এইবেলা ডেস্ক: আবৃত্তিশিল্পী রবিশঙ্কর মৈত্রী প্রাণের ভয়ে বছর দেড়েক আগেই দেশ ছেড়েছেন। বর্তমানে তিনি ফ্রান্সে আশ্রিত আছেন। এদিকে আবারও তার নামে দেশে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হওয়ায় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আকুতি জানিয়ে খোলা চিঠি লিখেছেন। খোলা চিঠিটি এইবেলার পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে খোলা চিঠি
অামি এই যুগের নতুন উপেন। দুর্ভাগ্য, এখন আর কোনো রবীন্দ্রনাথ নেই-যিনি আমাকে নিয়ে দুই বিঘার মতো আরেকটি কবিতা লিখবেন।
১২ই এপ্রিল ২০১৬ তারিখে আমার নামে গ্রেফতারি পরোয়ানা বেরিয়েছে। আমাকে আর দেশে ফিরতে দেওয়া হবে না। ফিরলেই জেল জুলুম, এমনকি যখন তখন হত্যা করা হতে পারে বলে হুমকিও আসছে।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী,
আমি ব্যবসায়ী নই। আমার কাজ সংস্কৃতির মাধ্যমে মানুষের জাগরণ। বিগত সাতাশ বছর ধরে সেই কাজই করে আসছিলাম। একসময় মনে হয়েছিল- একটি স্যাটেলাইট টেলিভিশনের মাধ্যমে সংস্কৃতি জাগরণের কাজ দ্রুততর হতে পারে। তাই, স্বপ্ন দেখেছিলাম- গানবাংলা নামে একটি টেলিভিশন চ্যানেল করব। তাই, গানবাংলা টেলিভিশনের মূল উদ্যোক্তা পরিচালক আমি রবিশঙ্কর মৈত্রী। ২০১১ সালের ২২শে ফেব্রুয়ারি শিল্পী চঞ্চল খানকে প্রস্তাব দিয়েছিলাম, আসুন আমরা সংস্কৃতিবান্ধব একটি মিউজিক চ্যানেল করি। বাংলা গানকে গানবাংলায় রূপান্তর করে নাম দিই গানবাংলা টেলিভিশন। ২০১১ সালের ২৪শে অক্টোবর আমরা তথ্য মন্ত্রণালয় থেকে গানবাংলা টেলিভিশনের লাইসেন্স পাই। পরে গানবাংলার চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ আহমেদ ফারুক চ্যানেলে অর্থলগ্নী করতে পারবেন না বলে জানিয়ে দেন। চঞ্চল খান এমডি এবং চেয়ারম্যান, বখতিয়ার সিকদার এবং আমি পারিচালক হিসেবে থেকে যাই।
পান্থপথে শেল সেন্টারে গানবাংলার সব কাজ চালিয়ে যাই। ২০১২ সালের ২৫শে জুন বিটিআরসি থেকে আমরা তরঙ্গ বরাদ্দ পাই। আমরা নতুন ইনভেস্টর খুঁজতে থাকি। ২০১২ সালের ১লা জুলাই কৌশিক হোসেন তাপস আর ফারজানা আরমান মুন্নীর সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হই। আশি লাখ টাকা গানবাংলার অ্যাকাউন্টে তাঁরা শেয়ার বরাদ্দের জন্য পে অর্ডার হস্তান্তর করেন। সব কাজ চলতে থাকে। সৈয়দ আহমেদ ফারুক, এম আমানুল্লাহ খান (চঞ্চল খান), বখতিয়ার সিকদার এবং আমার নামে ২০১৪ সালের ৭ই এপ্রিল কৌশিক হোসেন তাপস ভয়াবহ মিথ্যা মামলা দায়ের করে। আমরা নাকি তাকে ওয়েস্টিন হোটেলে মেরেছি এবং