আন্তর্জাতিক ডেস্ক: জম্মু-কাশ্মিরে সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে এক ছাত্রীকে শ্লীলতাহানির অভিযোগকে কেন্দ্র করে বিক্ষোভরত জনতার ওপর গুলিতে আরও এক যুবক নিহত হয়েছে। এ নিয়ে গত ৩ দিনে নিরাপত্তা বাহিনীর গুলি এবং কাঁদানে গ্যাস শেলের আঘাতে ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে।
শুক্রবার বিকেলে কুপওয়ারা জেলায় নিরাপত্তা বাহিনীর ছোঁড়া গুলিতে সর্বশেষ মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। এ দিন আরিফ হুসেন দার (১৮) নামে একাদশ শ্রেণির এক ছাত্র নিহত হয়। এ ঘটনার প্রতিবাদে আজ (শনিবার) হুররিয়াত কনফারেন্স (জি) চেয়ারম্যান সাইয়্যেদ আলী শাহ গিলানি, জেকেএলএফ প্রধান ইয়াসীন মালিক এবং হুররিয়াত কনফারেন্স(এম) চেয়ারম্যান মীরওয়াইজ ওমর ফারুক বনধের ডাক দিয়েছেন।
কাশ্মীর বিশ্ববিদ্যালয়ের সমস্ত পরীক্ষাও বাতিল করে দেয়া হয়েছে। কাশ্মিরে গুলি চালানোর ঘটনার প্রতিবাদে এবং দোষী কর্মকর্তাদের শাস্তির দাবিতে আজ দিল্লির যন্তরমন্তরে ছাত্র সংগঠন ‘আইসা’র পক্ষ থেকে বিক্ষোভের আয়োজন করা হয়েছে। এ নিয়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন, দিল্লির জওহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়য়ের ভাইস- প্রেসিডেন্ট শেহলা রশিদসহ অন্যরা।
গত ১২ এপ্রিল সেনাবাহিনীর জওয়ানের হাতে এক ছাত্রীর শ্লীলতাহানির অভিযোগে হান্দওয়াড়ায় সেনা ক্যাম্প লক্ষ্য করে পাথর ছুঁড়ে বিক্ষোভ দেখায় একদল জনতা। এ সময় বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে নিরাপত্তাবাহিনী গুলি চালালে মুহাম্মদ ইকবাল(২৪), নঈম কাদির ভাট(২২) এবং রাজা বেগম (৭০) নিহত হয়। নঈম কাদির ভাট ছিলেন কাশ্মিরের উঠতি প্রতিভাবান ক্রিকেটার।
১৩ এপ্রিল বুধবার একই ঘটনাকে কেন্দ্র করে প্রতিবাদ বিক্ষোভে নিরাপত্তা বাহিনীর কাঁদানে গ্যাসের গোলার আঘাতে জাহাঙ্গীর ওয়ানি (২৪) নামে আরো এক যুবক নিহত হয়। ১৫ এপ্রিল শুক্রবার কূপওয়াড়ার সেনা ছাউনি ঘিরে প্রতিবাদ বিক্ষোভ সামাল দিতে নিরাপত্তাবাহিনী গুলি চালালে আরিফ হুসেন দার নামে ১৮ বছর বয়সী এক ছাত্র নিহত হয়।
অন্যদিকে, বুধবার সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে এক ভিডিও প্রকাশ করে দাবি করা হয়েছে স্কুল ছাত্রীর শ্লীলতাহানির ঘটনায় কোনো জওয়ান জড়িত নয়। এ নিয়ে ওই ছাত্রীর বক্তব্যের ভিডিও রেকর্ড প্রকাশ করা হয়েছে নিরাপত্তা বাহিনীর পক্ষ থেকে।
যদিও শুক্রবার ওই ছাত্রীর এক ঘনিষ্ঠ আত্মীয় বলেন, ঘটনার পর তিন দিন ধরে মেয়েটিকে থানায় আটকে রেখেছে পুলিশ। এমনকি পরে তার বাবাকেও আটকে রাখা হয়েছে বলে অভিযোগ। পুলিশ বলছে, মেয়েটি ও তার পরিবারের নিরাপত্তা দিতে এই পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। যদিও নিরাপত্তার নামে এভাবে আটকে রাখা যায় কি না তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
শ্রীনগরের মানবাধিকার সংগঠন ‘জম্মু অ্যান্ড কাশ্মির কোয়ালিশন অফ সিভিল সোসাইটি’র পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ভিডিও’র মাধ্যমে ওই নাবালিকার বয়ান প্রকাশ করে নিগৃহীতার পরিচয় প্রকাশ করা হয়েছে, যা করার কথা নয়।
এদিকে, সিপিএমের পক্ষ থেকে হান্দওয়াড়ায় গুলি চালানোর ‘বিশ্বাসযোগ্য তদন্ত’ দাবি করা হয়েছে। দলের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ‘নিরস্ত্র প্রতিবাদকারীদের উপর নিরাপত্তা বাহিনীর গুলি চালানোর ঘটনা মাঝেমধ্যেই ঘটে। এটা অবিলম্বে বন্ধ হওয়া প্রয়োজন।’
ন্যাশনাল কনফারেন্সের সাধারণ সম্পাদক আলী মুহাম্মদ সাগরের অভিযোগ, সরকার কিছু একটা লুকোতে চাচ্ছে বলে নিহতদের পরিবারের সঙ্গে তাদের দেখা করতে দেয়া হচ্ছে না।
জাতীয় স্তরে কংগ্রেস নেতা মনিশ তিওয়ারি বলেছেন, কাশ্মির ক্রমশ নৈরাজ্যের দিকে এগোচ্ছে, যা চিন্তার কারণ। তার মতে, সব থেকে চিন্তার বিষয় হল, উত্তর কাশ্মিরের পরিস্থিতি খুবই খারাপ। সেখানে সংঘাতের পরিস্থিতি রয়েছে। লাগাতার কারফিউ চলছে, ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ, মানুষ রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ দেখাচ্ছে। সব মিলিয়ে পরিস্থিতি আদৌ ভালো নয়।
খবর: রেডিও তেহরান
এইবেলা ডটকম/এসবিএস
Editor & Publisher : Sukriti Mondal.
E-mail: eibelanews2022@gmail.com