মুর্তি আর ভাষ্কর্য নিয়ে দেশ দ্বিধা বিভক্ত। বিষয়টি মুসলিম ধর্মীয় সংগঠন ও রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যের বিরোধ হলেও সমগ্র দেশ এই বিতর্কে জড়িয়ে পড়েছে। এ বিষয়ে আমি কয়েকটি টিভি চ্যানেল আমার মতামত প্রচার করায় গুটিকয়েক শাস্ত্রজ্ঞানহীন ব্যক্তি আমার বক্তব্যকে ভিন্নভাবে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করছেন। যা আমার দৃষ্টিগোচর হয়েছে।
আমার বক্তব্য স্পষ্ট। এক পক্ষ বলছেন মুর্তি হারাম, ভাষ্কর্য জায়েজ। অপর পক্ষ বলছেন মুর্তি ও ভাষ্কর্য দুটোই হারাম। দু'পক্ষই স্বীকার ও প্রচার করছেন, মুর্তিপুজা তাদের ধর্মে নিষিদ্ধ। মুর্তি তৈরীও নিষিদ্ধ। এক্ষেত্রে উভয়ের টার্গেটের শিকার হিন্দুদের পুজার মুর্তি। রাজনৈতিক মতাদর্শের কারনে কিছু হিন্দুও এই বিতর্কে জড়িয়ে পড়েছে। হিন্দুদের সচেতন করতে আমি লাইভে বিষয়টি ব্যখ্যা করে বলেছি, আমরা শাঁখের করাতের মত উভয় দিক দিয়ে বিপদের সম্মুখীন। এই বিষয়ে মন্তব্যের কারনে যে কোন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটতে পারে। সেকারনে এই বিতর্কে হিন্দুদের পক্ষে বিপক্ষে না জড়ানোই ভালো।
কারন মুর্তি বলুন আর ভাষ্কর্য বলুন দুটোর অর্থ একই।
প্রথমতঃ সংসদ বাঙ্গালা অভিধানে মুর্তির অর্থ করেছে নিম্ন রুপঃ দেহ, শরীর, আকৃতি, চেহারা, প্রতিমা, সাকার, স্পষ্ট ও প্রত্যক্ষ।
ভাস্কর অর্থঃ প্রস্তর প্রভৃতি দ্বারা মুর্তি নির্মানকারী। ভাস্কর্যঃ উক্তভাবে নির্মান শিল্প। ঋগ্বেদে মুর্তি নির্মাণ বিষয়ে বলা হচ্ছে " অবিদ্যমান হতে বিদ্যমান হওয়া"
তাহলে মুর্তি ও ভাষ্কর্য এর আভিধানিক কোন পার্থক্য নাই।
পূজা কি?
অভিধান বলছে, পূজা অর্থঃ আরাধনা, অর্চনা, উপাসনা, ভক্তি শ্রদ্ধা, শ্রদ্ধা জ্ঞাপন, সংবর্ধনা, প্রশংসা।
মহাভারতে সূতের আগমনে অতিথির যথোচিত পূজা করে বসবার জন্য আসন দিয়েছেন। এই পুজা অর্থ ভক্তিপূর্বক শ্রদ্ধা জ্ঞাপন। মনুসংহিতার ৩য় অধ্যায়ের ৫৫, ৫৬, ৫৮, ৫৯ নং শ্লোকে পরিবারের নারীদের পুজা করতে বলছেন। এই পুজা অর্থ সম্মান প্রদর্শন। নারায়ন পর্বতের শিলা ঘরে এনে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করলে তা পুজা। তুলসী বৃক্ষে সন্ধায় বাতি দেওয়া পুজা। সাপের প্রতীকে শ্রদ্ধা জ্ঞপন পুজা।
তাহলে অভিধান ও শাস্ত্রগ্রন্থ অনুযায়ী শুধু পুজার উদ্দেশ্যে নির্মিত দেব মুর্তিই শুধু মুর্তি না; ভাস্কর্যও মুর্তি। ভাস্কর্যকে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করলেও সেটা পুজা। শ্রদ্ধা পুর্বক সংবর্ধনা, সম্মান জ্ঞাপন, প্রশংসাও পুজা।
লোকনাথ বাবা, অনুকুল ঠাকুর, হরি ঠাকুর, অভয়াচরন ভক্তি বেদান্ত স্বামীর ছবি ও মুর্তিতে আগে পুজা হতো না; এখন পূজা হচ্ছে। যে কোন মহাপুরুষের উদ্দেশ্যে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করা হলে সেটা পুজা। মুসলিমরা অতীতে শুধু পুজার মুর্তি ভাঙ্গে নাই, ভাস্কর্যও ভেঙ্গেছে। ২০০০ সালে আফগানিস্তানের যাদুঘরে রক্ষিত মুর্তি ও বামিয়ানের বিখ্যাত বৌদ্ধ মুর্তি ডিনামাইট দিয়ে ধ্বংস করেছে। আইএসরা ইরাক ও সিরিয়ার যাদুঘরে রক্ষিত মুর্তি ও ভাষ্কর্য ধ্বংস করেছে। সেজন্য আমি সরকারকে আহ্বান জানিয়েছি উত্তেজক পরিস্থিতি সৃষ্টি না করে দুপক্ষের এক টেবিলে বসিয়ে বিষয়টি সমাধান করার জন্য; না হলে এই তর্কাতর্কিতে হিন্দুদের জনজীবনে অন্ধকার নেমে আসবে।
নি এম/
Editor & Publisher : Sukriti Mondal.
E-mail: eibelanews2022@gmail.com