তার কাছ থেকে আশি লাখ টাকার পে অর্ডার নিয়ে ব্যাংকে জমা দিইনি। কৌশিক হোসেন তাপস ২০১২ সালের ১২ ডিসেম্বর ভুয়া রেজুলেশন তৈরি করে আরজেএসসিতে জমা দিয়ে গানবাংলার সবকিছুই নিজের নামে করে নেয় এবং তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুর কাছ থেকে সকল বৈধতাও আদায় করে নেয়। কৌশিক হোসেন তাপসের বাবা দেলোয়ার হোসেন রাজাকে আমাকে আমি হাতে পায়ে ধরে বলেছিলাম– আপনারা ক্ষমতাবান, আপনারা যা খুশি করতে পারেন। আমার গানবাংলার দরকার নেই। আমাকে বাঁচতে দিন। আমাকে দেশে থাকতে দিন। কিন্তু তাঁর এতোটুকু দয়াও হয় না। বিপরীতে নানান ধরনের সন্ত্রাসী মৌলবাদী আমার বিরুদ্ধে লেলিয়ে দেয়া হযেছে।
আমি ১৮ই এপ্রিল ২০১৪, ২৩শে এপ্রিল ২০১৪ এবং ১২ই সেপ্টেম্বর দেশ ছেড়ে পালিয়ে গিয়েও আবার সবকিছু সমঝোতার মাধ্যমে সমাধান হবার আশায় ফিরে গেছি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কোনো সমাধান হয়নি। ২৬শে অক্টোবর ২০১৪ তারিখে আমি সপরিবারে দেশ ত্যাগ করেছি। আমরা দেড় বছর হল ফ্রান্সে আশ্রয় নিয়েছি। আজ একটু আগে শিল্পী চঞ্চল খান জানালেন– ‘রবি, দেশে ফেরার পথ তোমার জন্য বন্ধ হয়ে গেছে। কৌশিক হোসেন তাপসদের আবেদনের প্রেক্ষিতে ঢাকা মহানগর মুখ্য আদালত থেকে শুধু তোমার নামেই গ্রেফতারি পরোয়ানা বেরিয়েছে।’
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা,
দেশের জন্য আমি তেমন কী আর করেছি? আমি শুধু বাংলাভাষার শুদ্ধ প্রচারকর্মী হিসেবে সাতাশ বছর কাজ করেছি। আমি একজন লেখক এবং আবৃত্তিকার হিসেবেই নিবেদিত ছিলাম। রাজনীতির সঙ্গে আমি ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিলাম না, কেবল আপনার এবং আপনার দলের সমর্থক ছিলাম। বাংলাদেশ আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদের প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছি পনের বছর। আমি কেবল সংস্কৃতিসর্বস্ব একজন কর্মী। ‘মৃত্যুঞ্জয়ী বঙ্গবন্ধু’-সহ আমার প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা একান্ন্। আমি রাজনীতি করলে হয়তো জেলে ঢোকার ভয় পেতাম না। কিন্তু আমি জেল জুলুমভীত মানুষ। আমি তাই আজ পলাতকপ্রাণ অসহায় আর্ত। ভালো কাজের জন্য আপনিও পুরস্কার হিসেবে কারাবাস করেছেন। আমি খুব বেশি ভালো কাজ করতে পারিনি বলে পরবাস করছি। আপনি যে আমাদেরকে গানবাংলা চ্যানেল করার অনুমতি দিয়েছিলেন– সে মূল্য আমি ও আমরা দিতে পারিনি। আমাকে ক্ষমা করবেন।
রবিশঙ্কর মৈত্রীর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা কেন?
