করোনাভাইরাসের সংক্রমণ মোকাবিলায় দেশে দেশে জনসাধারণের চলাচলের ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করে সবাইকে ঘরে থাকতে বলছে WHO কর্তৃপক্ষ। সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে না আসায় এই লকডাউন বা অবরুদ্ধ অবস্থা দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে। এ নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে এক অনিশ্চয়তা। এই প্রেক্ষাপটে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সতর্ক করে বলেছে, সময়ের আগে বা আগেভাগেই লকডাউন তুলে নিলে পরিস্থিতি ভয়াবহ হয়ে উঠতে পারে। করোনা সংক্রমণ ভয়ংকরভাবে ফিরে আসতে পারে।
সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় গত শুক্রবার নিয়মিত সংবাদ ব্রিফিংয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক তেদরোস আধানোম গেব্রেয়াসুস এই সতর্কবার্তা উচ্চারণ করেন। এ সময় তিনি বলেন, ‘আমি জানি, কিছু দেশ এরই মধ্যে ঘরে থাকার বিষয়ে যে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে, তা তুলে নেওয়ার পরিকল্পনা করছে। কিন্তু ঠিকভাবে ব্যবস্থাপনা করা না গেলে তা হিতে বিপরীত হতে পারে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়া দেশগুলোর সঙ্গে এই বিধিনিষেধ ধীরে ধীরে ও নিরাপদে শিথিল করার কৌশল নিয়ে কাজ করছে।’
চীনের উহানে গত ৩১ ডিসেম্বর অজ্ঞাত কারণে মানুষের নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার বিষয়টি শনাক্ত করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। নতুন ভাইরাসটির জিনোম সিকোয়েন্স করে চীনের বিজ্ঞানীরা ৯ জানুয়ারি জানান, এটি সার্স–করোনাভাইরাসের গোত্রের। এর দুদিনের মাথায় ১১ জানুয়ারি করোনার সংক্রমণে প্রথম মৃত্যু দেখে বিশ্ব। এ ঘটনার ৯০ দিনের মাথায় বিশ্বজুড়ে মৃতের সংখ্যা এক লাখ ছাড়ায়।
শুক্রবারের সংবাদ ব্রিফিংয়ের শুরুতেই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক বলেন, ‘ইতালি, স্পেন, জার্মানি, ফ্রান্সের মতো ইউরোপের যে দেশগুলোয় করোনার সংক্রমণ ও মৃত্যু সবচেয়ে বেশি, সেসব দেশে নতুন সংক্রমণ কমে আসছে বলে আমরা লক্ষ করেছি। কিন্তু কিছু দেশে সংক্রমণ বাড়ছে, যা অশনিসংকেত।’ তিনি বলেন, আফ্রিকার দেশগুলোর প্রত্যন্ত এলাকায় সংক্রমণ বাড়ছে। ১৬টির বেশি দেশে ক্লাস্টার ও সামাজিকভাবে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার তথ্য পাওয়া যাচ্ছে।
তেদরোস আধানোম গেব্রেয়াসুস বলেন, এই মহামারির ইতি ঘটাতে প্রত্যেক ব্যক্তিরই ভূমিকা রাখতে হবে। তিনি বলেন, ‘আমরা বিশেষত স্বাস্থ্যকর্মীদের আক্রান্ত হওয়ার বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন। কিছু দেশে ১০ শতাংশের বেশি স্বাস্থ্যকর্মী সংক্রমিত হয়েছেন। কিন্তু স্বাস্থ্যকর্মীরা যখন ঝুঁকিতে থাকেন, আমরা সবাই তখন ঝুঁকিতে।’ চীন, ইতালি, সিঙ্গাপুর, স্পেন ও যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রাপ্ত তথ্য–উপাত্তের বরাত দিয়ে তিনি বলেন, কিছু ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যকর্মীরা হাসপাতালের বাইরে তাঁদের বাড়িতে কিংবা সমাজের অন্য কোথাও থেকে সংক্রমিত হচ্ছেন। স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রগুলোর সাধারণ সমস্যা হলো দেরিতে রোগী শনাক্ত হওয়া কিংবা প্রশিক্ষণ বা অভিজ্ঞতার ঘাটতি। অনেক স্বাস্থ্যকর্মী সংক্রমিত হয়েছেন বিশ্রামহীন টানা অধিকসংখ্যক রোগীকে সেবা দিয়ে যাওয়ায়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক আরও বলেন, তথ্য–উপাত্তে আরও জানা গেছে, স্বাস্থ্যকর্মীদের যদি যথাযথ ও পর্যাপ্ত সুরক্ষামূলক ব্যবস্থা সরবরাহ করা যায়, তাহলে তাঁদের মধ্যে সংক্রমণ প্রতিরোধ করা সম্ভব।
নি এম/
Editor & Publisher : Sukriti Mondal.
E-mail: eibelanews2022@gmail.com