ভগবান শ্রীকৃষ্ণের রুপ সবার কাছেই মনমোহিত। ঘন কাল কৃষ্ণবর্ণ মেঘের মত দেখতে শ্রীকৃষ্ণ সুপুরুষ ব্যক্তি। ওনার লাল ঠোঁটে সবসময় যেন একটা দুষ্টু বাঁকা হাসি লেগেই আছে। ওনার চোখে রয়েছে ঔজ্জ্বল্য যাতে সবসময় যেন এক দীপ্তির আভা। ওনার মুখের চারপাশে আছে গভীর কাল কোঁকড়ানো কেশের বাহার। ওনার বসন পীতবর্ণ ও শক্তিশালী কৌস্তভ রত্ন তাঁর বুকের মাঝে শোভা পায়। ওনার এই রুপের বর্ণনার সবচেয়ে সেরা অংশ হল ওনার মাথায় শোভা পাওয়া ময়ূরের পালকটি।
শ্রীকৃষ্ণের মুকুটে শোভা পাওয়া ময়ূরের পেখমের তাৎপর্য... বেশিরভাগ ভক্তের কাছে ময়ূরের এই পালক প্রায় ততটাই প্রতীকি বা দর্শনীয় যেমন ভগবান শ্রীকৃষ্ণ স্বয়ং। শ্রদ্ধার সাথে ভক্তেরা তাই শ্রীকৃষ্ণকে "মর্মকুটধারী" বলেও সম্বোধন করে থাকে। এর মানে হল যার মাথার মুকুট ময়ূরের পেখম সজ্জিত। কিন্তু বহুলোকর কাছে মুকুটের এই পেখমের তাৎপর্য্য জানা নেই হয়ত। অনেক কাহিনী ও কথকথা জড়িত আছে এই ময়ূরের পেখমের ব্যাপারে। আজ তাই আমরা এমনি কিছু পুরাণের প্রচলিত ধারণা বা কাহিনী জানার চেষ্টা করব যা এই ময়ূরের পেখমের অন্তর্নিহিত কাহিনীটা জানায়।
শ্রীকৃষ্ণের মাথায় মুকুটে ময়ূরের পেখমের পিছনের গল্প ময়ূরের নাচ একদিন বড়ই মনোরম এক পরিবেশে শ্রীকৃষ্ণ ও বাকি রাখালরা দুপুরে জঙ্গলে ঘুমোচ্ছিলেন। কৃষ্ণ সবার আগে ঘুম থেকে ওঠে ও এই অপূর্ব পরিবেশে নিজের মনে বাশি বাজাতে শুরু করেন। অপূর্ব, মনোরম সেই সুর। ওনার এই মিষ্টি সুরে সব প্রাণী উচ্ছসিত হয়ে নাচতে শুরু করে দেয়। এই সমস্ত প্রাণীর মধ্যে একদল ময়ূরও ছিল। তাদের মধ্যে কিছু আবার সুরে মুগ্ধ হয়ে বিভোর হয়ে অজ্ঞান হয়ে পড়ে। বাঁশিবাদন যখন বন্ধ হয়, তখন ময়ূররাজ শ্রীকৃষ্ণের দিকে এগিয়ে আসেন। ওর সব পালক ঝরে পড়ে। ভগবান কৃষ্ণকে এই সব পেখমগুলো গুরুদক্ষিণা হিসেবে দান করা হয়। ভগবান কৃষ্ণ এই উপহার খুব আনন্দের সাথে স্বীকার করেন ও মাথায় সেগুলো ধারণ করেন। উনি এই সময়ই জানান, যে উনি এই পালক চিরকাল পরবেন এবং অন্য কোন প্রাণীর পালক এই স্থান নিতে পারবে না কোনদিন। সাতটি রঙ বলা হয় প্রাথমিক সাতটি রঙের সব কটাই ময়ূরের পেখমে থাকে। তাই মানা হয় শ্রীকৃষ্ণ এটি পরিধান করে জীবনের সব রঙ ধারণ করার প্রতীক হন। ভগবান কৃষ্ণ সারা বিশ্বকে ধারণ করে আছেন, তাঁর অপার লীলা ও মহিমায় আমরা আচ্ছন্ন। ওনার নানা রুপ,নানান দর্শন ও ব্যক্তিত্ব আমাদের মোহিত করে রাখে।
স্কন্দের শুভাকাঙ্ক্ষী ভগবান বিষ্ণুকে, দেবী পার্বতীর ভাই হিসেবে মানা হয়। শাস্ত্রে আছে যে বিষ্ণু বিয়ের সম্পর্কে দেবী পার্বতীকে মহাদেবকে দান করে দেন।তাই একদিক থেকে দেখতে গেলে শ্রীকৃষ্ণ কার্তিকের মামা হন। শ্রীমান কার্তিকের বাহন হল ময়ূর। তাই মানা হয় যে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ ময়ূরের পেখম নিজের মাথায় সাজান যাতে কার্তিক, যিনি আবার যুদ্ধের দেবতা, ওনার সমস্ত প্রয়াস যেন সার্থক হয়।
ত্রেতা যুগে, ভগবান শ্রীরাম এই পৃথিবীতে পদার্পণ করেন। প্রচলিত আছে যে একবার শ্রীরাম ভ্রমণে বেরিয়েছিলেন। একদল ময়ূর নাকি তাদের পেখম দিয়ে ওনার চলার পথটি পরিষ্কার করে দেয়। ভগবান শ্রীরাম নাকি তাদের এই নিস্বার্থতা ও নিষ্ঠার নিদর্শনে খুবই প্রসন্ন হন। উনি নাকি তখন কথা দিয়ে যান যে দ্বাপর যুগে উনি আবার আবির্ভূত হবেন ও তখন ময়ূরদের প্রতি সম্মান জানাতে এই পালক উনি মাথায় ধারণ করবেন। তাই উনি যখন শ্রীকৃষ্ণ রুপে ধরায় আবির্ভূত হন, ওনার নিজের দেওয়া কথার সম্মান রাখতে নিজের মাথায় ময়ৃরের পালক পরেন।
আরপি
![]() |
সম্পাদক : সুকৃতি কুমার মন্ডল খবর প্রেরণ করুন # info.eibela@gmail.com ফোন : +8801517-29 00 02 +8801711-98 15 52 a concern of Eibela Foundation |
|