খোলা চিঠির নিচেই রবিশঙ্কর মৈত্রী তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির বেশকিছু ঘটনা তুলে ধরেন। সেগুলো হলো-
১. রবিশঙ্কর মৈত্রী গানবাংলা টেলিভিশনের মূল উদ্যোক্তা।
২. ২০১১ সালের ২২শে ফেব্রুয়ারি রবিশঙ্কর মৈত্রী গানবাংলা নামে একটি টেলিভিশন চ্যানেল করার জন্য প্রস্তাব দিলে রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী ড. চঞ্চল খান উদ্যোগী হন।
৩. ২৫শে জুলাই ২০১১ তারিখে বার্ডস আই মাস মিডিয়া এন্ড কমিউনিকেশন লিমিটেড নামে একটি কোম্পানি তৈরি করে তথ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর গানবাংলা টেলিভিশনের লাইসেন্সের জন্য আবেদন করা হয়। কোম্পানির পক্ষ থেকে সৈয়দ আহমেদ ফারুক চেয়ারম্যান হিসেবে আবেদন করেন। সৈয়দ আহমেদ ফারুক ১৯৬৯-এর ছাত্রনেতা এবং মুক্তিযোদ্ধা।
৪. ১৯শে অক্টোবর ২০১১ তারিখে তথ্য মন্ত্রণালয় থেকে সৈয়দ আহমেদ ফারুককে অঙ্গীকারনামা প্রদানের জন্য চিঠি দেয়া হয়। ২০শে অক্টোবর ২০১১ তারিখে গানবাংলার পক্ষ থেকে সৈয়দ আহমেদ ফারুক অঙ্গীকারনামা প্রদান করেন। ২৪শে অক্টোবর ২০১১ তারিখে বিনোদনমূলক ভিডিও অনুষ্ঠান / ছায়াছবি তৈরি ও রপ্তানীর অনাপত্তি এবং ৩০শে অক্টোবর ২০১১ তারিখে তথ্য মন্ত্রণালয় থেকে গানবাংলা স্যাটেলাইট টেলিভিশনের সংবাদ প্রচার ও স্থানীয়ভাবে সম্প্রচার করার অনাপত্তি প্রদান করে।
৫. এনএসআই ডিজিএফআই এবং এসবির পক্ষ থেকে তদন্তসাপেক্ষে নিরাপত্তা ছাড়পত্র প্রদানের পর বিটিআরসি গানবাংলা টেলিভিশনের অনুকূলে ২৫শে জুন ২০১২ তারিখে তরঙ্গ বরাদ্দ দেয়া হয়। তরঙ্গ বরাদ্দের তদন্তকালীন সময়ে গানবাংলার চেয়ারম্যান ছিলেন সৈয়দ আহমেদ ফারুক, ব্যবস্থাপনা পরিচালক : ড. এম আমানুল্লাহ খান (চঞ্চল খান), এবং পরিচালক ছিলেন : বখতিয়ার শিকদার ও রবিশঙ্কর মৈত্রী।
৬. বিটিআরসি থেকে তরঙ্গ বরাদ্দপ্রাপ্ত হবার পর গানবাংলার চেয়ারম্যান সৈয়দ আহমেদ ফারুক প্রতিষ্ঠানটির জন্য অর্থ ব্যয় করতে পারবেন না এবং গানবাংলায় চেয়ারম্যান ও পরিচালক হিসেবে থাকবেন না বলেও জানিয়ে দেন। গানবাংলা টিভি চ্যানেলটি এই সময়ে অর্থ সংকটে পড়ে। গানবাংলা টেলিভিশন অর্থ সংকটে পড়ায় নতুন ইনভেস্টর খুঁজতে থাকে। আলোচনা হয় কৌশিক হোসেন তাপস ও ফারজানা আরমান মুন্নীর সঙ্গে, তারা এই চ্যানেলে জড়িত হতে আগ্রহ প্রকাশ করেন এবং সেই মোতাবেক ৫ই জুলাই ২০১২ তারিখে বিটিআরসি বরাবর ড. এম আমানুল্লাহ খান (চঞ্চল খান) কৌশিক হোসেন তাপস এবং ফারজানা আরমান মুন্নীকে যথাক্রমে ৭০% ও ১০% শেয়ার হস্তান্তরের অনুমতি চেয়ে আবেদন করেন।
