প্রসব বেদনায় কাতরাচ্ছিলেন শিল্পীরানী দাস। দীর্ঘক্ষণ রক্তক্ষরণ হলেও সন্তান প্রসব হচ্ছিল না। অবস্থা দ্রুতই খারাপের দিকে যাচ্ছিলো। গভীর রাতে স্ত্রীকে নিয়ে কি করবেন ভেবে দিশেহারা হয়ে পড়েছিলেন রঞ্জিত দাস। অ্যাম্বুলেন্সের ফোন নম্বর ছিলো না। আর তাই হাসপাতালে নেয়ার জন্য পরিচিত কয়েকজন সিএনজি চালককে ফোন করেছিলেন।
কিন্তু করোনার ভয়ে আর যেখানেই হোক হাসপাতালে যেতে কোনোভাবেই রাজি নন তারা। এদিকে শিল্পীরানীর দিকে তাকানো যাচ্ছে না। এমন অবস্থায় স্থানীয় উপজেলা চেয়ারম্যানের ছেলে রাজুর কাছ থেকে নন্বর নিয়ে শ্রীমঙ্গল র্যাব-১১ এর ক্যাম্প কমান্ডার এএসপি আনোয়ার হোসেনকে ফোন করেন নির্মল নামে একজন।
আনোয়ার হোসেন জানান, গত রবিবার দিবাগত রাতে তিনি টহল ডিউটিতে ছিলেন। এ সময় তার কাছে একটা ফোন আসে। ফোন করে তাকে নির্মল নামে একজন বলেন, তার পিসি সন্তান সম্ভবা। তার প্রসব বেদনা হচ্ছে, পানি ভাঙছে, কিন্তু দীর্ঘ সময় ধরে বাচ্চা প্রসব হচ্ছে না। তাকে জরুরি ভিত্তিতে হাসপাতালে নেয়া দরকার। কিন্তু মৌলভীবাজার জেলা যেহেতু লকডাউন তাই তারা কোনো গাড়ি পাচ্ছে না।
তিনি বলেন, তারা আমার কাছে সহযোগিতা চাইলেন। ওই সময় রাত প্রায় ১২টার কাছাকাছি। ভাবলাম যেহেতু আমি টহলে আছি তাই যদি ওই নারীকে নিয়ে আসি তাহলেও টহল হচ্ছেই। র্যাবের গাড়ি দেখলেও তো মানুষ নিরাপদ বোধ করে। আমি তাদের কাছে লোকেশন জানতে চাইলাম। এটি ছিলো শ্রীমঙ্গলের দক্ষিণে উত্তর সুর নামক একটি গ্রাম। সেখানে গিয়ে দেখলাম ওই প্রসূতির খুবই সংকটাপন্ন অবস্থা। তাকে দ্রুত শ্রীমঙ্গল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলাম।
আনোয়ার হোসেন আরো বলেন, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রসূতি ওয়ার্ড তিন তলায়। ওই নারী হেঁটে ওঠার মতো অবস্থায় ছিলেন না। তার স্বামীও তাকে তুলতে পারবেন এমন অবস্থা ছিলো না। তাদের দ্বিধাদ্বন্দ্ব দেখে তাই সময় নষ্ট না করে আমি নিজেই তাকে নিয়ে গেলাম প্রসূতি ওয়ার্ডে।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক সাজ্জাদ চৌধুরী জানান, তারা হয়তো বাসায় ডেলিভারি করানোর জন্য চেষ্টা করছিলেন কিন্তু বাসায় ডেলিভারি হচ্ছিল না। এমনিতেই মৌলভীবাজার জেলায় এখন লকডাউন চলছে। তাই কোনো গাড়িঘোড়াও পাচ্ছিলেন না। ওই র্যাব কর্মকর্তা আগেই বলে রেখেছিলেন, যদি কোনো রোগী গাড়ি না পান তাহলে যেন তাকে ফোন করেন। তিনি ওই প্রসূতিকে হাসপাতালে নিয়ে আসার কিছুক্ষণ পর ডেলিভারি হয়।
এদিকে সন্তানের বাবা হওয়ার আনন্দে উৎফুল্ল রঞ্জিত দাস র্যাব কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেনের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশের ভাষা খুঁজে পাচ্ছেন না। তিনি বলেন, আমি তো প্রথম বিশ্বাসই করছিলাম না, র্যাবে এই লাহান কাম করবো! র্যাবের গড়ি দিয়া লইয়া যাবে, তহন আমি বুইচ্ছি না। আচমকা সে আইলো, আইয়া লইয়া গেছে।
তিনি বলেন, কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে পারছি না, এত বড় কাম করবে আমি নিজেও কল্পনাও কইরছি না।… র্যাব.., ভাই.. কইতে পারছি না। এত দ্রুত কাম করবো…, কিতা কইতাম! কৃতজ্ঞতার শেষ নাই। ভয়ঙ্কর একটি রাত কোনো বিপদ ছাড়াই পার করা রঞ্জিত জানালেন, তার স্ত্রী এবং নবজাতককে বাসায় নিয়ে এসেছেন। তারা দুজনই সুস্থ আছে।
নি এম/
Editor & Publisher : Sukriti Mondal.
E-mail: eibelanews2022@gmail.com