সোমবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৫
সোমবার, ১৫ই বৈশাখ ১৪৩২
সর্বশেষ
 
 
মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী চীন করোনা অতিমারির মধ্যেই বাজালো যুদ্ধের দামামা !
প্রকাশ: ০৫:৫৬ pm ২৫-০৬-২০২০ হালনাগাদ: ০৫:৫৬ pm ২৫-০৬-২০২০
 
এইবেলা ডেস্ক
 
 
 
 


সমাজতন্ত্রের মুখোশে অধার্মীক চীন জন্ম দিয়েছেন সাম্রাজ্যবাদের। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী শক্তি চীনই দায়ি করোনা অতিমারির মধ্যেও যুদ্ধের দামামা বাজানোর জন্য। পাকিস্তানকে বগলদাবা করার পর এখন চীনের লক্ষ্য আরও বহুদেশে আধিপত্য বিস্তার। লাদাখে চীনের আসল স্বরূপ ফুটে উঠেছে। মানব সভ্যতার বিরোধী চীন নিজেদের স্বার্থ চরিতার্থ করতে সীমান্তে বার বার উত্তেজনার সৃষ্টি করছে। বিনা প্ররোচনায় লাদাখে ২০ জন ভারতীয় জওয়ানকে নৃশংসভাবে হত্যা করে। আসলে চীন গোটা দুনিয়ায় বিস্তার করতে চায় নিজেদের সাম্রাজ্য। তাঁদের 'ওয়ানবেল্ট ওয়ানরোড' কর্মসূচি আসলে নয়া সাম্রাজ্যবাদী পদক্ষেপ। কোভিড-১৯ অতিমারির জন্য বেশ বিপাকে চীন। এই পরিস্থিতিতে ভারত সীমান্তে উত্তেজনা সৃষ্টি করে চীন দুনিয়ার দৃষ্টি অন্য দিকে ঘোড়াতে চাইছে। ব্রিটিশদের ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির ছকে আধিপত্য বিস্তার করতে চাইছে বিভিন্ন দেশে। অন্যদিকে ভারত এখনও পন্ডিত জওহললাল নেহরুর আমলে গৃহীত পঞ্চশীল নীতিতেই অটল। তাই চীনের লালফৌজের হাতে ২০ জন ভারতীয় সেনার নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পরও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সর্বদলীয় বৈঠকে দৃঢ়তার সঙ্গে বলেন, 'ভারত সাংস্কৃতিক ভাবে একটি শান্তিকামী দেশ। ভারতের আদর্শ মন্ত্র হল - লোকা: সমাস্ত: সুখিনোভবন্তু। আমরা প্রত্যেক যুগে প্রতিবেশীদের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ উপায়ে মিলে মিশে কাজ করছি।' 

১৯৫৪ সাল থেকেই ভারতের জোট নিরপেক্ষ বিদেশনীতি পঞ্চশীলের সারমর্ম হলো, অন্য দেশের অখন্ডতাও সার্বভৌমত্বের প্রতি শ্রদ্ধা। অনাক্রমণনীতি আগলে অন্য রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করে পারস্পরিক সাম্য ও সহযোগিতা এবং শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানও কথা বলে সমস্যার সমাধান। তাই প্রতিবেশী কোনও রাষ্ট্রের ভূখন্ডে ভারত সাম্রাজ্যবাদী দৃষ্টিতে তাকায়নি। সবচেয়ে বড় প্রমাণ বাংলাদেশ। ১৯৭১ সালে পাক-বাহিনীকে পরাস্ত করেও বাংলাদেশের মাটিতে বিন্দুমাত্র দখলদারির আগ্রহ দেখাননি ইন্দিরা গান্ধি। বরং পরবর্তীকালে ছিটমহল সমস্যারও আলোচনার মাধ্যমে মিটিয়ে নিয়েছে। সীমান্তে স্থিতাবস্থা বজায় রাখাই ভারতের নীতি। কিন্তু চীন ঠিক উল্টো পথে হাঁটছে চিরকাল। তিব্বত ও হংকং তার বড় প্রমাণ। চীনের বর্বরোচিত দখলদারিতে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে প্রতিনিয়ত। লাদাখ সীমান্তে এক তরফা ভাবে দ্বিপাক্ষিক চুক্তি লঙ্ঘন করেছে চীনের লালফৌজ। ১৯৯৩ সালে উভয় দেশ চুক্তি বদ্ধ হয়েছিল প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা (এলএসি) টপকে কেউ অন্য পারে যাবে না। ১৯৯৬ সালে ঠিক হয়, সেনারা মুখোমুখি হলে আলোচনায় বসবেন। ২০০৫-এর সিদ্ধান্ত, কোনও পক্ষই গুলি চালাবে না। ২০১৩-য় ঠিক হয়,  অন্যপক্ষের টহলদার সেনাকে অনুসরণ করা হবে না। কিন্তু কোনও শর্তই মানেনি চীনের লালফৌজ। বরং সীমান্তে ইচ্ছাকৃত ভাবে উত্তেজনার সৃষ্টি করেছে।

