চীনকে তার অবস্থান পুনর্বিবেচনা করা উচিত এবং ইন্দো প্যাসিফিক ধারণাটিকে সাধারণ স্বার্থকে এগিয়ে নেয়ার একটি সরঞ্জাম হিসেবে দেখা উচিত। এটিকে বিরোধ বা উত্তেজনার উৎস করে তোলা উচিত নয়।
আমাদের উত্তর সীমান্তে চীনের আচরণের পরিপ্রেক্ষিতে ভারতকে সম্ভাব্য দ্বন্দ্বের অন্যান্য ক্ষেত্রগুলোর উপর নজর রাখা উচিত। ভারত মহাসাগর তার মধ্যে একটি। ২০১৮ সালে সিঙ্গাপুরে শানগ্রিলা সংলাপে তার মূল বক্তব্যে আমাদের প্রধানমন্ত্রী ভারতের ইন্দোপ্যাসিফিক দৃষ্টিভঙ্গি উপস্থাপন করেছিলেন। এই অঞ্চলের সাথে আমাদের ঐতিহাসিক সংযোগ রয়েছে এবং এই শতাব্দীতে সমৃদ্ধি বৃদ্ধির জন্য এর গুরুত্ব আমাদের বোঝা উচিত। এটি স্পষ্ট যে, অন্তর্ভুক্তি, উন্মুক্ততা, আসিয়ান কেন্দ্রীয়তা এবং ঐক্য, নতুন ইন্দোপ্যাসিফিক কেন্দ্রে অবস্থিত। ভারত ইন্দো প্যাসিফিক এলাকাকে নির্দিষ্ট কিছু সদস্যে সীমাবদ্ধ রাখতে চায় না। এবং এটা কোনভাবেই কোন দেশের স্বার্থবিরোধী নয়।
চীন ভারত মহাসাগরের উপকূলবর্তী এলাকা নয়। কিংবা ঐতিহাসিক ভাবেও কোন নৌ উপস্থিতি ছিল না। ১৪০৫ এবং ১৪৩৩ এর মধ্যে তিন দশক বাদে যখন মিং ইয়ংলে সম্রাট ভারত মহাসাগরে ঝেং হি অভিযান প্রেরণ করেছিলেন, তখন চীনা নৌ তৎপরতা পূর্ব চীন সাগর, বোহাই সাগর, পীত সাগর এবং দক্ষিণ চীন সাগরের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। সামুদ্রিক ইতিহাসের এক পণ্ডিত এণজেলা শটেনহ্যামার চীন সমুদ্রকে হালকা ভাবে উপস্থাপন করেছেন। তার মানে এই নয় যে, মহাসাগর বাণিজ্যে চীন সাগর কোন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেনি। এটি কেবলমাত্র মনে করার মত যে, এইজাতীয় বাণিজ্য বিশেষত মালাক্কা জলসীমার বাইরেও আরব, ভারতীয় এবং পার্সিয়ান ব্যাবসায়ীরা বহন করেছিল। যাইহোক, আজকের প্রসঙ্গে চীন দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি এবং বিশ্বের বৃহত্তম বাণিজ্যিক দেশ। ভারত মহাসাগরে সমুদ্র লেনগুলি তার অর্থনীতি এবং সুরক্ষার জন্য অতীব গুরুত্বপূর্ণ। আন্তর্জাতিক আইনের অধীনে এবং আন্তর্জাতিক অনুশীলনের সাথে সামঞ্জস্য রেখে চীনের সমান প্রবেশাধিকার থাকা উচিত।
চীন ইন্দো প্যাসিফিক পদ্ধতিকে স্বাগত জানাতে পারে বলে আশা করা যায় যা ভারত মহাসাগরে তাকে বৈধতা এবং সম্মান উভয়ই দেয়। পরিবর্তে তারা এটির বিরুদ্ধে প্রচারণা করেছে। ২০১৮ সালের মার্চ মাসে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইন্দো প্যাসিফিক ধারণাটিকে প্রশান্ত মহাসাগর বা আরত মহাসাগরে সমুদ্র ফোম হিসেবে বর্ণনা করে এবং তা শীঘ্রই বিলুপ্ত হবে বলে দাবি করেন। চীন এখন অভিযোগ করেছে এটি আমেরিকার নেতৃত্বাধীন চীনকে নিয়ন্ত্রণের একটি চক্রান্ত।