৭. কৌশিক হোসেন তাপস ও ফারজানা আরমান মুন্নীর সঙ্গে গানবাংলা টেলিভিশনের শেয়ার হস্তান্তর-চুক্তিস্বাক্ষরও হয়। কৌশিক হোসেন তাপস সেপ্টেম্বর ২০১২ থেকে ৪৮ প্রগতি সরণী বারিধারায় নিজের নামে বাড়িভাড়া নিয়ে গানবাংলার অফিস চালাতে থাকেন। এদিকে কৌশিক হোসেন তাপস ও ফারজানা আরমান মুন্নীর নামে শেয়ার হস্তান্তরের অনুমতি লাভের (তথ্য মন্ত্রণালয় ও বিটিআরসি থেকে) পূর্বেই জয়েন্ট স্টক কোম্পানি থেকে ৭০% ও ১০% শেয়ার ইস্যু করে নেন।
৮. ড. এম আমানুল্লাহ খান (চঞ্চল খান)-এর স্বাক্ষর নকল করে কৌশিক হোসেন তাপস নিজেকে গানবাংলার এমডি এবং ফারজানা আরমান মুন্নীকে ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে জয়েন্ট স্টক কোম্পানি থেকে পাস করিয়ে নেন।
৯. কৌশিক হোসেন তাপস ও ফারজান আরমান মুন্নীর সঙ্গে গানবাংলা টেলিভিশনের আদর্শগত অনেক অমিল ধরা পড়ে। গানবাংলা মূলত সংস্কৃতিবান্ধব চ্যানেল হবে, মুক্তিযুদ্ধ, চিরায়ত সংস্কৃতির ধারা, লোকায়ত শিল্পের বিকাশ ইত্যাদি বিষয়গুলো প্রচার করা হবে বলেই গানবাংলা লাইসেন্স পেয়েছিল কিন্তু কৌশিক হোসেন তাপস এর বিপরীতে অবস্থান নেয়। কৌশিক হোসেন তাপস গানবাংলাকে ফ্যাশন এবং মিউজিক চ্যানেল করবেন বলে দাবি করেন। কৌশিক হোসেন তাপস গানবাংলা চ্যানেলে চেয়ারম্যানসহ আর কোনো পরিচালকের মতামত নিতে রাজি হন না এবং কোনো নিয়মনীতিরও তোয়াক্কা করেন না।
১০. কৌশিক হোসেন তাপস বিগত ০২ ডিসেম্বর ২০১২ তারিখে বোর্ড মিটিং না করে রেজুলেশন তৈরি করেন এবং মেমোরেনডাম পরিবর্তন করেন। এই কাজ করার জন্য তিনি গানবাংলা (বার্ডস আই মাস মিডিয়া এন্ড কমিউনিকেশন লিমিটেড)-এর পরিচালক ও চেয়ারম্য্যান ড. এম আমানুল্লাহ খান (চঞ্চল খান), বখতিয়ার শিকদার ও রবিশংকর মৈত্রীর সই স্ক্যান করে কম্পিউটার প্রিন্ট বের করে জয়েন্ট স্টকে জমা দিয়ে পাস করিয়ে নেন। উল্লেখ্য যে, এই ভুয়া কাগজপত্রের উপর ভিত্তি করেই তথ্য মন্ত্রণালয় ও বিটিআরসিকে প্রতারিত করে তার পক্ষে সকল অনুমোদন সংগ্রহ করে।
১১. কৌশিক হোসেন তাপস গানবাংলার চেয়ারম্যান ড. এম আমানুল্লাহ খান (চঞ্চল খান), পরিচালক বখতিয়ার সিকদার ও রবিশঙ্কর মৈত্রীর স্বাক্ষর নকল করে গানবাংলা টেলিভিশনের জন্য আর্থ স্টেশন সহ যাবতীয় সম্প্রচার যন্ত্রপাতি আমদানির জন্য এলসি করে। এবং পরবর্তীতে বিটিআরসি থেকে কৌশলে অনুমতি নিয়ে আমদানিকৃত সম্প্রচার যন্ত্রপাতি গ্রহণ করে। উল্লেখ্য যে, কৌশিক হোসেন তাপস ২৩শে অক্টোবর ২০১৩ তারিখে তথ্যমন্ত্রণালয় থেকে জালিয়াতি করে গানবাংলার পরিচালক ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে অনুমতি লাভ করেছে কিন্তু বিটিআরসি থেকে সম্প্রচার যন্ত্রপাতি গ্রহণ ও ব্যবহারের অনুমতি নিয়েছে এপ্রিল ২০১৩ তারিখে।