আসলে করোনা নিয়ে আন্তর্জাতিক চাপ কমাতেই চীন বাজিয়েছে যুদ্ধের দামামা। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নিশ্চিত, চীনের উহানে পরীক্ষাগার থেকেই ছড়িয়েছে করোনা ভাইরাস। আন্তর্জাতিক তদন্তের দাবিতে সোচ্চার অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসনও। সবার দৃষ্টি ঘোড়াতেই সীমান্ত নিয়ে নতুন খেলা শুরু করেছে চীন সরকার। ভারতের বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র অনুরাগ শ্রীবাস্তবের সাফ কথা, ‘চীনের এই হামলা পূর্ব নির্ধারিত ও পরিকল্পিত। দু’তরফের সেনার মৃত্যুর জন্য দায়ী চীন। ’তাঁর এই বক্তব্যের সমর্থন মিলেছে আন্তর্জাতিক স্তরেও। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ছাড়াও ফ্রান্স, জার্মানি, জাপান, মলদ্বীপ প্রকাশ্যে চীনা আক্রমণ নিয়ে প্রশ্ন তুলে চাপ বাড়াচ্ছে বেজিংয়ের উপর। 

পূর্ব এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল বিযয়ক মার্কিন বিদেশ দফতরের অতিরিক্ত সচিব ডেভিড স্টিল ওয়েল বলেছেন, ‘হংকং ও ভারতের উপর চীনা পদক্ষেপ সমর্থন যোগ্য নয়।’ অতিরিক্ত সচিব স্টিল ওয়েল পম্পেওর বলেন, ‘আগেও সীমান্তে চীনা আগ্রাসন ধরা পড়েছে। ২০১৫ সালে চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিং পিং-এর ভারত সফরের পর সীমান্তে চীনের আগ্রাসন অতীতের তুলনায় আরও বেড়েছে। আমরা সদর্থক পরিস্থিতি দেখতে চাই।

’অথচ ভারত চিরকালই অন্যান্য প্রতিবেশীদের মতো চীনের সঙ্গেও বন্ধুত্ব চেয়ে এসেছে। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে চীনের স্থায়ী সদস্য পদের পক্ষে সওয়ালও করেছিল দিল্লি। ১৯৫০ চামদোর যুদ্ধে চীনের তিব্বত দখলের পরও ভারত পঞ্চশীল নীতিকেই আগলে ধরে। চিনা প্রধানমন্ত্রী চৌ-এন-লাই নিজেও নেহরুর পঞ্চশীল নীতির প্রশংসা করেছিলেন। সেটা ছিলো ছলনা। চীন বরাবরই সাম্রাজ্যবাদী মনোভাব পোষণ করেছে। তাই ১৯৬০ সালে নেহেরু সীমান্ত বিরোধ মেটাতে ঝৌ এন লাইয়ের সঙ্গে আলোচনা বসলেও ভারতের কূটনৈতিক দৌত্য ব্যর্থ হয়। ভারতে চীনা আক্রণের সূত্রপাত হয় ১৯৬২ সালে। ১৯৬৭ সালে সিকিমের নাথুলা এবং চোলা এলাকায় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের পর অনুপ্রবেশকারী লালফৌজকে বিতাড়িত করেছিল ভারতীয় সেনারা। ১৯৭৫ সালে অরুণাচল প্রদেশের টুলুংলা এলাকায় আসাম রাইফেলস এর টহল বাহিনীর চার জওয়ানকে খুন করেছিল চীনা সেনারা। তবু ভারত চিরকাল সীমান্তে শান্তিই চেয়েছে।
আসলে মানবতাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখানো চীন সব সময়ই ভৌগলিক ও বাণিজ্যিক প্রভাব অক্ষুণ্ণ রাখতে মরিয়া।। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় চীনের ভূমিকা সবারই জানা। মুক্তিযুদ্ধের সময় চীন পাকিস্তানকে ‘উপহার’ হিসেবে পাঠিয়েছিল ২৫৫ টি ট্যাংক, একস্কোয়াড্রনইল-২৮ বিমানও ২০০সামরিক প্রশিক্ষক। ভারতের সহযোগিতায় বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর অবশ্য ব্যবসায়িক দৃষ্টিভঙ্গিতে বন্ধু হওয়ার চেষ্টা করেছে। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির মতো ফের বণিকের ছদ্মবেশে বাংলাদেশের শাসন দন্ড দখল করতে চাইছে না তো চীন? 

