সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪
সোমবার, ১৬ই বৈশাখ ১৪৩১
সর্বশেষ
 
 
অমুসলিমদের বিষয়ে ইসলামের অনিন্দ্য সুন্দর শিক্ষা
প্রকাশ: ০১:৪০ am ১৭-১০-২০২১ হালনাগাদ: ০১:৪০ am ১৭-১০-২০২১
 
 
 


সম্প্রতি কুমিল্লার ঘটনাটি নিয়ে আলোচনা সমালোচনার ঝড় উঠেছে। এর ভয়াবহতা কেবলমাত্র জ্ঞানী মানুষরাই উপলব্ধি করছেন না বরং সাধারণ মুসলমানরাও স্বীকার করেন, এটি নিঃসন্দেহে পবিত্র ইসলামের অনিন্দ্য সুন্দর শিক্ষা বিরুদ্ধ একটি জঘন্যতম আচরণ। তাই এ বিষয়টি আমাদেরকে ভাবিয়ে তুলেছে, আমরা কি আসলেই আন্তরিকভাবে ইসলাম লালন পালন করছি ? 
পবিত্র ধর্ম ইসলামকে বলা হয়েছে শান্তির ধর্ম, যেখানে অমুসলিমদের দেবদেবীদের প্রতি অসদাচরণকে নিষিদ্ধ বরং নীতিগত ভাবে সম্মান দেখানোর জন্য তাগিদ দিয়েছে। এ বিষয়ে আল্লাহ তায়া’লা ইরশাদ করেনঃ "তারা আল্লাহ তায়া’লা বদলে যাদেরকে ডাকে, তাদেরকে তোমরা কখনো গালি দিওনা নইলে তারাও শত্রুতার কারনে না জেনে আরøাহ তায়া’লা কেও গালি দিবে। আমি প্রত্যেক জাতির কাছেই তাদের কার্যকলাপ সুশোভনীয় করে রেখেছি, অতপর সবাইকে একদিন তার মালিকের কাছে ফিরে যেতে হবে, তারপর তিনি তাদের বলে দিবেন, তারা দুনিয়ার জীবনে কে কী কাজ করে এসেছে" ( সুরা আল আনআয়াম, আয়াত, ১০৮)।
ধর্মের ব্যাপারে যে কোন ধরনের শক্তি প্রয়োগ ও জবরদস্তি ইসলামে সম্পুর্ন নিষিদ্ধ। মহান আল্লাহ বলেন, "দ্বীনের ব্যাপারে কোনো প্রকার জবরদস্তি বদ বাড়াবাড়ি নেই" (সুরা বাকারা ২৫৬)। তার মানে অন্য কোনো ধর্মেবিশ্বাসের বিরুদ্ধে ইসলাম শক্তি প্রয়োগ করতে নিষিদ্ধ করেছে। প্রত্যেকের ধর্মীয় স্বাধীনতা এ আয়াতের মাঝে সুস্পষ্ট করা হচ্ছে। 
সূরা কাফিরূনে সুস্পষ্ট ঘোষণা করা হচ্ছেঃ "লাকুম দ্বিনুকুম ওয়ালিয়া দ্বিন" - তোমাদের জন্য তোমাদের ধর্ম আর আমাদের জন্য আমাদের ধর্ম। কেউ কারোর ধর্মীয় বিশ্বাসের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে পারবে না।

