উইঘুরদের অধিকার আদায় নিয়ে কাজ করা একটি দল বেইজিংকে অবিলম্বে জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিলের অংশীদারিত্বমূলক অবস্থান থেকে প্রত্যাহার করার আহবান জানিয়েছে। চীনের উত্তর-পশ্চিম প্রদেশে বসবাসকারী ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা আরো দাবি জানিয়েছে চীনের বিরুদ্ধে সংঘটিত অপরাধের ঘটনা ও নৃশংসতার বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার।
'পূর্ব তুর্কিস্তানে গণহত্যা' শিরোনামে একটি প্রতিবেদনে চীন জাতিসংঘে উইঘুর মুসলিমদের প্রতি যে অন্যায় আচরণ করেছে তা তুলে ধরা হয়েছে। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয় উইঘুরদের জন্য এখনই কাজ করতে হবে। যদিও দেরি হয়েছে তবে এখনো কাজ করার জন্য যথেষ্ট সময় রয়েছে।
উইঘুরদের সংগঠনের নির্বাহী পরিচালক রুশান আব্বাসের শুরুতেই জানিয়েছে, তারা সব সময় গণতান্ত্রিক স্বাধীনতা ও মানবাধিকার নিশ্চিত হবে এমন পরিস্থিতির জন্য নিবেদিত। একবিংশ শতাব্দীতেও চীন উইঘুরদের প্রতি নিপিড়ন ও গণহত্যা চালিয়েছে তা কল্পনাহীন। এত কিছুর পরেও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নিরবতা অকল্পনীয়। চীনের সাথে যারা আর্থিক স্বার্থে জড়িত বা আপস করেছে কেবল তারাই গণহত্যার বিষয় অস্বীকার করতে পারে।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয় চীনা কমিউনিস্ট পার্টির দ্বারা পরিকল্পিত ভাবে পূর্ব তুর্কিস্তানে মুসলিম উইগুর তুর্কিদের ধংস করার পদক্ষেপ নেওয়া হয়। সেই সাথে চীনের অপরাধের সাক্ষী সমূহও ধংস করার পরিকল্পনা গ্রহন করা হয়।
বেইজিং প্রশাসন আন্তর্জাতিক ভাবে অনুমোদিত এবং নিজেদের সাক্ষরিত "গণহত্যা প্রতিরোধ" চুক্তি লঙ্ঘন করেছে। উইঘুর বিরুদ্ধে চালানো গণহত্যার বিষয়ে প্রতিবেদনে চীনের রাষ্ট্রপতি শি জিনপিং, জিনজিয়াং উইঘুর স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের সচিব এবং চেন কোয়াঙ্গু ও অন্যান্য প্রশাসকদের এই জাতীয় অপরাধের জন্য দায়ী করা হয়েছে।
মহামারী মধ্যেও চীন সরকার নির্বিঘ্নে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্বার্থে উইঘুর তুর্কি এবং অন্যান্য মুসলিম সম্প্রদায়ের উপর অত্যাচার ও নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছে। চীন সরকার নিয়মিতভাবে গণহত্যা সংঘটিত হওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করায় পূর্ব তুর্কিস্তানে ঠিক কী ঘটছে তার তথ্য পাওয়া করা কষ্টসাধ্য।
উইঘুরদের বসবাসকারী অঞ্চলে বেইজিংয়ের নীতিমালা পর্যবেক্ষণ করার জন্য একটি আন্তর্জাতিক কমিশন তৈরি করার দাবি জানানো হয় প্রতিবেদনে। যেন সেখানে চীনের কার্যক্রম গুলো যথাযথ ভাবে পর্যবেক্ষণ করা যায়।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয় চীন বিশেষত ২০১৪ সাল থেকে উইঘুরদের জাতিগত পরিচয় এবং জনসংখ্যা নির্মূলের লক্ষ্যে তাদের একীভূত হতে বাধ্য করেছে। সাম্প্রতিক বছর গুলোতে পূর্ব তুর্কিস্তানে সংঘটিত ঘটনাগুলি ১৯৪৮ সালে স্বাক্ষরিত "জেনেভা কনভেনশনে" তালিকাভুক্ত গণহত্যার সংজ্ঞা পূরণ করেছে।
উইঘুরদের জীবনপ্রবাহ নিয়ন্ত্রণের জন্য চীন সরকার পূর্ব তুর্কিস্তানে ১.১ মিলিয়ন চীনা সদস্য পাঠিয়েছিল। এদের কাজ হল উইঘুরদের সাথে থেকে তাদের সামগ্রিক জীবন যাত্রার সব কিছু নিয়ন্ত্রণ করা। সেখানে অবস্থানরত হান চীনা পুরুষদের সাথে অল্প বয়স্ক উইঘুর মেয়েদের বিবাহের মাধ্যমে পূর্ব তুর্কিস্তানের জনসংখ্যার পরিবর্তনের দিকে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে।
চীনা সরকারের 'ডাবল রিলেটিভ প্রোগ্রাম' নামক পরিকল্পনায় চীনা সদস্যরা প্রতি দুই মাসে অন্তত একবার পূর্ব তুর্কিস্তান গমন করে এবং প্রায় এক সপ্তাহ থাকে। একই চীনা সদস্যরা কমিউনিস্ট পার্টির প্রতি উইঘুরদের মন্তব্যের তথ্য সংগ্রহ করে।
সেখানে অবস্থানের সময় চীনা সদস্যরা উইঘুরদের ধর্মীয় ভাবে নিষিদ্ধ মদ পান ও শুকরের মাংস খেতে আদেশ করে। যদি উইঘুররা তাদের কথা না শুনে তাহলে তাদের সন্দেহজনক বলে শনাক্ত করে শিবিরগুলোতে পাঠানো হয়।
প্রতিবেদনে গণহত্যা সংক্রান্ত অপরাধের তদন্তের জন্য জাতিসংঘ, ইসলামিক সহযোগিতা সংগঠন এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থার যৌথ নেতৃত্বে একটি কমিশন গঠন করার প্রস্তাব দেওয়া হয়। কমিশনের তদন্ত করে প্রতিবেদন আন্তর্জাতিক আদালতে পাঠাবে। সেখানে যে কোন একটি দেশকে জাতিসংঘ বা ইসলামিক সহযোগিতা সংস্থার পক্ষে প্রতিনিধি নিযুক্ত করার ব্যবস্থা থাকবে।
প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয় "উপরোক্ত কমিশনার তদন্তের সময়, চীনের বিরুদ্ধে প্রাসঙ্গিক নিষেধাজ্ঞাগুলি কার্যকর থাকবে। যেন চীন অর্থনৈতিক প্রভাবের মাধ্যমে কোন দেশকে তাদের পক্ষে ব্যবহার না করতে পারে।
জে এস/নি এম
Editor & Publisher : Sukriti Mondal.
E-mail: eibelanews2022@gmail.com