বাংলাদেশ ওশানোগ্রাফিক রিসার্চ ইনস্টিটিউট(BORI) হল একটি সরকারী গবেষণা প্রতিষ্ঠান যা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের অধীনে সমুদ্রবিজ্ঞান গবেষণায় নিয়োজিত। প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশ ওশেনোগ্রাফিক রিসার্চ ইনস্টিটিউট আইন, ২০১৫ জাতীয় সংসদে পাস হওয়ার পর ২০১৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। গত ২৫/৯/২০১৯ তারিখ এ প্রতিষ্ঠানটি লোকবল নিয়োগ এর জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে যেইখানে বিভিন্ন পদের পাশাপাশি একজন মেডিক্যাল অফিসার(নবম গ্রেড) চেয়ে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। বিজ্ঞপ্তিতে মেডিক্যাল অফিসার এর সর্বনিম্ন যোগ্যতা চাওয়া হয়েছিল স্বীকৃত কোন প্রতিষ্ঠান থেকে এম.বি.বি.এস বা সমমান ডিগ্রী এবং বাংলাদেশ মেডিক্যাল এন্ড ডেন্টাল কাউন্সিল কর্তৃক রেজিষ্ট্রেশন প্রাপ্ত। উক্ত বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী প্রায় দীর্ঘ ২ বছর পর গত ২৭/৫/২০২২ এ লিখিত পরীক্ষা অনুষ্টিত হয় এবং একই তারিখে লিখিত পরীক্ষায় রেজাল্ট দিয়ে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী মেডিক্যাল অফিসার পদে ৮০১ এবং ৮১৭ রোলধারী দুইজন প্রার্থী পরবর্তী দিন অর্থাৎ ২৮/০৫/২০২২ তারিখে মৌখিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করার জন্য মনোনীত হয়। ৮০১ রোল নম্বরধারীর নাম মোঃ ওয়াহেদুজ্জামান।
এ বিষয়ে অভিযোগকারী ডাঃ এ.কিউ.এম জিসানুর রহমান জানান যে, গত ২৭/৫/২০২২ তারিখে লিখিত পরীক্ষার ডুপ্লিকেট প্রবেশপথ সংগ্রহ করতে গেলে তিনি যোগ্য পার্থীদের তালিকা থেকে ৮০১ রোল নাম্বার এর বিপরীতে জনাব ওয়াহেদুজ্জামান এর নাম দেখতে পান এবং ওয়াহেদুজ্জামান এর সাথে তার মোবাইলে কথা হবার মাধ্যমে তিনি জানতে পারেন উক্ত প্রতিষ্ঠান থেকে জনাব ওয়াহেদুজ্জামান কে লিখিত পরীক্ষায় অংশগ্রহণ এর জন্য তারিখ এবং রোল সম্বলিত এস এম এস মোবাইলে প্রেরন করা হয়। কিন্তু ৪২ তম বিসিএস(স্বাস্থ্য) এ তিনি নিয়োগপ্রাপ্ত হওয়ায় উক্ত লিখিত পরীক্ষায় তিনি অংশগ্রহণ করেন নাই।
অভিযোগকারী আরও জানান, যেহেতু ৮০১ রোলধারী ওয়াহেদুজ্জামান উক্ত লিখিত পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন নাই তাই লিখিত পরীক্ষায় ৮০১ রোল নাম্বার অনুপস্থিত থাকার কথা, কিন্তু সংশ্লিষ্ট মহাপরিচালক এবং তার অনুসারী দের যোগসাজশে ৮০১রোল নাম্বার এর বিপরীতে জনাব ফাতেমা রহমান কে নিয়োগ দেওয়া হয়। যা সম্পূর্ন বেআইনি এবং প্রচলিত আইন এর লঙ্ঘন। অর্থাৎ ৮০১ রোল নম্বর ধারী এডমিট কার্ড জনাব মোঃ ওয়াহেদুজ্জামান এর এবং ৮০১ রোল নম্বর ধারী মোঃ ওয়াহেদুজ্জামান লিখিত পরীক্ষা অনুপস্থিত ছিলেন। কিন্তু ৮০১ রোল নম্বর দেখিয়ে নিয়োগ দেয়া হলো ফাতেমা রহমানকে। এ এক অভিনব জালিয়াতি। প্রতিষ্ঠানটির নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গবেষক বৃন্দ জানান পূর্ববর্তী মহাপরিচালকের নিকট এর প্রমাণ রয়েছে যে ৮০১ রোল নম্বর ধারী মোঃ ওয়াহেদুজ্জামান। ৮০১ রোল নাম্বার ধারী ফাতেমা রহমান নন যাকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। অভিযোগ কারী জনাব জিসানুর রহমান জানান, ৮০১ রোল নাম্বার এর বিপরীতে ফাতেমা রহমান এর নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ এর পর তিনি হতভম্ব হয়ে পড়েন।
এছাড়াও মহাপরিচালক এর বিরুদ্ধে সহকর্মী বিশেষ করে মহিলা সহকর্মী দের সাথে একাধিকবার অশোভন মন্তব্য করার অভিযোগ রয়েছে এবং এই ব্যাপারে কারও কাছে অভিযোগ করলে তাদের কে বিভিন্ন ধরনের হুমকি ধামকি দেবারও অভিযোগ রয়েছে। শুধু মহিলা সহকর্মীদের সাথেই না, মহাপরিচালক পুরুষ সহকর্মীদের সাথেও গালিগালাজ, অশ্লীল বাক্য ব্যবহার এবং বিভিন্ন হুমকি ধামকি দিয়ে থাকেন। যেখানে বাংলাদেশ ওসেনোগ্রাফিক রিসার্চ ইন্সটিটিউশন একটি বিজ্ঞানভিত্তিক এবং গবেষণাধর্মী প্রতিষ্ঠান এবং যা সম্পূর্ণভাবে গবেষকদের পরিশ্রমে সামনে এগিয়ে চলেছে। সেই প্রতিষ্ঠানে মহাপরিচালকের এমন দুর্ব্যবহার এবং শিষ্টাচার বহির্ভূত শব্দ চয়ন অন্যান্য সকল গবেষক এবং অফিসারদের জন্য ভীতির কারণ হয়েছে। সকল গবেষকবৃন্দ এবং অফিসারগণ মনে করেন যে, প্রতিষ্ঠানটিতে ইতঃমধ্যেই কাজের পরিবেশ নষ্ট হয়ে গেছে এবং এভাবে চলতে থাকলে খুব তাড়াতাড়ি প্রতিষ্ঠানটি ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছাবে। এ ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে খুব তাড়াতাড়ি ব্যবস্থা নেওয়ার আহবান জানান তারা।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে মহাপরিচালককে ফোন দেওয়া হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
