eibela24.com
শুক্রবার, ২৯, মার্চ, ২০২৪
 

 
একশ বছরে একবার করে আসে এমন জীবাণু, মারা যায় কোটি মানুষ
আপডেট: ১০:১২ pm ১৬-০৩-২০২০
 
 


প্রতি শতকে একবার করে আসে এমন ভাইরাস, মারা যায় কোটি মানুষ। প্রতি শতকে একবার করে আসে এমন মারাত্মক ভাইরাস; মারা যায় কোটি মানুষ। এর আগে ১৭২০, ১৮২০, ১৯২০ তেও হয়ে গেছে এই ধরনের মহামারী। ২০২০ ও তার ব্যতিক্রম হল না। দেখুন কি ভাবে প্রতি শতকে মানুষের বিপদ নিয়ে এসেছে; এক নতুন বিপদ বা মহামারী।

১৭২০ সালের প্লেগ; ২০ কোটি মানুষের মৃত্যু

পৃথিবীর ইতিহাস একক কারণে এত মৃত্যু দেখেনি!! ইউরোপ হারিয়েছিল; তার তখনকার জনসংখ্যার প্রায় অর্ধাংশ। জীবন হরণ করা এ মৃত্যুর নাম; ‘দ্য ব্ল্যাক ডেথ’ বা কালো মৃত্যু। রোগের নাম প্লেগ। করোনা ভাইরাসের কারণে মানুষে মানুষে ভালোবাসা কমে যাচ্ছে; তা প্লেগের কারণেও হয়েছিল।

ইতিহাস বলছে, ইউরোপের যে সমাজ কাঠামো; তা ভেঙে দিয়েছিল প্লেগ। এ রোগ ছড়িয়ে পড়ার পর নাগরিকরা; একে-অন্যকে এড়িয়ে চলতে শুরু করে। পাশের বাড়ির মানুষের দিকে চোখ তুলে তাকায় না; তারা পরস্পরকে পরিত্যাগ করেছে। এ দুর্যোগ পুরুষ ও নারীর মন যেভাবে সন্ত্রস্ত করেছে। ভাই-ভাইকে, ভাই-বোনকে; বোন-ভাইকে, এমনকি স্বামী/স্ত্রী তার প্লেগ আক্রান্ত স্ত্রীকে/স্বামীকে পরিত্যাগ করেছে। সবচেয়ে অবিশ্বাস্য হচ্ছে; বাবা-মাও একটি পর্যায়ের পর আক্রান্ত সন্তানের ওপর থেকে চোখ সরিয়ে নিতে বাধ্য হন। এ বর্ণনা লেখক দার্শনিক বোক্কাচ্চিওর।

মধ্যযুগীয় ইতিহাস গবেষক ফিলিপ ডেইলিভার তার এক নিবন্ধে লিখেছেন; চার বছর মেয়াদি প্লেগ মড়কে ইউরোপের ৪৫-৫০ ভাগ জনসংখ্যা বিলীন হয়ে যায়; যা প্রায় ২০ কোটি। তবে ভৌগোলিক অবস্থান বিবেচনায়; এ হিসাবের তারতম্য দেখা যায়। যেমন ইতালি, দক্ষিণ ফ্রান্স ও স্পেনে ৭৫-৮০ ভাগ মানুষের মৃত্যু হয়; কিন্তু জার্মানি ও ইংল্যান্ডে জনসংখ্যার ২০ ভাগ প্লেগের বলি হয়।

১৮২০ সালের কলেরা; লাখ লাখ মানুষের প্রাণহানি

চোখ বন্ধ করে একবার কলেরা রোগের কথা ভাবুন। আপনার কল্পনায় নিশ্চয়ই লাখ লাখ মানুষের আর্তনাদ; অপরিচ্ছন্ন রাস্তাঘাট, শিশুদের চিৎকারের দৃশ্য ভেসে আসবে। ১৮০০ সাল থেকে সারাবিশ্বে কলেরা মহামারি শুরু হয়েছে। এখন পর্যন্ত কয়েক লাখ মানুষ এ রোগে আক্রান্ত হয়েছেন; এবং প্রতিবছর কয়েক হাজার মানুষ কলেরায় প্রাণ হারিয়েছেন। তবে ১৮২০ সালে ভারত ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় কলেরায় আক্রান্ত এলাকার; দৃশ্য ছিল একেবারেই ভিন্ন।

১৮২০ সালে কলেরায় আক্রান্ত; পূর্ব এশিয়ার দৃশ্য কেমন ছিল? প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন অনেক ইতিহাসবিদ। তাদের মতে, সেই সময়ে অল্পদিনের ব্যবধানে হাজার হাজার আক্রান্ত ব্যক্তি মারা যান; এবং প্রতিদিন আক্রান্তের সংখ্যা যে হারে বেড়েছে; তা রীতিমতো উদ্বেগজনক ছিল। হাসপাতালও ছিল একেবারে কম। যা ছিল ভরে যায় অল্প সময়েই; রোগী রাখার ঠাঁই নেই কোথাও। ব্যাপক উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা এবং সর্বত্র এক ভীতিকর পরিস্থিতি।

