত।"
নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ ও ত্রিশলক্ষ শহীদে ও দুলক্ষ মা বোনের সম্ভ্রম বিনিময়ে ১৬ ডিসেম্বর দেশ শত্রুমুক্ত ও স্বাধীনতা লাভ করে, আমরা পাই স্বাধীন বাংলাদেশ।
মুক্ত বাংলাদেশে চিত্তবাবুকে শেখ মুজিব পুরস্কৃত করার জন্য পার্লমেন্টর(এম পি) সদস্য হিসেবে দাঁড় করান, এবং তিনি বিপুল ভোটের ব্যাবধানে নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বীকে হারিয়ে বিজয় লাভ করেন। মন্ত্রী সভার সদস্য হিসেবে চিন্তরঞ্জন বঙ্গবন্ধ শেখ মুজিব পেতে চাইলেও চিত্তবাবু রাজি হননি। কিন্তু এই মানুষটির অবদান প্রচার প্রচারনা আড়ালেই থেকে গেলন। এহেন বর্ণময় এবং অসাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের মৃত্যুর পরও কূটনৈতিক কারনে কোন সরকার স্বীকার করলেন না এবং দিলেন না কোন প্রাপ্য স্বীকৃতি। অথচ দেশী এবং বিদেশী যে সকল ব্যাক্তি বর্গ আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধে বিভিন্ন ভাবে সাহায্য করেছেন তাদের প্রত্যেককে যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করা হয়েছে।
সত্য কোন না কোন দিন প্রকাশিত হবেই কারন সত্যের রয়েছে নিজস্ব শক্তি যাহা কেউ কোন দিনও চেপে রাখতে পারেনি। আমরা চেয়ে রইলাম সেই সত্যের শক্তির দিকে। চিত্তরঞ্জন সূতার মহাশয় নিয়ে হয় না কোন টকশো, প্রোপার নিউজ, চ্যানেলেও কোন প্রতিবেদন।
কিন্তু কেন? চিত্তরঞ্জন সূতার মহাশয়ের এলাকাতে যে কোন দলের রাজনৈতিক প্রোগ্রামে দেখছি সে সব দলের নেতৃবৃন্দ্ব চিত্তরঞ্জন সূতার মহাশয়কে গভীর ভাবে স্মরন করতে এবং তার অবদানকে জনগনের কাছে তুলে ধরতে। সে সকল নেতৃবৃন্দের কাছে দাবী জানাচ্ছি, এই মহান নেতার অবদানকে রাষ্ট্রিয় ভাবে স্বীকৃতি দেবার জন্য সরকারের নীতিনির্ধারকদের দৃষ্টি আকষর্ণ করার। কেননা বর্তমানে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের সরকার বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রিয় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত।
এর সাথে সাথে চিত্তরঞ্জন সূতার নিজ গ্রাম(ব্যাসকাঠী, উপজেলাঃ স্বরুপকাঠী, জেলাঃ পিরোজপুর)এলাকা, ইউনিয়নবাসীর পক্ষ থেকে নির্মানাধীন কালীগঙ্গা নদীর উপর সেতুর নতুবা সদ্য অনুমোদন প্রাপ্ত পিরোজপুর ভার্সিটি অথবা ভরতকাঠী ইন্দুরহাট (স্বরুপকাঠী, পিরোজপুর) সড়কের নাম করন মুক্তিযোদ্ধের অন্যতম সংগঠক প্রাক্তন এম এল এ, ও এম, পি স্বর্গীয় চিত্তরঞ্জন সূতারের নামে করার জোড় দাবী জানাচ্ছি।
তথ্য সূত্রঃ পুলক সূতারের fb থেকে
নি এম/
Editor & Publisher : Sukriti Mondal.
E-mail: eibelanews2022@gmail.com