সু-স্বাস্থ্য নিজের হাতে। মানুষের দেহ নিখুঁত এক যন্ত্র বিশেষ। খাদ্যের স্বাভাবিক রীতি-নীতি, শ্রম ও বিশ্রামের দ্বারা তা আপনা আপনিই নিয়ন্ত্রিত হয়। যখন আমরা এই স্বাভাবিক নিয়ম-নীতিগুলি লঙ্ঘন করি তখনই দেহে বিষক্রিয়ার সৃষ্টি হয় এবং দেহ তখন সেই বিষ প্রক্রিয়া থেকে মুক্তি পেতে চায়। এটাই হল রোগ বা অসুখ। বিভিন্ন রকমের উপসর্গ অনুযায়ী এর বিভিন্ন রকমের নাম দেওয়া হয়। এই নিয়ম লঙ্ঘনকারী নিয়মগুলি যদি মানুষের সহজাত প্রকৃতিগত পদ্ধতি দ্বারা সঠিকভাবে প্রয়োগ করা যায় তবে সহজেই সম্পূর্ণভাবে নিরাময় হতে পারে। এই হল প্রাকৃতিক আরোগ্য চিকিৎসা পদ্ধতি। নানান পদ্ধতির মধ্যে বিবেচ্য বিষয়গুলি হলঃ ১) প্রয়োজন মত উপবাস আর নিশিপালন। ২) দেহ বস্তি পরিস্কার। ৩) কাঁচা পথ্যের সাথে কচি গম ও তার নির্যাস খাওয়া। ৪) সঠিক ও নিয়মিত ভাবে তাজা ও কাঁচাশাক-সব্জি খাওয়া। ৫) সকল ঋতুর ফল কম-বেশি খেতে হবে। ৬) সকলকে যোগযুক্ত হইতে হইবে। ৭) হাত সব চেয়ে মহত্ত্বপূর্ণ অঙ্গ । অ্যাকিউপ্রেশার চিকিৎসা পদ্ধতির সুস্পষ্ট নির্দেশনা অনুসরন করতে হবে। প্রাকৃতিক আর যৌগিক চিকিৎসার কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নাই। আমাদের মনে রাখিতে হইবে বিজ্ঞান সাধনা করতে গিয়ে দয়াশীলা প্রকৃতি মাতাকে আমরা যেন ভুলে না যাই।
খাদ্যজ্ঞান পঞ্চভূতে আমাদের দেহব্রহ্মাণ্ড।যেমনঃ- ক্ষিতি (পৃথিবী), অপঃ(জল), তেজ(অগ্নি),মরুৎ (বায়ু), ব্যোম (আকাশ)। শরীর ও মস্তিষ্ক যাতে সঠিকভাবে কাজ করতে পারে উল্লিখিত পঞ্চতত্ত্ব থেকে শক্তি তৈরি করে। তাই আমরা খাদ্য ও পানীয় গ্রহন করি। সমগ্র ব্রহ্মাণ্ড সূর্য থেকে শক্তি পেয়ে থাকে। সকল প্রকার প্রাকৃতিক খাদ্য, ফল, তরকারি, শস্য,ডাল ইত্যাদির মধ্যে প্রায় সমপরিমান সূর্যের ধনাত্মক ও ঋণাত্মক শক্তি রয়েছে। খাদ্যে এই শক্তি উপাদান কম-বেশি পরিমানে থাকে। তাই সব রকম খাদ্য দ্রব্যকে ছয় রকম স্বাদে বিভক্ত করা হয়েছে। যেমনঃ-অম্ল, মধু, তিক্ত, কষায়, লবন ও কটু। অম্ল=জল+অগ্নি, মধু= পৃথিবী+জল, তিক্ত=বায়ূ+অকাশ, কষায়=বায়ূ+জল, লবন=পৃথিবী+অগ্নি ও কটু= বায়ু+অগ্নি। আমাদের দৈনিক খাদ্য তালিকায় এই ছয় রকম স্বাদের সমন্বয় থাকা উচিৎ। চিকিৎসা শাস্ত্র আয়ূর্বেদ সমস্ত রকম ফল,শব্জি ও ধাতুর বিষয় অনুসন্ধান করে প্রমান করেছে মানব দেহে এর প্রভাব কতটা। আমাদের খাদ্যে ধনাত্মক বা ঋনাত্মক উপাদানের ঘাটতি বা আধিক্য হলে দেহে নানা প্রকার রোগ সৃষ্টি হয়। এটা অনুসরন করে আর যোগযুক্ত হয়ে অনাকাঙ্খিত সমস্যা এড়িয়ে যেতে পারি।
কোষ্ঠকাঠিন্য দেহ রোগাক্রান্ত হওয়া শুরু হয় কোষ্ঠকাঠিন্য দিয়ে। কোষ্ঠকাঠিন্যে ওষুধ খাওয়ার কোনও প্রয়োজন নেই। অ্যাকিউপ্রেশার চালালে, ঈষদুষ্ণ জল পান করলে, এবং সপ্তাহে একদিন উপবাস করলে। সব ঠিক হয়ে যাবে। এ ছাড়া চাহিদা মত জল, ঘোল এবং শাকসব্জী খেতে হবে। মুখের নীচে থুতনির মাঝখানে বুড়ো আঙুল দিয়ে তিন থেকে পাঁচ মিনিট ঘষতে হবে অথবা থুতনির চার পাশে চাপ দিতে হবে। এই প্রক্রিয়ায় কোষ্ঠকাঠিন্যের সব রকম সমস্যা দূর হবে। ঠিকমত পায়খানা না হলে মধ্যমাঙ্গুলিতে নারকেল বা সরিষার তেল মাখিয়ে ঐ অাঙুল যতদুর সম্ভব মলদ্বারের ভিতর ঢুকিয়ে চারপাশে মালিশ করতে হবে, তারপর পেট উপর-নীচ করাতে হবে।এরফলে মল সম্পুর্ণ বাইরে আসবে। কোষ্ঠকাঠিন্য এবং অর্শের সমস্যাও থাকবে না। এই প্রক্রিয়ায় প্রোষ্টেট্ গ্রন্থির চার পাশে মালিশের ফলে প্রোষ্টেট্ গ্রন্থি,হার্নিয়া এবং বহুমুত্র রোগেরও নিরাময় হবে।যোগ শাস্ত্র মতে এর নাম "গণেশ ক্রিয়া "।
নি এম/তারাপদ শিকদার
Editor & Publisher : Sukriti Mondal.
E-mail: eibelanews2022@gmail.com