১৯৪৯ সালে গণপ্রজাতন্ত্রী চীন প্রতিষ্ঠার পর চীন প্রাথমিকভাবে স্বদেশ একীকরণের দিকে মনোনিবেশ করেছিল। এর অর্থনীতি বিশ্বব্যাপী প্রসারিত হওয়ার সাথে সাথে নানান দিগন্ত উন্মোচিত হয়েছে এবং এর ফলস্বরুপ চ্যালেঞ্জটি ২০০৩ সালের নভেম্বর মাসে রাষ্ট্রপতি হু জিনতাও চীনের মালাক্কা দ্বিধা হিসেবে দলীয় ক্যাডারদের কাছে আবদ্ধ করেছিলেন। তারা ধারণা করেছিল যে, অন্যরা মালাক্কা স্ট্রেইটকে চীনাদের ধারণ করতে বাধা দেবে। সেদিক থেকে চীন কেবল মালাক্কা স্ট্রেইটস ই না, এর বাইরেও সমুদ্রে আধিপত্য বিস্তারের কৌশল নিয়েছে। পিএলএ নৌবাহিনী এর প্রথম অপারেশন মোতায়েন করেছিল আদেন উপসাগরে ২০০৮ সালে। ২০০৯ সালের ডিসেম্বরে অবসরপ্রাপ্ত এডমিরাল ইয়িন ঝু একটি সম্ভাব্য বিদেশী বেস বা সুবিধা উল্লেখ করেছেন। ২০১০ সালে চীন রাজ্য মহাসাগরীয় প্রশাসনের প্রতিবেদনে বিমান বাহক নির্মাণের পরিকল্পনার ইঙ্গগিত দিয়েছে। ২০১২ সালের মধ্যে চীন ভারত মহাসাগরে প্রবেশের জন্য প্রস্তুত ছিল। কমিউনিস্ট পার্টির ভেতরে একটি মেরিটাইম রাইটস এণ্ড ইন্টারেস্টস লিডিং গ্রুপ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। একই বছরে ১৮ তম পার্টি কংগ্রেসকে দেয়া প্রতিবেদনে চীনকে একটি সমুদ্রশক্তির দেশ হিসেবে গড়ে তোলার প্রথম আনুষ্ঠানিক উল্লেখ পাওয়া গেছে। দ্বৈত উদ্দেশ্যে ছদ্মবেশে পরিকল্পনাটি বাণিজ্য ও অর্থের ক্ষেত্রে সাবধানতার সাথে আবৃত ২০১৩ সালের অক্টোবরে জাকার্তার একবিংশ শতাব্দীর মেরিটাইম সিল্ক রোড হিসেবে উপস্থাপিত হয়েছিল। যদিও কিছু চীনা পণ্ডিত একটি সুরেলা সমুদ্র নির্মাণের ধারণাটি অগ্রসর করেছিলেন, ২০১৪ সালের মে মাসে চীন নেভাল রিসার্চ ইন্সটিটিউটের সাথে যুক্ত তিনজন চীনা গবেষক তাদের নিবন্দে আসল গেম পরিকল্পনাটি লিখেছিলেন ‘ ভারত মহাসগরের কৌশলগত পরিস্থিতি এবং চীনা নৌশক্তি সম্প্রসারণ’। মার্কিন আধিপত্য এবং ভারত মহাসাগরে ভারতের আঞ্চলিক প্রভাব চীনা পরিকল্পনার পক্ষে চ্যালেঞ্জ তৈরি করে তা স্বীকার করে লেখকরা চীন যে অন্তর্নিহিত ঘাটতিগুলি কাটিয়ে উঠতে পেরেছিলেন তা উল্লেখ করেছিলেন, ক। এটি উপকূলীয় রাষ্ট্র নয়; খ। মূল সামরিক স্ট্রেসের মধ্য দিয়ে এর উত্তরণ সহজেই অবরুদ্ধ করা যেতে পারে; গ। চীনের বিরুদ্ধে মার্কিন ভারত সহযোগিতার সম্ভাবনা। তারা পরামর্শ দিয়েছিল যে, এই ঘাটতিগুলি কাটিয়ে উঠতে পারে, ১ বন্দর তৈরীর জন্য সাবধানে সাইট নির্বাচন করে- জিবুতি, গোওয়াদার, হাম্বান্টোটো, সিট্টু এবং সেশেলসকে বিশেষভাবে নামকরণ করা হয়েছিল; ২। সামরিক রঙ যতটা সম্ভব কমাতে নিম্ন কী পদ্ধতিতে কার্যক্রম পরিচালনা করে ৩। প্রথমে সহযোগিতা করে তারপর আস্তে আস্তে ভারত মহাসাগরে প্রবেশ করে বিস্তারিত সমুদ্র সমীক্ষা, সমুদ্রের মানচিত্র, এইচএডিয়েই, বন্দর নির্মাণ ইত্যাদি দিয়ে শুরু করে। চীন সেভাবে সুনির্দিষ্ট পথে এগিয়েছে।
