চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মাণাধীন বঙ্গবন্ধু টানেলের কাজ প্রায় ৯৫ শতাংশ শেষ হয়ে গেছে। বাকি কাজ ফেব্রুয়ারির মধ্যে শেষ করার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে সেতু কর্তৃপক্ষ। আগামী তিনমাসে বাকি কাজ শেষ করে বঙ্গবন্ধু টানেলের উদ্বোধনের আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
গত বছরের ২৬ নভেম্বর ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলের’ দু'টি সুড়ঙ্গপথের (টিউব) একটির কাজ শেষে উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, দক্ষিণ টিউবের কাজ শেষের পর এখন উত্তর টিউবসহ আনুষাঙ্গিক কাজ এগিয়ে নেয়া হচ্ছে। ডিসেম্বরে উত্তর টিউবের কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও আরো সময় লাগবে পুরোপুরি শেষ হতে । ফেব্রুয়ারির মধ্যে উত্তর টিউবসহ বাকি কাজ শেষ করার টার্গেট নেওয়া হয়েছে।
টানেলের প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী মো. হারুনুর রশীদ সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ‘প্রকল্পের মোট কাজের ৯৫ শতাংশ শেষ হয়েছে। ফেব্রুয়ারির মধ্যে আমরা বাকি কাজ শেষ করতে পারবো। এরপর কিছু আনুষাঙ্গিক কাজের জন্য হয়তো আরও কিছুদিন সময় লাগতে পারে। তবে মার্চের মধ্যে পুরোপুরি কাজ শেষ হয়ে যাবে বলে আশা করি।’
তিনি আরো বলেন, ‘বড়জোর আর তিন মাস লাগবে। এরপর উদ্বোধন এবং টানেল দিয়ে যানবাহন চলাচলের বিষয়টি নির্ধারণ করবে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষ।’কর্ণফুলী নদীর দুইপাড়ে চীনের সাংহাইয়ের আদলে ‘ওয়ান সিটি টু টাউন’ গড়ে তুলতে ১০ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীন টানেল প্রকল্পের কাজ শুরু হয় ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে। নির্মাণ কাজ করছে চীনা কোম্পানি ‘চায়না কমিউনিকেশন কনস্ট্রাকশন লিমিটেড।’
প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ৩ দশমিক ৩২ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এই টানেলে প্রতিটি টিউব বা সুড়ঙ্গের দৈর্ঘ্য ২ দশমিক ৪৫ কিলোমিটার। একটির সঙ্গে অপর টিউবের দূরত্ব ১২ মিটারের মত। প্রতিটি টিউবে দুটি করে মোট চারটি লেইন তৈরি করা হয়েছে। টানেলের পূর্ব ও পশ্চিম ও প্রান্তে থাকছে ৫ দশমিক ৩৫ কিলোমিটার সংযোগ সড়ক। এ ছাড়া ৭২৭ মিটার দৈর্ঘ্যের একটি ওভারব্রিজ রয়েছে আনোয়ারা প্রান্তে।
নগরীর পতেঙ্গায় নেভাল একাডেমির পাশ দিয়ে ১৮ থেকে ৩১ মিটার গভীরতায় নেমে যাওয়া এই টানেল কর্ণফুলী নদীর দক্ষিণ-পূর্বে আনোয়ারায় সিইউএফএল ও কাফকোর মাঝামাঝি এলাকা দিয়ে স্থলপথে বের হবে। ৩৫ ফুট প্রশস্ত ও ১৬ ফুট উচ্চতার টানেলে দুটি টিউব দিয়ে যানবাহন চলাচল করবে। টানেলের উত্তরে নগরীর দিকে আউটার রিং রোড, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, কাটগড় সড়ক, বিমানবন্দর সড়ক এবং পতেঙ্গা বিচ সড়ক দিয়ে টানেলে প্রবেশ করা যাবে।
টানেল দিয়ে মোটর সাইকেল ও তিন চাকার গাড়ি চলতে না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্মাণকারী সংস্থা বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ। টানেলের ভেতর দিয়ে কী ধরনের গাড়ি চলবে এবং টোল কত হবে, এর একটা প্রস্তাবিত তালিকা করেছে সংস্থাটি। প্রস্তাবিত টোল হার সদ্যসমাপ্ত বছরের (২০২২) ২০ ডিসেম্বর অনুমোদন দিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। এখন সেটা অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে।
সেতু কর্তৃপক্ষের নির্ধারণ করা টোল অনুযায়ী, টানেলের মধ্যে দিয়ে যেতে হলে ব্যক্তিগত গাড়ি (প্রাইভেট কার), জিপ ও পিকআপকে দিতে হবে ২০০ টাকা করে। আর মাইক্রোবাসের জন্য দিতে হবে ২৫০ টাকা। ৩১ বা এর চেয়ে কম আসনের বাসের জন্য ৩০০ এবং ৩২ বা তার চেয়ে বেশি আসনের জন্য ৪০০ টাকা টোল দিতে হবে।
টানেলে দিয়ে যেতে হলে ৫ টনের ট্রাককে ৪০০ টাকা, ৫ থেকে ৮ টনের ট্রাককে ৫০০, ৮ থেকে ১১ টনের ট্রাককে ৬০০ টাকা টোল দিতে হবে। ট্রেইলরের টোল নির্ধারণ করা হয়েছে এক হাজার টাকা।
এইবেলাডটকম/মভশ
Editor & Publisher : Sukriti Mondal.
E-mail: eibelanews2022@gmail.com