কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন ক্ষমতার প্রভাবে সংখ্যালঘুরা আজ অসহায়। তার ভয়ে এক সংখ্যালঘু পরিবারসহ ভারতে আশ্রয় নিয়েছে।
সংখ্যালঘু প্রফুল্ল কুমার দাশের পৈতৃক জায়গা দখল, মামলা করায় তার ছেলে শিক্ষক নারায়ণকে খুন করা, মামলার বাদীসহ সপরিবারে দেশান্তর করা ও সাবেক পৌর কাউন্সিলর লক্ষণ দাশের পৈতৃক ভিটায় মাটি কেটে পুকুর করা সহ অসংখ্যা অভিযোগ রয়েছে আওয়ামী লীগ নেতা গিয়াসের বিরুদ্ধে।
পৌরসভার দিত্তার পানখালীর প্রফুল্ল কুমার দাশ ওরফে সাঁচিরামের পৈতৃক সূত্রে প্রাপ্ত ৭৭ শতাংশ জায়গা রয়েছে ফাঁসিয়াখালীর রাজায়বিল মৌজায় ডেইলপাড়ায়। সেই জায়গা গিয়াসের ভাই ও আত্মীয় স্বজন দখলে নেয়। প্রফুল্ল কুমার আদালতের দ্বারস্থ হন। মামলা সবকিছু তদারকি করছিল তার বড় ছেলে শারিরীক শিক্ষক নারায়ন দাশ। মামলায় সরাসরি গিয়াসকে আসামি করতে না পারলেও স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যাক্তি হিসেবে তার দিকে ইঙ্গিত করে মামলা করে বাদীসহ পুরো পরিবার।
মামলাটি বর্তমানে সিআইডি তদন্ত করছে।
জয়শংক দাশের অভিযোগ পৈতৃক জবর দখল করতে তার ভাই নারায়ণকে গুলি করে হত্যার মদদ দেন গিয়াস উদ্দিন। কিন্তু সরকারি দলের প্রভাবশালী নেতা হওয়ায় পুলিশ তাকে আসামী করতে পারেনি। আর যাদের আসামী করা হয়েছে, পুলিশ সেই সময়ে তাদের গ্রেপ্তার করতে না পারায় তারা প্রতিনিয়ত হুমকি দিতে থাকে। ফলে পরিবার নিয়ে নিজ বাড়ি ছেড়ে পৌর শহরে ভাড়া বাসায় উঠেন। সেখানে থাকতে না পেরে তিনি পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ভারতের আগরতলায় নিকট আত্মীয় বাড়িতে চলে যান।
নারায়ণের বোন জামাই শিক্ষক রুপন কান্তি দে বলেন, গিয়াস উদ্দিনের ভাই সহ তার লোকজন প্রতিনিয়ত মামলা তুলে নিতে হুমকি দিয়ে আসছিলেন বাদীকে। পরিবারের সদস্যদের নারায়ণের মতো একই পরিণতি ভোগ করার হুমকি দেওয়া হচ্ছিল। এ অবস্থায় আমার বুড়ো শ্বশুর- শ্বাশুড়ি সহ পরিবারের সদস্যরা প্রাণ রক্ষার্থে ভিটেমাটি ছেড়ে ভারতে চলে যেতে বাধ্য হন।
উপজেলা হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি রতন বরণ দাশ জানান, শিক্ষক নারায়ণের পৈতৃক সম্পত্তি জবর দখলে গিয়াসের ভাই- স্বজনরা মিলে বিয়ের ১০ দিন আগে নারায়ণকে গুলি করে হত্যা করে। এরপর মামলার বাদীসহ পরিবারের সব সদস্যকে প্রতিনিয়ত হুমকি দিতে থাকে আসামীরা।
আরেক ভুক্তভোগী হচ্ছেন, সাবেক পৌর কাউন্সিলর। ঘটনাটি প্রায় একবছর আগের। ভুক্তভোগী যিনি তাঁর নাম লক্ষ্মণ কান্তি দাশ। তিনি চকরিয়া পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর। কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের দিগরপানখালী হিন্দুপাড়া গ্রামের প্রয়াত অন্নদা চরণ দাশের তথা লক্ষ্মণের পৈত্রিক বাড়ি এটি। বাড়ির কাছের মাতামুহুরী নদীর তীরের পৈত্রিক জায়গায় বন্যার সময় পলিমাটি এসে ভরাট হয়ে গেলে লক্ষ্মণ একটি স্কেভেটর দ্বারা তা অপসারণ করে বাইরে বিক্রি করছিলেন। কিন্তু ওই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও চকরিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গিয়াস উদ্দিন চৌধুরী সশস্ত্র সন্ত্রাসী নিয়ে গিয়ে রাতের আঁধারে স্কেভেটরটি পেট্রল দিয়ে আগুনে ধরিয়ে দেয়। এ সময় বাঁধা দিতে গেলে লক্ষ্মণকে শারিরিকভাবে ব্যাপক মারধরও করেন।
এমনকি লক্ষ্মণের পৈত্রিক বাড়িটির চারিদিক থেকে এভাবে মাটি কেটে পুকুরের মতো করে দেয়। অবশ্য পৈত্রিক ভিটার বাড়ির চারপাশের মাটি অপসারণ করা হয় দিনের বেলায় প্রকাশ্যে। যা স্থানীয় লোকজন প্রত্যক্ষ করেছেন। এই অবস্থা বিদ্যমান ছিল অন্তত ৬ মাসের মতো। এর পর লক্ষ্মণ নিজেই বাইরে থেকে মাটি সংগ্রহ করে খননকৃত জায়গা ভরাট করে নেয়।
ঘটনার পর এনিয়ে থানায় মামলা করতে গেলেও নেওয়া হয়নি। উল্টো নানাভাবে হয়রানির শিকার হতে হয়েছে তাকে।
এমনকি বিষয়টি নিয়ে কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগ নেতাদের কাছে অভিযোগ করা হলেও তারা কোন পদক্ষেপ নেননি সাম্প্রদায়িক এসব ঘটনায় জড়িত আওয়ামী লীগ নেতা গিয়াসের বিরুদ্ধে।
নি এম/
Editor & Publisher : Sukriti Mondal.
E-mail: eibelanews2022@gmail.com