পূজোর ঢাকে পড়েছে কাঠি। গতকাল মহালয়ায় চণ্ডীপাঠের মাধ্যমে আহ্বান করা হয়েছে মা দুর্গার। আকাশে সাদা মেঘ, দিগন্ত জুড়ে কাশফুলের শুভ্রতাও জানান দিচ্ছে শারদোৎসবের। দুর্গামূর্তিতেও রঙের প্রলেপ দেয়া শেষ। তুলির নিপুণ আঁচড়ে নির্ঘুম রাত কাটছে মৃতশিল্পীদের। এ যেন দীর্ঘ সময়ের শেষ পদছায়া। খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে ফুটিয়ে তোলা হচ্ছে মায়ের অবয়ব। মাত্র চারদিন পরেই শুরু দুর্গোৎসব। মন্ডপে মন্ডপে পূজিত হবে এসব প্রতিমা।
কিন্তু যাদের তুলির আঁচড়ে জীবন্ত হয়ে উঠছে এসব প্রতিমা, সেসব মৃৎশিল্পীরা আছেন কেমন? করোনা মহামারী শুরুর পর থেকে কেমন কাটছে তাদের জীবন। গতকাল নগরীর সদরঘাট কালীবাড়ি, বোস গলি, নিত্যানন্দ ধাম, চকবাজার, রাধাশ্যাম মন্দির, হাজারি লেন, গোয়ালপাড়া, পাথরঘাটা এলাকা ঘুরে জানা গেছে, শেষ মুহূর্তে প্রতিমা সাজানোর কাজে ব্যস্ত মৃৎ শিল্পীরা। সারিসারিভাবে প্রতিমা দাঁড় করানো। দেবী দুর্গার সঙ্গে রয়েছে কার্তিক, গণেশ, লক্ষ্মী ও স্বরসতী। তুলির আঁচড়ে প্রতিমাকে প্রাণবন্ত করার চেষ্টায় সদা ব্যস্ত মৃৎশিল্পীরা। কথা বলার ফুরসত নেই তাদের।
চকবাজারের রাধা-মাধব আখড়ায় নির্দিষ্ট সময়ে মন্ডপে প্রতিমা বুঝিয়ে দিতে কাজ করে যাচ্ছেন মৃৎশিল্পী তাপস পাল। তিনি বলেন, গতবছর করোনার কারণে তেমন কোন অর্ডার ছিল না। দুর্গাপূজায় প্রতিমা তৈরির কিছু কাজ পেলেও আয়োজকদের বাজেট কম থাকায় প্রকৃত মূল্য পাওয়া যায়নি। এ বছরও প্রায় একই অবস্থা। অথচ কাঁচামালের দাম প্রায় কয়েকগুণ বেড়ে গেছে। মাটি, পাট, সুতলি, খড়সহ সব কাঁচামালের দাম বাড়তি। বছরজুড়ে আমরা মৃৎশিল্পীরা দুর্গাপূজায় লাভের আশায় বসে থাকি। কারখানায় ৭/৮ জন কর্মচারি কাজ করেন। কিন্তু গত দুইবছর ধরে প্রতিমা বিক্রি করে আশানুরূপ দাম পাওয়া যাচ্ছে না। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আগামীতে আবারও ভাল দাম পাওয়া যাবে এ আশা নিয়ে বেঁচে আছি।
তিনি আরও বলেন, নাড়ির টানে এ পেশায় এসেছি। বাবাও ছিলেন মৃৎশিল্পী। এখন অন্যকোনো পেশায় যাওয়ার উপায়ও নেই। এবার মোট ২৩টি পূজা মন্ডপে প্রতিমা তৈরির অর্ডার পেয়েছি। করোনা মহামারী শুরুর আগে এসব প্রতিমার দাম সর্বনিম্ম ৪০ হাজার থেকে সর্বোচ্চ লক্ষাধিক টাকা পর্যন্ত দাম পাওয়া যেত। গতবছর থেকে দাম প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে। কাঁচামালের দাম, শ্রমিকের বেতন, কারখানার ভাড়ার টাকা বাদ দিলে তেমন কিছু আর থাকবে না।
নগরীতে প্রতিমা তৈরির কাজে নিয়োজিত মৃৎশিল্পীদের বেশিরভাগের বাড়ি শরীয়তপুরে। এছাড়া চট্টগ্রামসহ কয়েকটি অঞ্চলের দু’একজন মৃৎশিল্পে কাজ করছেন নগরীতে। গোয়ালপাড়ায় প্রতিমার শরীরে অলংকার সাজানোয় ব্যস্ত ছিলেন শ্যামল পাল। প্রায় একই সুর তাঁর কণ্ঠেও। তিনি বলেন, প্রতিমার চাহিদা বিন্দুমাত্র কমেনি। প্রতিবছর যারা প্রতিমা নেয়, তারাও এবারও প্রতিমা নিচ্ছেন। কিন্তু পূজা কমিটিগুলোর আয় কমে যাওয়ায় প্রতিমার খরচ কমিয়ে দিয়েছে।
কম বাজেটে জেরে ছোট প্রতিমার অর্ডার বেশি দেয়ায় এবছরও লাভের মুখ দেখতে পাচ্ছেন না তারা। সাধারণত ছোট প্রতিমা বানানো খাটুনি বেশি। আবার বিক্রি হয় কম দামে। এদিকে রঙ, কাঠ ও মাটিসহ সব উপকরণের দাম বাড়তি। প্রতিমার বাজার ভাল না থাকায় এবারও তেমন লাভের আশা দেখছেন না তিনি। তারপরও পৈত্রিক সূত্রে আসা এ শিল্পের নিজেকে জড়িয়ে রাখতে চান শেষ পর্যন্ত।
নি এম/
Editor & Publisher : Sukriti Mondal.
E-mail: eibelanews2022@gmail.com