ইউক্রেনের দক্ষিণাঞ্চলীয় বন্দর শহর খেরসন যুদ্ধের শুরুর দিকেই দখল করে নেয় রাশিয়া।
ইউক্রেন এখন বলছে এই শহরটি এবং পুরো খেরসন অঞ্চল পুনর্দখলে তারা ব্যাপক অভিযান শুরু করেছে, এবং তারা দাবি করছে লড়াইতে তারা রুশ সৈন্যদের চরম চাপের মধ্যে ফেলেছে।
ইউক্রেনের সেনাবাহিনী বলছে তাদের সৈন্যরা খেরসনে "পাল্টা হামলায়" পশ্চিমাদের কাছে থেকে পাওয়া দূরপাল্লার অত্যাধুনিক রকেটের সাহায্যে "সাফল্যের সাথে" রুশ সৈন্যদের অস্ত্র এবং অন্যান্য রসদের গুদাম এবং সরবরাহ রুটের ব্যাপক ক্ষতি করতে পারছে।
টেলিগ্রাম সাইটে এক পোস্টে ইউক্রেনীয় সেনা কর্মকর্তারা বলেছেন নিপরো নদীর ওপর সেতু বিধ্বস্ত হওয়ায় ক্রাইমিয়া থেকে অতিরিক্ত অস্ত্র এবং সৈন্য জড়ো করতে রাশিয়ার সমস্যা হচ্ছে। "তাদের সরবরাহ লাইন বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।"
ইউক্রেন গত কয়েক সপ্তাহ ধরেই বলে আসছে তারা দক্ষিণের খেরসন অঞ্চল থেকে রাশিয়াকে তাড়াতে পাল্টা অভিযান শুরু করতে চলছে। এখন তারা বলছে খেরসনে তাদের সেই প্রত্যাশিত পাল্টা অভিযান শুরু হয়েছে, এবং তাতে সাফল্য পাওয়া যাচ্ছে।
লন্ডনে প্রতিরক্ষা বিষয়ক গবেষণা সংস্থা রুসির গবেষক জাস্টিন ব্রঙ্ক বিবিসিকে বলেছেন যুক্তরাষ্ট্র থেকে দেওয়া হিমারস রকেট লঞ্চার দিয়ে ইউক্রেনীয় সৈন্যরা রাশিয়ার সরবরাহ লাইনের বেশ ক্ষতি করতে পারছে।
খেরসন অঞ্চলে রাশিয়ার বসানো নতুন প্রশাসনের প্রধান ভ্লাদিমির লিওনটিয়েভ বলেছেন শহরের পরিস্থিতি বেশ উত্তেজনাকর এবং গত দুদিনে শহরে অনেক ক্ষেপণাস্ত্র এসে পড়েছে।
রুশ সরকারি বার্তা সংবাদ সংস্থা তাস তাকে উদ্ধৃত করে খবর দিয়েছে, "একটি দুটি নয় একের পর হামলা হয়েছে। খেরসন শহরে সম্ভবত ১০০টি ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত করেছে।।"
তবে রাশিয়া ইউক্রেনের এসব সামরিক সাফল্যের দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে। বার্তা সংস্থা তাস বলছে রুশ বিমান এবং ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা দিয়ে ইউক্রেনের হামলা প্রতিহত করা হচ্ছে।
রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়কে উদ্ধৃত করে আরআইএ নভোস্তি খবর দিচ্ছে দক্ষিণাঞ্চলের নতুন লড়াইতে ১২০০ সৈন্য এবং প্রচুর অস্ত্র খুইয়েছে ইউক্রেন।
ওদিকে সোমবার রাতে এক বিবৃতিতে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি বলেছেন রাশিয়ার দখল থেকে সব এলাকা মুক্ত করা হবে। প্রাণ রক্ষায় রুশ সৈন্যদের তিনি পালাতে বলেছেন।
মি. জেলেনস্কির এই বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ আজ (মঙ্গলবার) বলেছেন ইউক্রেনে রাশিয়ার "বিশেষ সামরিক অভিযান" পরিকল্পনা মতই এগুচ্ছে।
বিবিসির প্রতিরক্ষা বিষয়ক সংবাদদাতা ফ্র্যাঙ্ক গার্ডনারও বলছেন রাশিয়ার কাছ থেকে খেরসন পুনর্দখল ইউক্রেনের জন্য বড়রকম চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে।
তিনি বলেন দুই লাখ ৮০ হাজার মানুষের এই শহরটি রুশ সৈন্যরা যুদ্ধের শুরুর দিকে তেমন কোনো প্রতিরোধ ছাড়াই দখল করে নিয়েছিল। ফলে, তারা সেখানে শক্তভাবে ঘাঁটি গাড়ার অনেক সময় পেয়েছে।
বিবিসির এই সংবাদদাতা বলেন, শুরু থেকে এ পর্যন্ত ইউক্রেন আত্মরক্ষার জন্য লড়াই করছে। ফলে, পাল্টা সামরিক অভিযানের অভিজ্ঞতা তাদের খুবই কম।
এছাড়া, তিনি বলেন, ডনবাসের বিভিন্ন শহর এবং মারিউপোলের মত এলাকা রাশিয়া দখল করতে পেরেছে কারণ শহরগুলো গুঁড়িয়ে দিতে তারা হয়ত দুবার ভাবেনি। কিন্তু খেরসনের মত গুরুত্বপূর্ণ বন্দর শহরে বড় কোনো ধ্বংসযজ্ঞ হয়তো ইউক্রেন চাইবে না।
তবে ফ্র্যাঙ্ক গার্ডনার মনে করেন পশ্চিমা দেশগুলোর কাছ থেকে পাওয়া দূরপাল্লার রকেট এবং কামান ইউক্রেনকে এখন লড়াইতে অনেক সুবিধা দিচ্ছে এবং রাশিয়া তাদের সরবরাহ লাইন নিরাপদ রাখতে সমস্যায় পড়ছে।
কেএম/
Editor & Publisher : Sukriti Mondal.
E-mail: eibelanews2022@gmail.com