বিভিন্ন পরিসংখ্যান বলছে; কলেরা এতটাই মহামারি ছিল যে; চীন, রাশিয়া ও ভারতে কলেরায় আক্রান্ত হয়ে ৪ কোটি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। বিশ শতকেও কলেরা সবচেয়ে বড় আঘাত হানে। এতে দুই দশকে দেশটির প্রায় ৮ লাখ মানুষ প্রাণ হারান। ২০১৭ সালে ইয়েমেনে এক সপ্তাহে কলেরায়; অন্তত ১১৫ জনের মৃত্যু হয়। কলেরার কারণে দেশটির রাজধানী সানায়; জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছিল।

১৯২০ সালের স্প্যানিস ফ্লু; মারা যায় ৫ কোটি মানুষ

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ক্ষত না শুকাতেই; পৃথিবী জুড়ে শুরু হয়েছিল নতুন আরেক যুদ্ধ। সারা পৃথিবীকে গ্রাস করতে চাইল; এক মরণব্যাধি, নাম ‘স্প্যানিস ফ্লু’। ‘স্প্যানিস ফ্লু’ নামের সেই মহামারীতে; পরের দুই বছরে সারা পৃথিবীতে মানুষ মারা গেলেন চার কোটির বেশি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা যদিও বলছে; সংখ্যাটি আসলে পাঁচ কোটি; কারণ ভারতবর্ষে যে এক কোটি মারা গিয়েছিলেন সেটি রেকর্ডে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। কোনো কোনো গবেষকের মতে; মৃতের সংখ্যাটি প্রকৃতপক্ষে প্রায় ১০ কোটি।

নতুন ধরনের সেই ইনফ্লুয়েঞ্জা প্রথম দেখা গিয়েছিল; ১৯১৮ সালের ৪ মার্চ; কানসাসের আমেরিকান সেনাসদস্যদের মধ্যে। ততদিনে যুদ্ধক্ষেত্র থেকে সৈন্যরা ফেরার জন্য; প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন। হেমন্ত কাল বা আগস্ট মাস আসতেই; ঝড়ের গতিতে ছড়াতে শুরু করলো সেই জ্বর। বয়স নির্বিচারে আক্রান্ত হলেও; বেশি প্রকোপ যেন দেখা গেল ২০-৪০ বছরের মানুষের মধ্যে। উত্তর আমেরিকা ও ইউরোপের দেশগুলোতে ব্যাপকভাবে আক্রমণ হলেও; সারা পৃথিবীর কোনো দেশই মুক্তি পায়নি এ জ্বরের ছোবল থেকে। মৃতের সংখ্যা এত বিশাল ছিল যে; ট্রলিতে লাশ বোঝাই করে শহর থেকে সরাতে হয়েছে। বলে রাখা যেতে পারে যে; স্প্যানিস ফ্লু দ্বিতীয় দফা আসে ১৯১৯ সালের বসন্তে। কোনো কোনো জায়গায় তৃতীয়বারের ধাক্কাও এসেছিল; আর সেটার সময় ছিল ১৯২০ সালে।

২০২০ করোনা ভাইরাস বৈশ্বিক মহামারি

২০১৯ সালের শেষের দিকে; চীনের উহান নগরীর হুয়ানান সামুদ্রিক খাদ্যের পাইকারি বাজারের দোকানদারদের মধ্যে; প্রথম ভাইরাসটির সংক্রমণ ঘটে বলে ধারণা করা হয়। বাজারটিতে সামুদ্রিক খাদ্যদ্রব্যের পাশাপাশি; জীবন্ত বাদুড়, সাপ ও অন্যান্য বন্যপ্রাণী ও তাদের সদ্য জবাইকৃত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বিক্রি হত।

প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হয় যে; হয়ত কোনও প্রাণীদেহ হতে করোনা ভাইরাসটি বিবর্তিত হয়ে; আরেকটি মধ্যবর্তী পোষক প্রাণীর মাধ্যমে মানবদেহে সংক্রমিত হয়েছে। চীনা বিজ্ঞানীরা ২০২০ সালের ৭ই জানুয়ারি তারিখে; এটিকে একটি নতুন ধরনের করোনা ভাইরাস হিসেবে ঘোষণা দেন!! জানুয়ারি মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে; মহামারীর আকার নেয় এই ভাইরাস এবং পৃথিবীর বেশিরভাগ দেশে ছড়িয়ে পড়ে !!

আক্রান্তের সংখ্যা ও মৃতের সংখ্যা; কয়েক হাজার ছাড়িয়ে গিয়েছে এখনো পর্যন্ত! করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পরেছে; বিশ্বের অনেক দেশেই। চরম আকার ধারণ করেছে; সমগ্র ইউরোপে। তবে ঠিক ১০০ বছরের মাথায়; এক এক মহামারী পৃথিবীতে মানুষের মধ্যে বিপদ ডেকে এনেছে; এটা কিন্তু জানা সত্য।

নি এম/