করোনা নামক মহামারির কারনে যেখানে দেশ ঝুকিপূর্ণ ঘোষণা করা হয়েছে সেই অবস্থাতেও থেমে নেই সংখ্যালঘু তথা হিন্দু নির্যাতন।
চাঁদপুর জেলার কচুয়া উপজেলার ৯নং ইউনিয়নের নলুয়া গ্রামের যতিন্দ্র মাষ্টারের বাড়িতে শনিবার (১৮ই এপ্রিল) সরেজমিনে গিয়ে ঘটনা সম্পর্কে জানতে চাইলে শীতল বাবুর স্ত্রী বকুল রানী বলেন, গতকাল ১৭ই এপ্রিল শুক্রবার দুপুরের দিকে বাড়ির পাশে খোলা মাঠে তার ভাসুর শীতল সরকারের বাঁধা বাছুরসহ তিনটি গরু প্রতিবেশী মুন্সী বাড়ির ছেলে রাকিব হোসেন ছেড়ে দিয়ে বাছুরটিকে মাটির ঢিল দিয়ে মারতে থাকে। শীতল সরকার তা দেখে রাকিবকে জিজ্ঞেস করে তুমি গরুর কুঠা উঠিয়ে ফেললে কেনো আর গরুর বাছুরটাকে ঢিল দিয়ে মারছো কেনো? তোর গরু আমার ক্ষেতের ধান খেয়েছে এই কথা নিয়ে দুইজনের ভিতর তর্কাতর্কি হয়।. তর্কাতর্কির এক পর্যায়ে রাকিব শীতল সরকারকে কিল ঘুষি মারা শুরু করে এবং দুইজনে মাটিতে পড়ে ধস্তাধস্তি করতে থাকে। পাশ্ববর্তী ক্ষেতে মাটি সংগ্রহ করা শীতল সরকারের ভাই হীরাপদ সরকার এই ঘটনা দেখে ছুটানোর জন্য দ্রুত ঘটনাস্থলে আসে এবং ছুটানোর চেষ্টা করে। তখন রাকিব ক্ষিপ্ত হয়ে শীতল সরকারকে ছেড়ে হীরাপদকে কিল ঘুষি মেরে দূরে থাকা গরু বাধার মুগুর দিয়ে হীরাপদের মাথায় আঘাত করে। সাথে সাথে হীরাপদ মাটিতে লুটিয়ে পড়ে এবং মাথা থেকে রক্ত ক্ষরণ হতে থাকে। এই অবস্থা দেখে রাকিব দ্রুত ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়।
শীতলের ডাক চিৎকারে বাড়ি থেকে অন্যান্য লোকজন এসে দ্রুত স্থানীয় নলুয়া বাজারে আজিজ ডাক্তারের কাছে নিয়ে চিকিৎসা করান।
বাড়ির আরেক মহিলা বিউটি রানী বলেন, এই গ্রামের রাকিব, রিপন, বক্কর, হাসান, মকবুল, মাহবুব, মাসুম সহ ১০-১২ জন ছেলে মিলে একটা গ্যাং তৈরী করেছে। এই গ্যাংয়ের সদস্যরা আমাদের বাড়িতে এসে প্রায়ই বিভিন্ন অজুহাতে অত্যাচার নির্যাতন করে। বছর খানেক আগে তারা আমার মেয়ের বিয়ের সময় চাঁদা দাবি করে, না দেওয়াতে কিছুদিন পর আমার মেয়ে এবং মেয়ের জামাই আসলে একটা উচিলা দিয়ে মারধর করে।
সাথে থাকা প্রফুল্ল রানী বলেন, এই গ্যাংয়ের কিছু লোক বিভিন্ন ঋতুতে ধরা আমার গাছের ফলমূল জোরপূর্বক নিয়ে যায় ডাক দিলে মারতে আসে।
পাশে থাকা মিলনী রানী বলেন, আমার ছেলে যখন বিদেশ থেকে বাড়িতে এসেছিল তখন ওরা আমার ছেলের কাছে বিশ হাজার টাকা চাঁদাদাবী করেছিল। না দেওয়াতে বিভিন্ন ভাবে আমাদের উপর অত্যাচার নির্যাতন করে এবং এখনো করে যাচ্ছে।
বাড়ির বৌ ও যুবতী মেয়েরা বলেন, আমরা যখন পুকুরে স্নান করতে যাই তখন এই গ্যাংয়ের লোকেরা পুকুরের পাড়ে এসে দাড়িয়ে আমাদের দিকে তাকিয়ে থাকে। ডাক দিলে বিভিন্ন অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করে।
গত ১৪ এপ্রিল প্রফুল্লরানীর কলা গাছ থেকে জোর পূর্বক কাঁচা কলা পেরে গাছের নিচে বসে লবন মরিচ দিয়ে খাওয়া শুরু করে, ডাক দেওয়াতে উল্টো গাছের সব কাঁচা কলা ছিড়ে নিয়ে যায়। এই গ্যাংয়ের সদস্যরা ২০১৮ সালে লক্ষ্মীপূজায় বাড়িতে এসে ১০হাজার টাকা চাঁদা দাবি করে না দেওয়াতে পূজা বন্ধ করে দেয়। পরে স্থানীয় চেয়্যারম্যানের মধ্যস্ততায় মীংমাসা হয় এবং ভবিষ্যতে এই কাজ করবে না বলে মুচলেকা দেয় বলেন বাড়ির পলাশ চন্দ্র সরকার ও রিপন চন্দ্র সরকার।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে,পাশের বাড়ির জনৈক মুসলিম এক বৃদ্ধ বলেন, এরা ১০-১২জন মিলে একটা গ্যাং তৈরী করে এই হিন্দু বাড়িতে প্রায়ই অত্যাচার করে। আমরা এই নিয়ে অনেক বার সালিশ দরবার করেছি কিন্তু ওরা কাউকে পাত্তা দেয় না। কারো কথা শুনে না।
ঘটনার বিষয়ে স্থানীয় চেয়ারম্যান ও মেম্বারকে ফোন করলে উনারা ফোন রিসিভ করেননি। উপস্থিত একজন বলেন, উনারা ত্রাণ দেওয়ার কাজে ব্যাস্ত আছেন।
কচুয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার জনাব দীপায়ন দাস শুভকে ফোন করে এই বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে, তিনি বলেন করোনা ভাইরাসের মূহুর্তে এই জাতীয় ঘটনা খুবই দূঃখজনক। আমি ভিকটিমকে বলেছি থানায় গিয়ে একটি অভিযোগ দায়ের করতে এবং পুলিশ প্রসাশনকে যথাযথ ব্যাবস্থা নিতে।
কচুয়া থানার অফিসার ইনচার্জ জনাব ওয়ালী উল্লাহ ওলির কাছ থেকে ঘটনা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তারা থানায় এসেছিল। আমি বিস্তারিত শুনেছি এবং লিখিত অভিযোগ নিয়েছি। ঘটনা তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যাবস্থা নেওয়া হবে।
নি এম/
Editor & Publisher : Sukriti Mondal.
E-mail: eibelanews2022@gmail.com