সরকারী সংস্থাটি যখন সামগ্রিক বা ভূকৌশলগত অভিপ্রায় অস্বীকার ক্করে চলেছে, জিয়াও টং বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন চীনা পণ্ডিত সম্প্রতি স্বীকার করেছেন যে, দ্বৈত ব্যবহার্য বন্দরগুলি ভবিষ্যতে সামরিক শক্তির অভিক্ষেপকে সমর্থন দিতে পারে। চীন প্রতিরক্ষা হোয়াইট পেপারে দেয়া নিশ্চয়তার কথা সহজেই ভুলে গেছে, যেখানে বলা হয়েছে, চীন কোন বিদেশী রাষ্ট্র সেনা স্থাপন বা সামরিক ঘাঁটি স্থাপন করে না। জিবুতিতে পিএলএর নতুন বেস হল আরো রসদ সুবিধা আসার প্রোটোটাইপ। গোওয়াদার ও হাম্বানটোটোর মত সাম সম্ভাবনা রয়েছে এমন আরো বন্দর নির্মাণ প্রকল্পগুলি ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলিতে দেয়া হচ্ছে। চীনা বেসামরিক জাহাজগুলি নিয়মিতভাবে
উপকূলীয় রাজ্যের ইইজেড এ জরিপ চালায়। ২০২০ এর জানুয়ারিতে পিএলএ নৌবাহিনী আরব সাগরে রাশিয়া ও ইরানের সাথে ত্রিপক্ষীয় নৌমহড়া চালিয়েছিল। তাদের বিশ্বের ব্ররহত্তম যুদ্ধজাহাজ নির্মাণের পরিক্লপনা রয়েছে। ইন্দো প্যাসিফিক ধারণাটি তাদের সাবধানতার সাথে তৈরি কারিগরি পরিকল্পনাগুলি সম্ভাব্যরুপে লম্বা করবে। এটি অন্তর্ভুক্তিমূলক, অংশগ্রহণমূলক এবং উন্মুক্ত আলোচনার মাধ্যমে বিকশিত। প্রাথমিকভাবে এই ধারণাটিকে অস্বীকার করার পরে তারা এখন তথাকথিত মার্কিন নেতৃত্বাধীন কন্টেন্টমেন্ট কৌশল দ্বারা সৃষ্ট গ্রেট পাওয়ার কৌশলগত সঙ্গঘর্ষ সম্পর্কে ভয় বাড়িয়ে বিপদাশঙ্কা সৃষ্টি করতে চায়। এটি হল আসল ইস্যু থেকে মনোনিবেশ সরানোর চীনা প্রচেস্টা।
২০১২ সালের সেপ্টেম্বরে উপরাষ্ট্রপতি লে ইউচেং বলেছিলেন, ‘ আমরা ভারত- প্রশান্ত মহাসাগরীয় কৌশলকে বিআরআই এর বিরুদ্ধে লড়াই করতে বা এমনকি চীনকে নিয়ন্ত্রণ করার সরঞ্জাম হিসাবে ব্যবহার করার চেস্টার বিরুদ্ধে আছি। চীন আজো শক্তির ভারসাম্যের বিবেচনায় ভবিষ্যতের মানবজাতির কথা বলতে চাইছে। এর উচিত ইন্দো প্যাসিফিক ধারণাটি নিয়ে এর অবস্থান ও দৃষ্টিভঙ্গি পুনর্বিবেচনা করা উভয় পক্ষের সাধারণ স্বার্থগুলির কথা ভেবে। এটাকে দ্বন্দ্বের উৎস করা কাম্য নয়।
জে এস/নি এম
Editor & Publisher : Sukriti Mondal.
E-mail: eibelanews2022@gmail.com