এ দেশের অনেকেই আমেরিকার নির্বাচনে কি চলছে সেটা বুঝতে পারছেন না। আপাতত শুধু এটা জেনে রাখা ভাল, আমেরিকা ৫০ টি রাজ্য, একটি জেলা ( ওয়াশিংটন শহর), ৫ টি টেরিটরি এবং অসংখ্য দ্বীপের ফেডারেশন। বাংলাদেশ কিংবা ভারতের মতন সবকিছু রাজধানী নির্ভর না। প্রতিটা রাজ্যের আলাদা সংবিধান, আলাদা আইন। আমেরিকান আইন বলে কিছু হয় না। এমন কি প্রতিটা রাজ্যের আলাদা নির্বাচন আইন, নির্বাচন কমিশন। ভারতের মতন জাতীয় নির্বাচন কমিশন বলে কিছু নেই। প্রতিটা রাজ্যের নির্বাচনী আইন আলাদা এবং সেই রাজ্যের সেনেট গর্ভনররা সেটা ঠিক করে। ফলে যে রাজ্যের ফলে ট্রাম্প খুশী না ( মিশিগান, পেনসিল্ভেনিয়া, উইনকনসিন) , ট্রাম্পকে আলাদা করে সেই রাজ্যেই কেস ফাইল করতে হয়েছে।
মোদ্দা কথা আমেরিকার জটিল নির্বাচন বুঝতে গেলে, আমেরিকাতে কিভাবে ক্ষমতা নানান নির্বাচিত ব্যক্তির মধ্যে বেঁটে দেওয়া হয়েছে সেটা বুঝতে হবে। এখানে কেন্দ্রীয় স্তরে যেমন প্রেসিডেন্ট, সেনেট, কংগ্রেস, এটর্নি জেনারেলরা নির্বাচিত হন, ঠিক তেমনি প্রতিটি রাজ্যে গর্ভনর, কংগ্রেস, সেনেট , এটর্নি জেনারেলরা ও নির্বাচিত। আবার জেলাতে জেলা শাসক, জেলার পুলিশ চিফ, জেলার জাজ , স্কুল বোর্ড সব কিছুই নির্বাচিত। সুতরাং এখানে আমরা যখন ভোট দিই, ৪-৫ পাতার ব্যলট পেপার থাকে, যাতে ১৮-৪০ টি পোষ্টের জন্য ভোট দিতে হয়। অধিকাংশ লোকই ৪-৫টি পজিশনের বাইরে আর কাকে ভোট দিতে হবে জানে না। এবার আমি নিজে ভারতীয় কমিউনিটির অনেককে ভোট দিতে সাহায্য করেছি-কারন তারা স্থানীয় নির্বাচনে যারা দাঁড়িয়েছে, তাদের নিয়ে কিছু জানত না।
এবারের নির্বাচনে এটাই সব থেকে বড় গেরো হয়েছে, কারন প্রচুর মেইল-ইন ব্যালট প্রতিটা রাজ্যের ইলেকশন কমিশন এলাও করেছে-প্যান্ডেমিকের জন্য। মেইল ইন ব্যালটে ডেমোক্রাটরা ৭৮% এর কাছাকাছি পেয়েছে। শুধু ট্রাম্পই মেইল ইন ব্যালটের জন্য হারে নি, আমাদের জেলাতেও ডেমোক্রাটিক সমর্থিত পার্থীরা প্রত্যক্ষ ভোটে হারলেও, মেইল ইন ব্যালট কাউন্ট করলে জিতে যাচ্ছে। এর মূল কারন ডেমোক্রাটিক বামপন্থী লবির গ্রাস্রুট লোকেরা সক্রিয় ছিল-যারা তাদের পছন্দের পার্থীদের জন্য মডেল মেইল ইন ব্যাল্ট আগে থেকেই পাঠিয়ে সাপোর্ট বা বেসকে এডুকেট করেছে। রিপাবলিকানরা সেটা করে নি।
প্রচুর জটিল ঘটনা এবারের নির্বাচনে ঘটেছে যা আগে ঘটে নি। এটি আমার তৃতীয় প্রেসিডেন্সিয়াল নির্বাচন যেখানে ভোট দিলাম-আগের দুবার এত জোশ দেখি নি। সর্বত্র প্রচন্ড লড়াই হচ্ছে। ভোট গননাকেন্দ্রে লোকের লাইন-চিতকার খিস্তি চলছে। এসব ভারতে হয় বলে জানতাম আদ্দিন। এবার আমেরিকাতে প্রথম দেখছি।
রেকর্ড সংখ্যক লোক ভোট দিয়েছে-যা আগে কখনো কেউ দেখে নি। এটি গণতন্ত্রের জন্য ভাল যে লোকেরা ভোট দিচ্ছে। লোকেরা বুঝছে রাজনৈতিক পক্রিয়াতে অংশ না নিলে, তাদের ক্ষতি।
কি জিতল তাতে আমেরিকার নীতি বদলাবে না। কারন বাইডেন জিতলেও সেনেট রিপাবলিকানদের হাতে থাকছে। কংগ্রেসেও ডেমোক্রাট-রিপাবলিকান পার্থক্য কমেছে। তাছাড়া বাইডেনও বামপন্থী নন। মধ্যপন্থী এস্টাব্লিশমেন্ট প্রেসিডেন্ট। সুতরাং আমেরিকাতে কিছু বদলাচ্ছে না।
বাইডেন ট্রাম্পের কি কি বদলাবেন, এখুনি বলা যাচ্ছে না। কারন ট্রাম্প উইনকনসিন্স, মিশিগানে হারলেও যা ফাইট দিয়েছেন, তা সমানে সমানে। ওয়াহো, পেনসিল্ভেনিয়া জিতেছেন। এটি গুরুত্বপূর্ন কারন এসব রাজ্যে আগে ডেমোক্রাটরা ১০% এ এগিয়ে থাকত। অর্থাৎ ট্রাম্পের প্রোটেকশনিজম নীতি, ভিসা আইন বাইডেন বদলানোর সাহস পাবেন কি না এখুনি বলা যাচ্ছে না। কারন এইসব রাজ্যে দেখা যাচ্ছে পরিস্কার ভাবেই ওয়ার্কিং ক্লাসের একটা বড় অংশ ট্রাম্পের পেছনে আছে যারা এদ্দিন রিপাবলিকান পার্টিকে ভোট দেয় নি।
যদি ট্রাম্প হেরেও যান, তবুও এটা গুরুত্বপূর্ন যে আগের বারের থেকে অনেক বেশী ভোট এবার ট্রাম্প পেয়েছেন। সুতরাং ট্রাম্পের নীতির পক্ষে লোক নেই-তা ঠিক না। বাইডেনের মতন মধ্যপন্থী এটা মনে রাখবেন বই কি! সূএ: সংরক্ষিত
নি এম/
Editor & Publisher : Sukriti Mondal.
E-mail: eibelanews2022@gmail.com