সোমবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৫
সোমবার, ১৫ই বৈশাখ ১৪৩২
সর্বশেষ
 
 
চীনের ফাঁদে বাংলাদেশ!
প্রকাশ: ০৪:৫৬ pm ২৭-০৬-২০২০ হালনাগাদ: ০৫:০০ pm ২৭-০৬-২০২০
 
এইবেলা ডেস্ক
 
 
 
 


সেতু, মহাসড়ক, টানেল ইত্যাদি নির্মাণ বাবদ চীন ইতিমধ্যেই বাংলাদেশের প্রধান ঋণ প্রদানকারী দেশ হয়ে উঠেছে। আমরা এখন চীনের বিখ্যাত ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ’-এর এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এই প্রকল্পের অধীনে পৃথিবীর মোট ১৫২টি দেশের মধ্যে সড়ক ও সমুদ্রপথে সরাসরি সংযোগ স্থাপনের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে চীন দেদার অর্থ ঢালছে। আমরাও তাদের সে খোলা হাত নীতির সুবিধাভোগী। ২০১৬ সালে চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের বাংলাদেশ সফরের পর যে ২৪ বিলিয়ন ডলারের অর্থনৈতিক সাহায্যের চুক্তি হয়েছিল, সে অঙ্ক ধরে বাংলাদেশে চীনের মোট ঋণের পরিমাণ ৩০ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি। আজ হোক বা কাল, এই অর্থ বাংলাদেশকে ফেরত দিতে হবে। ব্যর্থ হলে গলায় ঋণের যে ফাঁস লাগবে, তা ছাড়ানো খুব সহজ হবে না। প্রতিবেশী শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তানের অভিজ্ঞতা তো আমাদের সে কথাই বলে।

শ্রীলঙ্কার কথাই ধরুন। চীনা অর্থে ও কারিগরি সহায়তায় সে দেশের হাম্বানটোটা বন্দর নির্মিত হয়েছিল। কিন্তু তার নির্মাণ খরচ বাড়তে বাড়তে এমন এক অবস্থায় দাঁড়ায় যে ঋণের সুদ গুনতেই শ্রীলঙ্কার প্রাণ যাওয়ার জোগাড়। ভাবা হয়েছিল এই বন্দর থেকে বিস্তর আয় হবে, অথচ কার্যক্ষেত্রে দেখা গেল খুব সামান্যসংখ্যক বাণিজ্যিক জাহাজই এই বন্দরে এসে ভিড়ছে। শেষ পর্যন্ত বাধ্য হয়েই শ্রীলঙ্কা ১৫,০০০ একর জায়গাসহ সেই বন্দরের নিয়ন্ত্রণ ৯৯ বছরের জন্য চীনের কাছে ইজারা দিতে বাধ্য হয়।

ঋণ নিয়ে তা শোধ করার এই ব্যর্থতাকে অর্থনীতিবিদেরা নাম দিয়েছেন ‘ঋণের ফাঁদ’। যুক্তরাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক ব্যাংকসমূহ অনেক দিন থেকেই গরিব দেশকে সাহায্য করার নামে এই ঋণের ফাঁদ পেতে রেখেছে। এখন ‘গরিবের বন্ধু’ চীনও সেই পথ ধরেছে। আফ্রিকার অনেক দেশই এখন এই ফাঁদে পড়ে হাঁসফাঁস করছে। একই অবস্থা মালদ্বীপ ও ফিলিপাইনের।

৬০ বিলিয়ন ডলারের চীনা ঋণ মাথায় নিয়ে পাকিস্তানও এখন নিজের চুল নিজেই ছিঁড়ছে। এক সরকারি হিসাবে বলা হয়েছে, জ্বালানি খাতে চীনের বিনিয়োগকৃত ২৬ বিলিয়ন ডলারের জন্য আগামী ২০ বছরে পাকিস্তানকে ৪০ বিলিয়ন ডলার গুনতে হবে। ঋণের ফাঁদই বটে! 

