সোমবার, ০৯ ডিসেম্বর ২০২৪
সোমবার, ২৫শে অগ্রহায়ণ ১৪৩১
সর্বশেষ
 
 
মিয়ানমার সীমান্তে রাতভর গোলাগুলি
প্রকাশ: ০৬:২৭ pm ১১-১০-২০২২ হালনাগাদ: ০৬:২৭ pm ১১-১০-২০২২
 
এইবেলা ডেস্ক
 
 
 
 


মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের জেলা শহর মংডুর আশপাশের এলাকায় দেশটির নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী ‘আরাকান আর্মির’ (এএ) যুদ্ধ চলছে। দিনের বেলা মংডু টাউনশিপে সৈন্য সমাবেশ ঘটিয়ে শক্তি প্রদর্শন করে রাতের আঁধারে হেলিকপ্টারে সীমান্ত এলাকায় মুহুর্মুহু গুলি ও মর্টারের গোলা নিক্ষেপ করছে দেশটির সরকারি বাহিনী। গত দুই দিনের গোলাগুলিতে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে বাংলাদেশ সীমান্তের ঘুমধুম, পালংখালী ও হোয়াইক্যং এলাকার বাসিন্দারা।

সীমান্ত সুরক্ষার দায়িত্বে থাকা একাধিক সূত্র প্রথম আলোকে জানিয়েছে, দুই মাসের বেশি সময় ধরে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুমের তুমব্রু সীমান্তের বিপরীতে রাখাইন রাজ্যের ওয়ালিডং এবং খ্য মং সেক পাহাড়ে দেশটির নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে আরাকান আর্মির তুমুল লড়াই শুরু হয়। দেড় মাস পর এ যুদ্ধের ব্যাপ্তি ছড়িয়েছে দক্ষিণ দিকের জেলা শহর মংডু এবং তার আশপাশের এলাকায়। বর্তমানে দক্ষিণ মংডুর বুচিডং, রাচিডং এলাকায় উভয় পক্ষের তুমুল লড়াই চলছে। ১২ থেকে ১৪ দিন আগে ঘুমধুম সীমান্তের বিপরীতে রাখাইন রাজ্যের পাহাড়ে স্থাপিত বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) একাধিক চৌকি দখলে নেয় আরাকান আর্মি। এখন চৌকিগুলো পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করছে দেশটির নিরাপত্তা বাহিনী। চোরাগোপ্তা হামলার ভয়ে তারা সড়কপথে দিনের বেলায় মংডু থেকে ঘুমধুমের দিকে অগ্রসর হতে পারছে না। এ কারণে রাতের বেলায় হেলিকপ্টার থেকে গুলিবর্ষণের পাশাপাশি মর্টারের গোলা নিক্ষেপ করা হচ্ছে।

ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এ কে জাহাঙ্গীর আজিজ বলেন, ১১ দিন বন্ধ থাকার পর গত রোববার রাতে হঠাৎ গুলিবর্ষণ ও মর্টারের গোলা নিক্ষেপ শুরু করে মিয়ানমার। গতকাল সোমবার সকাল সাড়ে সাতটা পর্যন্ত গোলাগুলি চলে। গতকাল সকালে ঘুমধুম সীমান্ত পরিদর্শনে আসেন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)–এর মহাপরিচালক (ডিজি) মেজর জেনারেল সাকিল আহমেদ। সীমান্ত পরিদর্শন শেষে বিজিবি মহাপরিচালক কক্সবাজার শহরে ফিরে গেলে বিকেল চারটার দিকে ওপারে বেশ কয়েকটি মর্টার শেলের শব্দ শোনা যায়। গতকাল রাতেও ব্যাপক গোলাগুলির শব্দ শুনেছে এপারের বাসিন্দারা।

গতকাল মধ্যরাত থেকে মুহুর্মুহু গোলাগুলি ও মর্টার শেলের বিকট শব্দে কক্সবাজার ও বান্দরবান জেলার টেকনাফ, উখিয়া ও নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তের ৩১ গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ আতঙ্কিত হয়ে পড়ে।