১২. ড. এম আমানুল্লাহ খান (চঞ্চল খান) তথ্য মন্ত্রণালয়ে এবং বিটিআরসিতে গানবাংলার ব্যাপারে কৌশিক হোসেন তাপসের আগ্রাসী আচরণের কথা জানিয়ে শেয়ার হস্তান্তরের অনুমতির আবেদন প্রত্যাহার করে নিতে চিঠি দেন। এই চিঠি বিটিআরসি ও তথ্যমন্ত্রণালয় গ্রহণ করে ৬ই অক্টোবর ২০১৩ তারিখে। কিন্তু তথ্য মন্ত্রণালয় ড. এম আমানুল্লাহ খান (চঞ্চল খান)-এর আবেদনে সাড়া না দিয়ে, জয়েন্ট স্টক কোম্পানি থেকে স্বাক্ষর জালিয়াতি করে যেভাবে কৌশিক হোসেন তাপস ও ফারজানা আরমান মুন্নী গানবাংলার এমডি এবং ভাইস চেয়ারম্যান হয়েছেন সেই সব নকল তথ্য প্রমাণাদির উপর ভিত্তি করে কৌশিক হোসেন তাপস ও ফারজানা আরমান মুন্নীকে গানবাংলার মালিক হিসেবে ২৩শে অক্টোবর ২০১৩ তারিখে স্বীকৃতি ও অনাপত্তি প্রদান করে। তথ্য মন্ত্রণালয়ের অনাপত্তি পাবার পর কৌশিক হোসেন তাপস চরম বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। তিনি বলেন, গানবাংলা এখন থেকে সম্পূর্ণ নতুন চ্যানেল এবং এই চ্যানেলের লাইসেন্স তাঁর একার। এই চ্যানেলে সৈয়দ আহমেদ ফারুক, চঞ্চল খান, বখতিয়ার সিকদার ও রবিশঙ্কর মৈত্রী অবাঞ্ছিত। এরপর থেকে কৌশিক হোসেন তাপস এবং ফারজানা আরমান মুন্নীই গানবাংলা টেলিভিশন নিয়ন্ত্রণ করছেন।
১৩. গানবাংলার পরিচালকদের না জানিয়ে কৌশিক হোসেন তাপস ১৬ই ডিসেম্বর ২০১৩ তারিখে গানবাংলার আনুষ্ঠানিক সম্প্রচারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান করেন বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র থেকে।
১৪. ড. এম আমানুল্লাহ খান (চঞ্চল খান) কৌশিক হোসেন তাপস ও তার স্ত্রী পরিচালক ফারজানা আরমান মুন্নির বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতা ও অবৈধভাবে কোম্পানির কর্মকাণ্ড পরিচালনার অভিযোগ করেন। বিগত ২৪শে ফেব্রুয়ারি ২০১৪ তারিখে হাইকোর্টের বিচারপতি রেজাউল হাসানের একক বেঞ্চে গানবাংলা টিভি (বার্ডস আই মাস মিডিয়া ও কমিউনিকেশন লিমিটেড)-এর চেয়ারম্যান জনাব আমানুল্লাহ খান, পরিচালক বখতিয়ার সিকদার, পরিচালক রবিশঙ্কর মৈত্রী ও শেয়ারহোল্ডার জনাব সৈয়দ আহমেদ ফারুক অভিযোগ করেন, যে উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য নিয়ে গানবাংলার যাত্রা শুরু তা থেকে বেরিয়ে, পরিচালনা পরিষদের সিদ্ধান্তের তোয়াক্কা