বাগেরহাটের চিতলমারীতে বাঁশ-বেত শিল্পের পণ্য বিক্রি করে জীবন-জীবিকা নির্বাহ করে প্রায় দুই হাজার মানুষ। কয়েক বছর ধরে প্লাস্টিক ও সিলভারের তৈরি আসবাবপত্র বাজারে প্রবেশ করায় তার খদ্দের দিনদিন বাড়তে শুরু করে। এতে আগের মত বিক্রি হচ্ছে না বাংলার ঐতিহ্য বেত ও বাঁশ দিয়ে তৈরি ধামা, কুলা, চালন, পইকা সহ বিভিন্ন ধরনের আসবাবপত্র। যার কারণে বেকার হয়ে পড়ছে একটি গোষ্ঠী বা একটি সম্প্রদায়। আর লাভবান হচ্ছে কিছু কোম্পানি।
উপজেলার শান্তিপুর গ্রামের মন্মথ বিশ্বাস জানান, আমাদের এই মুনি (ঋষি) সম্প্রদায়ের আয়ের একমাত্র উৎস হচ্ছে বেত ও বাঁশের তৈরী বিভিন্ন পণ্য। জমিজমা না থাকায় পূর্বপুরুষের এই পেশা ছাড়তে পারি না। বর্তমানে প্লাস্টিকের তৈরী চেয়ার, চালন, কুলা, সের এবং সিলভারের গামলা, বাটিসহ বেশকিছু পণ্য বাজারে আসছে। ওইসব পণ্য দেখতে চাকচিক্য এবং দামে সস্তা হওয়ায় মানুষ সেদিকে বেশি ঝুকে পড়ছে। যার কারনে আমাদের বেত ও বাঁশের তৈরী ধামা, কুলা, চালন, পইকা, সের ইত্যাদি পণ্যের চাহিদা কমছে। এতে কোম্পানিগুলো লাভবান হচ্ছে আর আমরা একটি সম্প্রদায় দিনদিন বেকার হয়ে পড়ছি।
খড়মখালী গ্রামের দিলীপ বিশ্বাস বলেন, এই উপজেলায় চারটি গ্রামে আমাদের মুনি (ঋষি) সম্প্রদায়ের লোক বসবাস করে। সব মিলিয়ে আমরা প্রায় দুইহাজার মানুষ আছি। বেত ও বাঁশের পাশাপাশি কেউকেউ ব্যান্ড পার্টিতে (বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বাদ্যযন্ত্রী)কাজ করে। অনেকে জুতা পালিশ করে জীবিকা নির্বাহ করে।করোনার কারণে সমস্ত অনুষ্ঠান বন্ধ থাকায় তাদেরও সংসার চালানো মুশকিল হয়ে পড়েছে। পূর্বপুরুষের এই বাঁশ-বেত শিল্পের চাহিদা কমে যাওয়ায় কেউ সেলুনে চুলকাটাছে, কেউ ভ্যান চালাচ্ছে। সবকিছু মিলিয়ে আমাদের সম্প্রদায়ের কারোর ভালো আয় নেই। কেউ ভালো নেই। সমাজসেবীরা বলছেন লক্ষাধিক লোকের বসবাস চিতলমারী উপজেলায়। সেখানে মাত্র দুইহাজার মুনি (ঋষি) সম্প্রদায়ের মানুষ রয়েছে। তাদের চাষের জমি কম। আয়ের উৎস কেবল বাঁশ-বেত দিয়ে তৈরি কিছু পণ্য। মানুষ উন্নত হচ্ছে আর দেশীপণ্য রেখে বিদেশিপণ্য ক্রয় করছে। এতে লাভবান হচ্ছে কোম্পানি গুলো আর ভেঙে পড়ছে আমাদের স্থানীয় শিল্পের অর্থনৈতিক অবকাঠামো। এমতাবস্থায় মুনি(ঋষি) সম্প্রদায়ের অর্থনীতির চাকা সচল করতে গেলে বিভিন্ন পর্যায়ে উন্নত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কর্মমূখী কাজে নিয়োগ করার ব্যবস্থা করতে হবে। এবিষয়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে সার্বিক সহযোগিতা একান্ত প্রয়োজন।
চিতলমারী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অশোক কুমার বড়াল বলেন, সরকারের বিভিন্ন দপ্তর থেকে মুনি (ঋষি) সম্প্রদায়ের মাঝে সহযোগিতা করা হয়। এ ব্যপারে তাদের অনেক প্রশিক্ষন দেয়ার ব্যবস্থা করা হয়। যারা এখনো প্রশিক্ষণ পায়নি তাদের ধারাবাহিকভাবে প্রশিক্ষনের ব্যবস্থা করা হবে। তাদেরও উচিত সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে নতুন নতুন পেশায় ঢুকে পড়া।
নি এম/বিভাষ
Editor & Publisher : Sukriti Mondal.
E-mail: eibelanews2022@gmail.com