জম্মু-কাশ্মীরের বারমুল্লা জেলা দখল করে নেয় পাকিস্তানি সেনারা। জম্মু-কাশ্মীরের রাজধানী শ্রীনগর থেকে পাকিস্তানি সেনারা যখন ৩৫ মাইল দূরে অবস্থান করছিলেন তখনই দিল্লির সাহায্য চায় কাশ্মীরের মহারাজা। ১৪ হাজার সেনা দিয়ে কাশ্মীরে তখন আক্রমণ চালায় পাকিস্তান। আর সেই যুদ্ধে শেষ পর্যন্ত মাত্র তিন হাজার পাকিস্তানি সেনা জীবিত ছিলেন।
এমন সব কথাই নিজের লেখা 'রেইডার্স ইন কাশ্মীর' বইতে তুলে ধরেছেন পাকিস্তানের অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল আকবর খান। ঐ বইতে কাশ্মীর সংঘাতের জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করেন ওই সাবেক সেনা কর্মকর্তা।
বইতে পাকিস্তানে সাবেক সেনা কর্মকর্তা জানান, কাশ্মীরে আগ্রাসন চালানোর পরিকল্পনা হয় লাহোর এবং রাওয়ালপিন্ডি থেকেই। তৎকালীন মুসলিম লীগ নেতা মিয়াঁ ইফতিখারউদ্দিন তাকে কাশ্মীর দখলের পরিকল্পনা করতে বলেন।
এ নিয়ে আকবর খান বলেন, তখন আমি 'আর্মড রিভোল্ট ইনসাইড' কাশ্মীর শিরোনামে একটি পরিকল্পনা দিলাম। ঐ পরিকল্পনায় কাশ্মীরের জনগণকে শক্তি বাড়ানোর ওপর জোর দেওয়া হয় এবং ভারত থেকে কাশ্মীরে যাতে সেনা এবং অস্ত্র না প্রবেশ করতে পারে সে জন্য ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হয়।
আকবর খান বইতে লেখেন, ওই পরিকল্পনার খসড়া তখনকার শীর্ষ নেতাদের কাছে পাঠানো হয়। পরে লাহোরে পাকিস্তানের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলি খান আমাকে বৈঠকে জন্য ডেকে পাঠান। সেখানে পৌঁছানোর পর আমি পাঞ্জাব প্রদেশে মন্ত্রী সরদার শওকত হায়াত খানের সঙ্গে প্রাথমিক পর্যায়ের বৈঠক করি। আমার পরিকল্পনার কপি আমি সেখানে কয়েকজনের হাতে দেখতে পাই।
বইতে আকবর খান আরো বলেন, ২২ অক্টোবর পাকিস্তানের সেনা মুজাফফারবাদ সীমান্ত দিয়ে আক্রমণ শুরু করেন এবং ডোমেল সীমান্তে ২৪ অক্টোবর আক্রমণ চালায়। পরের দিন অর্থাৎ ২৫ অক্টোবর পাকিস্তানের সেনারা শ্রীনগরের দিকে এগোতে থাকেন। ২৭ অক্টোবর ভারতীয় সেনা কাশ্মীরে পৌঁছান এবং প্রতিরোধ শুরু করেন।
আকবর খান জানান যে ২৭ অক্টোবর সন্ধ্যায় পাকিস্তানের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী লাহোরে একটি বৈঠক করেছেন যে কিভাবে ভারতীয় সেনাদের প্রতিরোধ করা যায়।
আকবর খান বলেন, কাশ্মীরে ভারতীয় সেনাদের হস্তক্ষেপ এবং কাশ্মীরের পরিস্থিতি নিয়ে লাহোরে আনঅফিসিয়াল বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী। ঐ বৈঠকে আমিসহ তৎকালীন প্রতিরক্ষা সচিব ইস্কান্দার মির্জা, চৌধুরী মুহম্মদ আলী যিনি পরে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন, তৎকালীন উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী আব্দুল কাইয়ুম খান, তৎকালীন পাঞ্জাব প্রদেশের নওয়াব মামদোত এবং ব্রিগেডিয়ার স্লিয়ের খান উপস্থিত ছিলেন।
ভারতীয় সেনাদের প্রতিরোধের পরিকল্পনা নিয়ে আকবর খান বইতে বলেন, বৈঠকে আমি প্রস্তাব করি জম্মু কাশ্মীরের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিতে রাস্তাগুলো ব্লক করে দিতে। যাতে ভারতীয়রা সেনা এবং অস্ত্র পাঠাতে না পারে। আমি এটি করার সেনা ব্যবহারের জন্য পরামর্শ দেইনি তখন। আমি বলেছিলাম স্থানীয় উপজাতিদেরকে দিয়েই এই কাজটি করাতে।
ঐ বইতে আকবর খান আরো স্বীকার করে নিয়েছেন যে কাশ্মীরের বিভিন্ন আক্রমণের চালানোর সময় স্থানীয় উপজাতীদের সহায়তা নিতেন পাক সেনারা।সূএ: ইত্তেফাক
নি এম/
Editor & Publisher : Sukriti Mondal.
E-mail: eibelanews2022@gmail.com