একদা ভারতের মিত্ররাষ্ট্র বলে পরিচিত দেশ নেপাল সীমান্ত নিয়ে বিবাদ শুরু করেছিল কয়েকদিন আগে। বিভিন্ন ইস্যুতে ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক তলানিতে নিয়ে গেছেন নেপালের প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলি। তবে ভারতের কিছু অঞ্চল অন্যায়ভাবে নিজেদের বলে দাবি করে সন্তুষ্ট নয় তারা, হাত বাড়াচ্ছে এবার ভগবান রামচন্দ্রের দিকেও। একই সঙ্গে বললেন, রাম আসলে নেপালি!
সোমবার (১৩ জুলাই) প্রধানমন্ত্রীর নিবাসে অনুষ্ঠিত একটি অনুষ্ঠানে ওলি বলেন, আসল অযোধ্যা তো নেপালে অবস্থিত ছিল, ভারতে নয়৷ রামও নেপালি ছিলেন৷ নেপালের প্রধানমন্ত্রীর এই হেন দাবি তৈরি হয়েছে বিতর্ক৷
সংবাদ সংস্থা ANI-কে এক সাক্ষাত্কারে নেপালের প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ভারতবর্ষে রামের জন্মভুমি হিসেবে যে উত্তরপ্রদেশের অযোধ্যাকে বলা হয় সেটি ঠিক নয়, নেপালের বীরগঞ্জের থোরিতে রামচন্দ্র জন্মগ্রহণ করেন। সেটিই প্রকৃত অযোধ্যা।’
নেপালি প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ভারত সাংস্কৃতিক সীমালঙ্ঘনের জন্য নকল অযোধ্যার নির্মাণ করেছে। আসল অযোধ্যা আমাদের নেপালে আছে।'
অলির কথা অনুযায়ী, 'ভগবান রামচন্দ্রের জন্মস্থান নিয়ে 'সত্যের বিকৃতি' ঘটানো হয়েছে। এত দিন ধরে মিথ্যে দাবি করা হয়ে আসছে, রামের জন্মস্থান ভারতের অযোধ্যায়।
নেপালকে সাংস্কৃতিক দিক থেকে অত্যাচার করা হয়েছে বলে অভিযোগ তুলে অলি বলেন, এটা বলা হয়, আমরা ভারতীয় রাজকুমার রামচন্দ্রের হাতে আমাদের সীতাকে তুলে দিয়েছিলাম। এটা ঐতিহাসিক তথ্যের বিকৃতি।
অলি প্রশ্ন তোলেন, ভারতের অযোধ্যাই যদি সত্যি হত, তা হলে সেখানকার রাজকুমার বিয়ে করার জন্য নেপালে এলেন কেন?
ওলি এদিন স্পষ্টভাবে বলেন, নেপালেই অবস্থিত বাল্মিকী আশ্রম আর নেপালেই রিদিতে দশরথ পুত্র সন্তান লাভের জন্য যজ্ঞ করেছিলেন।
ওলি বলেন, অযোধ্যায় বসে রাম জনকপুরের কথা জানতে পারলেন কী করে। তখন তো মোবাইল বা টেলিফোন কিছুই ছিল না, তাহলে খবর পেলেন কী করে তিনি, এই প্রশ্নও তুলেছেন নেপালের প্রধানমন্ত্রী।
ভারতের সঙ্গে নেপালের এখন সম্পর্ক তলানিতে৷ সম্প্রতি ভারতের একাধিক এলাকাকে অন্তর্ভূক্ত করে নতুন মানচিত্র তৈরির সংশোধনী বিল পাশ হয়েছে নেপালের পার্লামেন্টে৷ কোনও রকম বিরোধিতা ছাড়াই সর্বসম্মত ভাবে ওই সংবিধান সংশোধনী বিল পাশ হয়েছে৷ নেপালের সংশোধিত রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক ম্যাপে ভারতের একাধিক এলাকাকে নিজেদের সীমান্তের মধ্যে ঢুকিয়ে দিয়েছে নেপাল৷ নয়া ম্যাপে ভারতের লিপুলেখ, কালাপানি ও লিম্পিয়াধুরা নিজেদের সীমান্তের মধ্যে রেখেছে নেপাল৷ এই তিন এলাকাই উত্তরাখণ্ডে পড়ে৷
এতদিন ভারতের সাথে বন্ধুত্ব ত্যাগ করে চীনের সাথে হাত মেলানোর জন্য ভারতে তো বটেই, নিজের দেশেও জনরোষের শিকার হচ্ছিলেন নেপালের প্রধানমন্ত্রী। দেশের শাসক দলের নেতারাই তার পদত্যাগের দাবিও তুলেছিলেন৷
তারপরেও ভারত বিরোধিতা থামাননি উনি। গত সপ্তাহে দুরদর্শন ছাড়া ভারতের সব বেসরকারি চ্যানেলের সম্প্রচার নিজের দেশে বন্ধ করেছিলেন তিনি। এরই মধ্যে অহেতুক রামচন্দ্র কে নিয়ে টানাটানি করে নতুন বিতর্ক শুরু করে দিলেন তিনি। এর ফলে নেপালবাসীও বিভ্রান্ত হয়ে গিয়েছেন।
গত ৮ই মে, ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং লিপুলেখ থেকে উত্তরখান্ডের ধারচুলাকে সংযুক্ত করে ৮০ কিলোমিটার রাস্তা উদ্বোধন করেন। এতে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানায় নেপাল। দেশটির দাবি, ওই সড়ক তাদের ভূখন্ডে অবৈধভাবে নির্মাণ করছে ভারত। এরপরই ওই এলাকাকে অন্তর্ভুক্ত করে নতুন ম্যাপ প্রকাশ করে কাঠমান্ডু। এতে দুই প্রতিবেশীর দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে বিরোধ তুঙ্গে ওঠে। এই ম্যাপের বিরুদ্ধে লিখিতভাবে কূটনৈতিক প্রতিবাদও জানায় ভারত।
পরিস্থিতি আরো নাজুক হয় যখন ভারতের বিরুদ্ধে তার দল নেপাল কমিউনিস্ট পার্টির (এনসিপি) সদস্যদের ওপর প্রভাব বিস্তারের অভিযোগ তোলেন প্রধানমন্ত্রী অলি। বিভিন্ন বিষয়ে ব্যর্থতার অভিযোগ তুলে অলির পদত্যাগের দাবি তুলেছে তার দলেরই সদস্যরা।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী প্রচন্ডসহ নেপালের বহু বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদই অবশ্য ওলির এই ভারত-বিরোধী মন্তব্যের সমালোচনা করেছেন।
বিশ্ব হিন্দু পরিষদ সহ সারা বিশ্বের হিন্দুরা কমিউনিস্ট নেতা ওলির বক্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ ও সমালোচনা করেছে।সচেতন মহল সহ সকলেই ধারণা করছে ওলির এই বক্তব্যের পিছনে বড় কোনো ষড়যন্ত্র ও শক্তি জড়িত আছে।
নি এম/
Editor & Publisher : Sukriti Mondal.
E-mail: eibelanews2022@gmail.com