না করে কোম্পানির এমডি তাপস ও তার স্ত্রী মুন্নি চ্যানেলটি পরিচালনা করছেন। সংক্ষিপ্ত শুনানি শেষে বিচারপতি রেজাউল হাসান বলেন, পূর্ণাঙ্গ শুনানি না হওয়া পর্যন্ত কোম্পানির শেয়ার কেনা-বেচা, পরিচালনা পরিষদে পরিবর্তন করা যাবে না। পূর্ণাঙ্গ শুনানি না হওয়া পর্যন্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক পরিচালনা পরিষদের নির্দেশনা মোতাবেক কাজ করতে বাধ্য হবেন। পূর্ণাঙ্গ শুনানি না হওয়া পর্যন্ত কোম্পানির যন্ত্রপাতি আমদানির অনুমতি ও পরিচালনা সংক্রান্ত সকল অনুমতির কপি ও কাগজপত্র আদালতে দাখিল করতে হবে বলে অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ জারি করেন। আবেদনকারীদের পক্ষে শুনানি করেন সিনিয়র অ্যাডভোকেট প্রবীর নিয়োগী ও ব্যারিস্টার আনিতা গাজি রহমান। কিন্তু কৌশিক হোসেন তাপস হাইকোর্টের কোনো আদেশ অমান্য করে গানবাংলার সমস্ত কার্যক্রম একাই চালিয়ে যাচ্ছেন।
১৫. বিগত ১০ই আগস্ট ২০১৪ তারিখে গানবাংলার কার্যালয়ে নির্ধারিত বোর্ড মিটিঙে হাজির হন গানবাংলার চেয়ারম্যান ড. এম আমানুল্লাহ খান এবং পরিচালক রবিশঙ্কর মৈত্রী, বখতিয়ার সিকদার। কিন্তু নির্ধারিত সময় অতিক্রান্ত হবার এক ঘণ্টা পরেও কৌশিক হোসেন তাপস মিটিং করতে না আসায় ড. এম আমানুল্লাহ খান, রবিশঙ্কর মৈত্রী, বখতিয়ার সিকদার গানবাংলা কার্যালয় থেকে ফিরে আসার জন্য রওনা হওয়ার পথে গানবাংলা অফিসের সামনে কৌশিক হোসেন তাপসকে দেখতে পান। কৌশিক তাপস এবং তার পিতা দেলোয়ার হোসেন রাজা অফিসের বাইরে থেকেই সাদা কাগজে ড. এম আমানুল্লাহ খান এবং রবিশঙ্কর মৈত্রী, বখতিয়ার সিকদারকে স্বাক্ষর করে যেতে বলেন। অবস্থা বেগতিক বুঝে গানবাংলা অফিসের সামনে থেকে ড. এম আমানুল্লাহ খান এবং রবিশঙ্কর মৈত্রী, বখতিয়ার সিকদার দ্রুত চঞ্চল খানের গাড়িতে উঠে পড়েন এবং গুলশান অভিমুখে রওনা হওয়ামাত্র অজ্ঞাতনামা ক’জন যুবক মোটর সাইকেল যোগে তাদেরকে ধাওয়া করে। গুলশান দুই নম্বর গোল চত্বর থেকে ওই যুবকরা উধাও হয়ে যায়। ঠিক তখনই ড. এম আমানুল্লাহ খান এবং রবিশঙ্কর মৈত্রী, বখতিয়ার সিকদার গুলশান থানায় ঢুকে পুরো ঘটনার বিবরণ দিয়ে জিডি করেন।
১৬. বিগত ডিসেম্বর ২০১৪ তারিখে হাইকোর্ট থেকে চলমান মামলার রায় না হওয়া পর্যন্ত কৌশিক হোসেন তাপসের বিরুদ্ধে স্ট্যাটাস কো বহাল রাখা হয়।
১৭. এখন পর্যন্ত কৌশিক হোসেন তাপস হাইকোর্টের আদেশ অমান্য করে গানবাংলা চ্যানেল দখল করে রেখেছেন এবং এই চ্যানেলের শেয়ার অন্য কোনো পক্ষের কাছে বিক্রি করবেন বলে ষড়যন্ত্র করছেন।