ইতিমধ্যেই কিন্তু পাকিস্তানে নিজেদের আধিপত্য বিস্তারে তাঁরা অনেকটাই সফল। এখন চাইছে তাঁদের মুদ্রাই আহান চালু হলেই কেল্লাফতে। পাকিস্তান পুরোপুরি তাঁদের কব্জায় চলে আসবে। তাই বিরোধিতাও শুরু হয়েছে ইসলামাবাদে।

রোহিঙ্গা নিয়ে মিয়ান্মারের সঙ্গে চীনের সখ্যতা সবার জানা। আসলে মিয়ান্মারের সমুদ্র ঘাঁটি আর বাংলাদেশের বাজার দখল করতে চায় চীন। কোনও আত্মীয়তা বা বন্ধুত্বে বিশ্বাসী নয় কমিউনিস্ট দেশটি। চাইছে মহাজনি কারবার। ঋণের ফাঁদে আটকাতে চায় বাংলাদেশকে। দখল করতে চায় বাজার। বাংলাদেশে চীনের বিনিয়োগ ৩ হাজার ৮০০ কোটি ডলারেরও বেশি। 

সম্প্রতি, বাংলাদেশকে চীনের পক্ষ থেকে মোট ৮ হাজার ২৬৫টি পণ্যকে ৯৭ শতাংশ শুল্ক মুক্ত সুবিধা দেয়া হয়। ১ জুলাই থেকে নতুন সুবিধা কার্যকর হবে। এটা মুদ্রার দৃশ্যত একটি দিক। অন্যদিকটি ভয়ঙ্কর। নিজেদের আঞ্চলিক আধিপত্য বজায় রাখতে ঋণের বোঝায় বাঁধতে চাইছে বাংলাদেশকে। প্রতিরক্ষার ক্ষেত্রটাও নিজেদের দখলে আগেই নিয়েছে। ধর্ম চর্চার বিরোধী নাস্তিক দেশটি থেকেই আসে বাংলাদেশের ৮০ শতাংশ সমরাস্ত্র। বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বও বিপদে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কারণ চীন সমাজতান্ত্রিক মুখোশে বাড়াতে চাইছে নিজেদের সাম্রাজ্য। গণতান্ত্রিক ভারতের লক্ষ্য শুধু নিজেদের অখণ্ডতা বজায় রাখা। প্রতিবেশীর সঙ্গে বন্ধুত্বের নীতিতে বিন্দুমাত্র টোল খায়নি। বিপদে-আপদে প্রতিবেশীর পাশে দাঁড়িয়েছে চিরকাল। হংকং বা তিব্বতের মতো কোনও দখলদারি ভারতের নেই। সুশৃঙ্খল ভারতীয় সেনাবাহিনীও প্রতিবেশীদের বিপদে ঝাঁপিয়ে পড়লেও ঔপনিবেশিকতায় বিশ্বাসী নয়। কিন্তু চীনের লালফৌজ ভারতের অনাক্রমণনীতিকে দূর্বলতা মনে করে বার বার প্ররোচিত করছে। চীনেরও ইমনোভাবই সার্কভুক্ত দেশগুলির জন্য ভবিষ্যতে বিপেদর কারণ হতে পারে। দক্ষিণ এশিয়ায় অশান্তি পাকিয়ে সেই অশান্তির আগুনে নিজেদের স্বার্থসিদ্ধিতে মরিয়া চীন। তাই তাঁদের বণিকের ছদ্মবেশে ভালো মানুষির মুখোশ থেকে বাংলাদেশেরও সতর্ক থাকা জরুরি। মনে রাখা প্রয়োজন বাংলাদেশের আত্মপ্রকাশে ভারত সার্বিক সহযোগিতা করলেও সক্রিয় বিরোধিতা করেছিল চীন। এখনও তাঁদের পাকিস্তানের প্রতি বন্ধুত্ব মুক্তিযুদ্ধের চেতনার শত্রু।

জে এস/

 
 
 
   
  Print  
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
আরও খবর

 
 
 

 

Editor & Publisher : Sukriti Mondal.

E-mail: eibelanews2022@gmail.com

a concern of Eibela Ltd.

Request Mobile Site

Copyright © 2025 Eibela.Com
Developed by: coder71