পাকিস্তানের স্থানীয় বিদ্যুৎ কোম্পানিগুলোয় চীনের বিনিয়োগকৃত প্রকল্পগুলোর মূল্য বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার বাড়িয়ে নিয়েছে চীন। কয়লা প্লান্ট হুয়ানেঙ শানদং রুই (পাকিস্তান) এনার্জি অ্যান্ড পোর্ট কাসিম ইলেকট্রিক কোম্পানি ৩০ বছর মেয়াদি প্রকল্পটির দাম বাড়িয়েছে প্রায় তিন বিলিয়ন ডলার। আর কেবল দুটি প্লান্ট স্থাপনে মূলত সুদ পরিশোধের ব্যাপারে ভুল তথ্য দিয়ে বাড়ানো হয়েছে ২০৪ মিলিয়ন ডলার। পোর্ট কাসিম ইলেকট্রিক পাওয়ার কোম্পানির ৫১ ভাগ শেয়ারের মালিক পাওয়ার চায়না। (হুয়ানেং প্রজেক্টকে এগ্রিকালচার ব্যাংক অব চায়না ৩৫০ মিলিয়ন ডলার ঋণ দেয়)।আর করোনাভাইরাস অতিমারির কারণে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক চাপ বৃদ্ধি পাওয়ায় আলোচনার তাগিদ দিচ্ছে চীন। তবে পাকিস্তান এখনই বিদ্যুতের মূল্য নিয়ে আলোচনা করতে চায় না। তবে তারা ঋণ পরিশোধ ১০ বছর পর্যন্ত বিলম্ব করতে চায়।

ইমরান খান ২০১৮ সালে ক্ষমতায় আসার পর উত্তরাধিকার সূত্রে বিদুৎ প্রকল্পের দায় পরিশোধ নিয়ে সমস্যায় পড়েছেন। কয়েক মাস বিলম্বের পর ইসলামাবাদ অবশেষে ৬ বিলিয়ন ডলারের প্রণোদনার জন্য আইএমএফের কাছে আবেদন করে। এটি অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে কিছুটা সহায়ক হয়। হুয়ানেং কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মূল্য নির্ধারণ করতে সহায়তা প্রদানকারী বেইজিংভিত্তিক প্রকৌশলী পরামর্শক প্রতিষ্ঠান হেং চেং জিন গ্রুপ জানায়,সর্বশেষ অবস্থা পর্যালোচনা করে নতুন মূল্য নির্ধারণ করা যেতেই পারে।

ইমরান খানের সরকার সরকারি ও বাণিজ্যিক খাতে ১০ বিলিয়ন ডলারের বেশি ঋণের সুদে ছাড় দেয়ার জন্য বেইজিংয়ের সাথে যে আলোচনা করছেন, তা সাথে সম্পর্কহীন এই ঋণ পরিশোধের কথাবার্তা। চলতি মাসে বেইজিং জানিয়েছে, করোনাভাইরাসের কারণে ৭৭টি উন্নয়নশীল দেশের ঋণ পরিশোধ স্থগিত রেখেছে।

দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশ পাকিস্তানের পড়ে চীনের দ্বিতীয় বৃহৎ বৈদেশিক ঋণ গ্রহণকারী। আর উদ্যোগটা এসব ঋণ ঘিরেই। ভারত ও পশ্চিমা অর্থনীতি বিশারদরা মনে করেন, ঋণের চাপে একসময় ঢাকা সব বিষয়ে সিদ্ধান্তের জন্য বেজিংয়ের মুখাপেক্ষী হয়ে পড়বে।

নি এম/

 
 
 
   
  Print  
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
আরও খবর

 
 
 

 

Editor & Publisher : Sukriti Mondal.

E-mail: eibelanews2022@gmail.com

a concern of Eibela Ltd.

Request Mobile Site

Copyright © 2025 Eibela.Com
Developed by: coder71