১৮. মহামান্য হাইকোর্ট-এর আদেশ কৌশিক হোসেন তাপসের কাছে পৌঁছনোর পর বিগত ৭ই এপ্রিল ২০১৪ তারিখে গুলশান থানায় গানবাংলার চেয়ারম্যান, অন্যান্য পরিচালক ও শেয়ার হোল্ডারের নামে (ড. এম আমানুল্লাহ খান, রবিশঙ্কর মৈত্রী, বখতিয়ার সিকদার এবং সৈয়দ আহমেদ) সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন মিথ্যা মামলা দায়ের করেন কৌশিক হোসেন তাপস। মামলা থেকে বর্তমানে এম আমানুল্লাহ খান (চঞ্চল খান) এবং বখতিয়ার সিকদার জামিনে মুক্ত আছেন।
১৯. ১২ই এপ্রিল ২০১৬ তারিখে ঢাকা মহানগর মুখ্য আদালত গানবাংলা টিভি চ্যানেল দখলকারী কৌশিক হোসেনের তাপসের আবেদনের প্রেক্ষিতে রবিশঙ্কর মৈত্রীকে গ্রেফতারে পরোয়ানা জারি হয়।
২০. রবিশঙ্কর মৈত্রী ষড়যন্ত্রমূলক মামলা হামলা হত্যা হুমকির কারণে বিগত ২৬শে অক্টোবর ২০১৪ তারিখে দেশত্যাগ করেন, এখন ফ্রান্সে আশ্রিত।
রবিশঙ্কর মৈত্রীর জন্ম ১৯৬৯ সালের ১৬ই ডিসেম্বর। বাবা ঋত্বিক কুমুদরঞ্জন, মা জয়ন্তী দেবী। পৈত্রিকনিবাস ফরিদপুর জেলার মধুখালি উপজেলার নরকোণা গ্রামে।শৈশব থেকেই লেখালেখি শুরু। প্রথম কবিতা লেখা এবং সম্পাদনা দেয়াল পত্রিকায়। প্রথম প্রকাশ মাসিক সন্দীপনা পত্রিকায়। এরপর জাতীয় দৈনিক ও সাপ্তাহিকে ছোটোগল্প প্রবন্ধ প্রকাশিত। প্রথম উপন্যাস জলগৃহ, প্রকাশিত হয় ১৯৯৫ সালে, তারপর থেকে প্রতি বছরই রবিশঙ্কর মৈত্রী বই প্রকাশিত হচ্ছে। এ যাবত তাঁর পঞ্চাশটি বই প্রকাশিত।
রবিশঙ্কর মৈত্রী দেশহারা হলেও এক অবিচল জীবনযোদ্ধা। তিনি মরমী ভাবের মানুষ। মরমী ভাব বিতরণের মধ্য দিয়ে শুদ্ধ সত্য সুন্দর মানুষের সম্মিলন রচনাই তাঁর ব্রত।
রবিশঙ্কর মৈত্রী আবৃত্তি করেন। আবৃত্তির প্রশিক্ষক। তিনি সাংগঠনিক আবৃত্তিচর্চা করছেন ১৯৯৩ থেকে, আবৃত্তি প্রশিক্ষণের জন্য রবিশঙ্কর মৈত্রী ঘুরেছেন বহুস্থানে বহুবার।
বাংলাভাষা ও সাহিত্যের শুদ্ধ চর্চার জন্য তিনি নিরন্তর কাজ করেছেন। আবৃত্তিচর্চার ভেতর দিয়ে নতুন প্রজন্মকে মূল্যবোধসম্পন্ন করার চেষ্টা করেছেন রবি। তাঁর আবৃত্তি কবিতাপ্রেমীদের কাছে আদৃত।
সাহিত্য সংস্কৃতিচর্চার পাশাপাশি রবিশঙ্কর মৈত্রী ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তিনি টেলিভিশনের জন্য শতাধিক প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণ করেছেন। ফাদার মারিনো রিগন : ভেনিস টু সুন্দরবন প্রামাণ্যচিত্রটি দেশে ও বিদেশে প্রশংসিত। রবিশঙ্কর মৈত্রী এখন ফ্রান্সে আশ্রিত।
এইবেলাডটকম/এমআর
Editor & Publisher : Sukriti Mondal.
E-mail: eibelanews2022@gmail.com