অমুসলিমদের অধিকার রক্ষার জন্য মহানবী সাঃ কতোটা আন্তরিকতা ছিলেন তা বুঝতে দু'টি চমৎকার হাদিস উদ্ধৃত করছিঃ "কোনো মুসলমান যদি ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের অধিকার ক্ষুণ্ন করে কিংবা তাদের ওপর জুলুম করে, তবে কেয়ামতের দিন আমি মুহাম্মাদ ওই মুসলমানের বিরুদ্ধে আল্লাহর আদালতে লড়াই করব"। (আবু দাউদ : ৩০৫২)
মহানবী (সা.) আরও বলেছেনঃ "অন্যায়ভাবে কোনো অমুসলিমকে হত্যাকারী জান্নাতের সুঘ্রাণও পাবে না। অথচ ৪০ বছরের রাস্তার দূরত্ব থেকেই ও্ই ঘ্রাণ পাওয়া যাবে"। (বুখারি : ৩১৬৬)
ইসলাম এমনই এক জীবনবোধে বিশ্বাসী মতাদর্শ যেখানে একটি মুসলিম অধ্যূসিত দেশে শুধু অমুসলিমদেরকে তাদের ধর্মীয় স্বাধীনতা নিয়ে শান্তিতে বসবাস করতে বলে না বরং রাষ্ট্র তাদের সার্বিক নিরাপত্তা এবং সুখ সমৃদ্ধিও নিশ্চিত করে।
তাছাড়া ও অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের যাদের সাথে কোন সংঘাত নেই বরং মুসলিদের সাথে শান্তিতে বসবাস করে তাদের প্রতি ইসলাম ইনসাফ তথা ন্যায় আচরণ করার জন্যও নির্দেশ দিয়েছে। আল্লাহ তায়া’লা ইরশাদ করেন, আল্লাহ নিষেধ করেন না ঐলোকদের সাথে সদাচার ও ইনসাফ পূর্ণ ব্যবহার করতে যারা তোমাদের সাথে ধর্মকেন্দ্রিক যুদ্ধ লিপ্ত হয়নি এবং তোমাদের আবাস ভূমি থেকে তোমাদের বের করে দেইনি। নিশ্চয় আল্লাহ ইনসাফকারীদের পছন্দ করেন। (সুরা আল- মুমতাহিনা, আয়াত ৮) আল্লাহ তায়া’লা ঈমানের দাবিদার প্রতিটি মুসলিমকে পরধর্মের প্রতি সহিষ্ণুতা ও শ্রদ্ধা দেখাতে নির্দেশ দিয়েছেন।
পবিত্র ইসলাম রাষ্ট্রে বসবাসকারী মুসলমানদের ন্যায় অন্যান্য ধর্মাবলম্বী নাগরিকদেরও মৌলিক অধিকার রক্ষায় প্রত্যক্ষভাবে ভূমিকা পালন করতে হুকুম দিয়েছে।
★ জান মালের নিরাপত্তাঃ  অমুসলিম নাগরিকদের রক্তের মূল্য মুসলমানদের রক্তের মূল্যের সমান। কোন মুসলিম যদি অমুসলিম নাগরিককে হত্যা করে, তাহলে একজন মুসলমান নাগরিক কে হত্যা করলো, যেমন তাকে মৃত্যুদন্ড দেয়া হতো ঠিক তেমনি মৃত্যুদন্ড দেয়া হবে। রাসুল( সঃ) এর আমলে জনৈক মুসলমান অন্যন্য ধর্মাবলম্বীদের প্রতি হত্যা করলে তিনি খুনি কে মৃত্যুদন্ড দেন। তিনি বলেন, যে নাগরিকের নিরাপত্তার দায়িত্ব নেয়া হয়েছে, তার রক্তের বদলা নেয়ার দায়িত্ব আমারই।
★ ধর্মীয় অনুষ্ঠানের পূর্ণ স্বাধীনতাঃ অমুসলিম নাগরিকদের ধর্মীয় ও জাতীয় অনুষ্ঠানে প্রকাশ্যভাবে ঢাকঢোল পিটিয়ে উদযাপন করা সম্পর্কে ইসলামের বিধান এই যে, নিজেদের জনপদে স্বাধীনভাবে করতে পারবে তবে পরিপূর্ন ইসলামি জনপদ গুলোতে ইসলামী রাষ্ট্রের সরকার স্বাধীনতা এবং বিধিনিষেধ প্রয়োগ করার এখতিয়ার রাখে।
★ উপাসনালয়ের নিরাপত্তাঃ ইসলমী রাষ্ট্রের সরকার অমুসলিম নাগরিকদের উপাসনালয় গুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে, এই উপসনালয়গুলো ভেঙে ফেলা সাধারণ পরিবেশে তো দূরের কথা যুদ্ধ অবস্থায় ও হামলা করা যাবেনা। শরিয়তে সুনির্দিষ্ট অধিকার ছাড়াও বর্তমান যুগে অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদেরকে যে সব সাধারণ অধিকার দেয়া হয়েছে।