স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও বাসিন্দারা জানায়, মধ্যরাত থেকে মুহুর্মুহু গোলাগুলি ও মর্টার শেলের বিকট শব্দে কক্সবাজার ও বান্দরবান জেলার টেকনাফ, উখিয়া ও নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তের ৩১ গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ আতঙ্কিত হয়ে পড়ে।

ঘুমধুমের তুমব্রু পশ্চিমকুল গ্রামের বাসিন্দা ও নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জামাল হোসেন বলেন, গতকাল রাত আটটা থেকে ভোররাত চারটা পর্যন্ত টানা আট ঘণ্টা মর্টার শেলের বিকট শব্দে এলাকার ঘরবাড়ি কাঁপতে থাকে। টানা দুই মাস গ্রামের নারী-পুরুষ–শিশু কারও চোখে ঘুম নেই। লোকজনের স্বাভাবিক জীবনযাপন, কাজকর্ম ব্যাহত হচ্ছে। আতঙ্কে শিক্ষার্থীরা স্কুল-মাদ্রাসায় যেতে পারছে না।

একই অবস্থা উখিয়ার পালংখালী ও টেকনাফের হোয়াইক্যং ইউনিয়নের মানুষের। হোয়াইক্যং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুর আহমদ আনোয়ারী বলেন, ঘুমধুম, পালংখালী ও হোয়াইক্যং সীমান্তের ওপারে (পূর্বদিকে) মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের ঢেকুবনিয়া, বলীবাজার, কোয়ানচিমং ও নাইচাডং এলাকা। সেখানে স্থাপন করা হয়েছে সেনা ও সীমান্তরক্ষী বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) ছয়টির বেশি ব্যাটালিয়ন।নাইচাডংয়ের সাত থেকে আট কিলোমিটার দক্ষিণে রাখাইন রাজ্যের জেলা শহর মংডুর অবস্থান। মংডুর সেনা সদর দপ্তর থেকে নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে যুদ্ধের সবকিছু।

রাখাইন রাজ্য থেকে আমদানি পণ্য নিয়ে টেকনাফ স্থলবন্দরে আসা দেশটির কয়েকজন ব্যবসায়ী প্রথম আলোকে জানান, গতকাল দিবাগত রাত দেড়টার দিকে মংডু টাউনশিপের ৪ নম্বর সেক্টরে মিলিটারি কাউন্সিল ও আরাকান আর্মির মধ্যে ব্যাপক যুদ্ধ হয়। সেখানে গোলাগুলিতে সিরাজ উদ্দিন নামের এক রোহিঙ্গার মৃত্যু হয়েছে। তাঁর বাড়ি উত্তর মংডু শহরের লেইক ইয়া গ্রামে।

মিয়ানমারের ব্যবসায়ীরা বলেন, ৬ অক্টোবর বিকেলে মংডুতে ৪টি জাহাজে আনা হয়েছে ৬০০ সেনাসদস্য। রাতে ৩০০ জনকে ঘুমধুম সীমান্তের কাছে ঢেকুবনিয়া, কোয়ানচিমং সেনা ব্যারাকে পাঠানো হয়। বাকি ৩০০ জনকে রাখা হয় মংডুর বিজিপি সদর দপ্তরের ৫ নম্বর শাখায়। বিভাগীয় শহর আকিয়াব (সিথুয়ে) থেকে পৃথক চারটি জাহাজে মংডুতে আনা হয় ৬০০ সেনাকে। জাহাজগুলো তিন দিন ধরে সেন্ট মার্টিন দ্বীপের বিপরীতে মিয়ানমারের জলসীমায় অবস্থান করছে।

টেকনাফ ২-বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল শেখ খালিদ মোহাম্মদ ইফতেখার বলেন, সীমান্তে বিজিবি সতর্ক আছে। অনুপ্রবেশসহ সীমান্তের যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুত বিজিবি।

সূত্র: প্রথম আলো

 
 
 
   
  Print  
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
আরও খবর

 
 
 

 

Editor & Publisher : Sukriti Mondal.

E-mail: eibelanews2022@gmail.com

a concern of Eibela Ltd.

Request Mobile Site

Copyright © 2024 Eibela.Com
Developed by: coder71