এদিকে দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার, নীতিমালা লঙ্ঘন ও মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টকে ক্ষতিগ্রস্ত করার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় ট্রাস্টের সাবেক সচিব সাঈদ মাহমুদ বেলাল হায়দারের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা ও আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে সুপারিশ করা হয়েছে। এ ছাড়া ট্রাস্টের ক্ষতির সমপরিমাণ টাকা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের কাছ থেকে আদায়ের কথা বলা হয়েছে।
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটি ২০২০ সালে কল্যাণ ট্রাস্টের এই কর্মকর্তাদের বিষয়ে দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ তদন্ত করার পর সত্যতা পায়। তাদের এই সুপারিশ বাস্তবায়নের জন্য মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে।
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, ট্রাস্টের সাবেক সচিব সাঈদ মাহমুদ বেলাল হায়দার বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তা হওয়ায় তার নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ হলো জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এ অবস্থায় মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ও মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টে চিঠি পাঠিয়ে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছিল। এমনই এক কর্ম্করতা বর্তমানে বাংলাদেশ ওশানোগ্রাফিক রিসার্চ ইনস্টিটিউট(BORI) মহাপরিচালক সাঈদ মাহমুদ বেলাল হায়দার।
২০১৯ সালে বাংলাদেশ ওশানোগ্রাফিক রিসার্চ ইনস্টিটিউট, কক্সবাজার 'মেডিক্যাল অফিসার' পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। ২০২২ সালের জুন মাসে এ নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়। পরীক্ষায় বসা তো দূরের কথা, আবেদন না করেও ‘অদৃশ্য ক্ষমতাবলে’ মেডিক্যাল অফিসার পদে এক প্রার্থীকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে।আবেদন না করা প্রার্থীর নিয়োগে জালিয়াতির আশ্রয় নেয়া হয়েছে এমন অভিযোগও উঠেছে।
জানা যায়, বাংলাদেশ ওশানোগ্রাফিক রিসার্চ ইনস্টিটিউট, কক্সবাজার ২০১৯ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর ৩৯.০৮-০০০০,০০৯,১১,০০৪.১৯/৪৬৩ স্মারকে মেডিক্যাল অফিসারের একটি পদসহ বিভিন্ন পদে অস্থায়ী নিয়োগের লক্ষ্যে দরখাস্ত আহ্বান করে। ২০২০ সালের এপ্রিলে লিখিত পরীক্ষা হওয়ার কথা থাকলেও অনিবার্যকারণ বশত তা পিছিয়ে দেয়া হয়। সর্বশেষ ২০২২ সালে নিয়োগ প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হয়।
নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের সময় বাংলাদেশ ওশানোগ্রাফিক রিসার্চ ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ছিলেন শফিকুর রহমান। শফিকুর রহমান বলেন, আমি তো ওখান থেকে চলে আসছি। আমি আমার দায়িত্ব বহু আগে বুঝিয়ে দিয়ে চলে আসছি। এখন যিনি আছে তার সাথে কথা বলেন।
এডমিট কার্ড ইস্যুর আপনার সময়ে হয়েছিল- এমনটি জানালে তিনি বলেন, তখন কোন নিয়োগ কার্যক্রম হয়নি। করোনার কারণে সবই বন্ধ ছিল। ওইটার কোন ডকুমেন্ট কোন কিছুই আমার কাছে এখন নেই। প্রায় দুই বছর আগে আমি সবই বুঝিয়ে দিয়ে এসেছি। কারা নিয়োগ দিয়েছে, কবে নিয়োগ হয়েছে, কি হয়েছে এসব আমি জানি না। আপনি ওই অফিসে কথা বলতে পারেন। সব ওখানে আছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মেডিক্যাল অফিসার পদে নিয়োগ পাওয়া ফাতেমা রহমান বলেন, সে বলেছে তার রোল ৮০১ ছিল। তার ছিল সেটার যদি প্রমাণ দিতে পারে তাহলে আপনি আমাদের নিয়োগ কমিটির সাথে যোগাযোগ করেন। এটা তারা ভালো বলতে পারবে। আমি যে রোল নম্বর পেয়েছি, সে নম্বরের পরীক্ষা দিয়েছি। পরীক্ষা দিয়ে যে প্রসিডিউর মেইনটেইন করতে হয় আমি সেভাবেই এসেছি। অন্যকিছু থেকে থাকলে নিয়োগ কমিটিকে জিজ্ঞেস করেন।
নি এম/
Editor & Publisher : Sukriti Mondal.
E-mail: eibelanews2022@gmail.com