★ সম্মানের সুরক্ষাঃ  যেমন কোন মুসলিম কে নিয়ে ঠাট্টা বা গিবত করা, তাদেরকে মারপিট করা অবৈধ- তেমনি এসব কাজ অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের বেলায়ও অবৈধ।
★ বাকস্বাধীনতা এবং লেখালেখির স্বাধীনতাঃ অমুসলিম নাগরিকদেরকে রাষ্ট্রের নাগরিক হিসেবে দেশের কল্যানে কথা বলা ও লেখালেখির স্বাধীনতা ও নিজেদের ধর্ম প্রচারের স্বাধীনতা মুসলিমদের মত ভোগ করবে
★ শিক্ষার ক্ষেত্রে স্বাধীনতাঃ  ইসলামী রাষ্ট্র গোটা দেশের যে শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করবে তাদেরকে সেই শিক্ষা ব্যবস্থাই গ্রহন করতে হবে। কিন্তু ইসলামের ধর্মীয় বই পড়তে বাধ্য করা যাবেনা। দেশের সাধারন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অথবা নিজেদের বিশেষ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আপন ধর্ম শিক্ষার আলাদা ব্যবস্থা করার পুর্ন স্বাধীনতা থাকবে। 
তাছাড়া চাকরি ও অর্থনৈতিক কর্মকান্ড ও পেশাতে অমুসলিমরা মুসলিমদের মত ভোগ করবে তবে চাকরির বিশেষ কিছু পদ ছাড়া সকল চাকরিতে তাদের প্রবেশাধিকার থাকবে এবং অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে ও পেশাতে পুর্ন স্বাধীনতা থাকবে, তবে মুসলমানদের উপর আরোপ করা হয়না এমন কোন বিধিনিষেধ অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের উপরও আরোপ করা যাবেনা। একমাত্র ইসলামেই পারে অমুসলিমদের অধিকার দিতে, এই জন্য ইসলাম মানবতা শান্তি ও শ্রেষ্ঠতম ধর্ম। 
★ ফৌজদারি দন্ডবিধিতে সমতাঃ ফৌজদারি দন্ডবিধি মুসলিম অমুসলিম সকলের জন্য সমান, অপরাধের যে সাজা মুসলিমরা পাবে, সে সাজা অমুসলিমদের উপরও প্রয়োগ হবে ( আল মাবসুত ৯ম খন্ড পৃ- ৫৭-৫৮)।
★ দেওয়ানি আইনের ক্ষেত্রে সমতাঃ দেওয়ানি আইনও উভয়ের জন্য সমান। তাদের সম্পত্তি আমাদের সম্পত্তির মতো, তাই তাদের সম্পদের হেফাজত করাও মুসলমানদের দায়িত্ব। ব্যবসায়িক যে সব পন্থা মুসলমানদের জন্য নিষিদ্ধ, তেমনি অমুসলিমদের জন্য ও তবে শুধুমাত্র শুকর বেচাকেনা, খাওয়া এবং মদ বানানো, পান ও বেচাকেনা করতে পারবে।
★পারিবারিক বিষয়াদিঃ অমুসলিম নাগরিকদের পারিবারিক কর্মকান্ড নিজস্ব পারিবারিক আইন অনুযায়ী ধর্তব্য হবে। এক্ষেত্রে তাদের উপর ইসলামী কানুন কার্যকর করা হবেনা। মুসলিমদের ঘরোয়া জীবনে যে সব জিনিস অবৈধ, তা যদি অমুসলিমদের ধর্মীয় ও জাতীয় আইনে বৈধ হয়। তাহলে ইসলামি আদালত তাদের আইন অনুযায়ী ফয়সালা দিবে।
পরিশেষে সবার প্রতি বিনীত অনুরোধ, পবিত্র কুরআন হাদিসের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের কাজ বা বিশ্বাস থেকে রেহাই পেতে কায়মনোবাক্যে দোয়া করুন আল্লাহ তায়ালা যেনো আমাদেরকে সত্যিকার অর্থেই হেদায়েতের দিশা দেন।


লেখক: ইসলামি সংস্কৃতি বিষয়ক গবেষক।

 
 
 
   
  Print  
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
আরও খবর

 
 
 

 

Editor & Publisher : Sukriti Mondal.

E-mail: eibelanews2022@gmail.com

a concern of Eibela Ltd.

Request Mobile Site

Copyright © 2024 Eibela.Com
Developed by: coder71