আবার এলো দেবীপক্ষ। দক্ষিণায়নের দিন। কৈলাসশিখর থেকে দুর্গার আগমনীর দিন। সনাতন ধর্মবিশ্বাসে আজ দশভুজা শক্তিরূপে মা দুর্গামণ্ডপে মণ্ডপে অধিষ্ঠান করবেন। শারদীয় দুর্গাপূজার একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ হলো এই মহালয়া। শ্রীশ্রীচণ্ডীপাঠের মধ্য দিয়ে দেবী দুর্গার আবাহনই মহালয়া হিসেবে পরিচিত। আর এই চণ্ডীতেই আছে দেবী দুর্গার সৃষ্টির বর্ণনা এবং দেবীর প্রশস্তি।
মায়ের আগমনকে মহালয়া বলে। মা মর্ত্যে আগমন করেন, পিত্রালয়ে আগমন করেন। অমাবশ্যা পর্যন্ত মহালয়া, প্রতিপদ শুরু হলে মায়ের শৈলপুত্রী রূপের পূজা শুরু হয়। তারপর দ্বিতীয়াতে ব্রম্মচারিনী রূপের পূজা হয়। এভাবে চন্দ্রঘন্টা, কুষ্মাণ্ডা, স্কন্দমাতা দিন অন্তর অন্তর পূজিতা হবার পর সপ্তমী, অষ্টমী ও নবমী। এই তিনদিন কাত্যায়নী রূপের পূজা হয়। পরে কালরাত্রি রূপে মহিষাসুর বধ করেন। কোন ভক্ত নবদুর্গার স্বরূপ উপলব্দি করলে তার কাছেই মহালয়া গুরুত্বপূর্ণ হয়, নচেৎ আমাদের সাধারণ দৃষ্টিতে শুধু মায়ের আগমনে আনন্দ পর্যন্ত সীমাবদ্ধ থাকে।
শরতের আকাশে-বাতাসে এখন যেন মন্দ্রিত হচ্ছে ‘রূপংদেহি, জয়ংদেহি, যশোদেহি, দ্বিষোজহি’র সুরলহরি। আজ ঘনঘটার অমাবস্যা তিথিতে প্রাণে দ্যোতনা তুলে ঢাকে পড়বে কাঠি। সৌর আশ্বিনের কৃষ্ণপক্ষের নাম মহালয়া। দুর্গোত্সবের তিন পর্ব, যথা : মহালয়া, বোধন আর সন্ধিপূজা।
পুরাণ মতে, এ দিন দেবী দুর্গার আবির্ভাব ঘটে। মহালয়া মানেই আর ৬ দিন পর শুরু মায়ের পূজার। হিসাব মতে মহালয়া থেকে দুর্গাপূজার আগমনী ধ্বনি শুনতে পাওয়া গেলেও এবার ৬ দিন পরে পূজা অনুষ্ঠিত হবে না। আশ্বিন মাস মল (মলিন) মাস হওয়ার কারণে এবার দুর্গাপূজা শুরু হবে প্রায় একমাস পর আগামী ২১ অক্টোবর (বুধবার) থেকে। এর আগে সবশেষ এমনটা ঘটেছিল ১৯৮২ সালে।
তিন যুগেরও বেশি সময় পর আবারও পিতৃপক্ষের শেষে অনুষ্ঠিত হবে না শারদীয় দুর্গাপূজা। ফলে বৃহস্পতিবার মহালয়ার ৩৫ দিন পর ২২ অক্টোবর মহাষষ্ঠীর মধ্য দিয়ে শুরু হবে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব।
মায়ের আগমন সন্তানকে অভয় প্রদান করে। মায়ের আগমনে সন্তানকে সমস্ত বিপদ হতে রক্ষা করে। মায়ের আগমনে সন্তান স্বতঃস্ফূর্ততা পায়। মায়ের আগমনে সন্তান শক্তিশালী হয়ে আত্মবলে বলীয়ান হয়। মায়ের আগমন সন্তানের উত্তর উত্তর সমৃদ্ধি বয়ে না। মায়ের আগমনে সবাই একত্রিত হয়। সর্বোপরি মায়ের আগমনে সন্তানের মাঝে সমস্ত আসুরিক প্রবৃত্তি ধ্বংস হয়ে দৈবী সম্পদ বৃদ্ধি পায়।
বস্তুত মা সবসময় সন্তানের সাথে থাকেন। সন্তানের সমৃদ্ধি আনয়নে সবসময় সচেষ্ট থাকেন। সন্তানকে সবসময় রক্ষা করেন। কিন্তু মাতৃভক্ত না হবার ফলে, মায়ের কোলে থেকেও মাকে আমরা দেখি না। তাই তত্ত্বদ্রষ্টা ঋষিগণ সবাইকে মায়ের উপলব্দি জানানোর জন্য দেবীপক্ষের মহালয়া থেকে শুরু করে বিজয়া পর্যন্ত একটা আনুষ্ঠানিকতা সৃষ্টি করেছেন।
মা জাগুক সবার মনে, মা থাকুক সবার সাথে।
নি এম/
Editor & Publisher : Sukriti Mondal.
E-mail: eibelanews2022@gmail.com