ঢাকা: বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার দু’টি আবেদন খারিজ করে দিয়েছে আদালত। ঢাকার তিন নম্বর বিশেষ জজ আদালতে জিয়া দাতব্য ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার তদন্ত কর্মকর্তার নতুন করে সাক্ষ্য গ্রহণ ও ফৌজদারি কার্যবিধির ১৭২ (২) ধারা অনুযায়ী এই মামলার কেস ডায়রি আসামিপক্ষের আইনজীবীদের দেখানোর অনুরোধ করে আবেদন দু’টি করেন খালেদা জিয়া।
আবেদন দু’টি খারিজের আদেশের বিরুদ্ধে খালেদার আইনজীবীরা হাইকোর্টে আবেদন করবেন বলে জানিয়ে আত্মপক্ষ সমর্থন পেছানোর আবেদন জানান। এরই প্রেক্ষিতে ২৫ এপ্রিল আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য দিন পুনর্নির্ধারণ করেন আদালত।
খালেদা জিয়ার পক্ষে আদালতে আরও ছিলেন তার আইনজীবী অ্যাড. খন্দকার মাহবুব হোসেন, এ জে মোহাম্মদ আলী, জয়নুল আবেদীন, অ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়া, সৈয়দা আসিফা আশরাফী পাপিয়াসহ বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা। অন্যদিকে দুদকের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট মোশাররফ হোসেন কাজল।
ঢাকার তিন নম্বর বিশেষ জজ আদালতে রোববার এ মামলায় আত্মপক্ষ সমর্থনের ধার্য দিনে খালেদা জিয়া হাজির হন। শুরুতেই তার আইনজীবী মামলার তদন্ত কর্মকর্তা হারুনুর রশিদের দেওয়া জবানবন্দি নিয়ে আপত্তি তুলে নতুন করে সাক্ষ্যগ্রহণের আবেদন করেন।
তিন নম্বর বিশেষ জজ আদালতে বিচারক আবু আহমেদ জমাদার ওই আবেদন নাকচ করে দিলে খালেদার অন্যতম আইনজীবী এজে মোহাম্মদ আলী তদন্ত কর্মকর্তাকে নতুন করে জেরা করার অনুমতি চান। এরপর দ্বিতীয় আবেদনটি করা হয়। উভয় পক্ষের শুনানি শেষে এই আবেদনটিও খারিজ করে দেয়া হয়।
এক পর্যায়ে বিষয়টি নিয়ে দুই পক্ষের তুমুল বাক বিতণ্ডার মধ্যে আত্মপক্ষ সমর্থনের বিষয়টি হারিয়ে যায়। দ্বিতীয় আবেদনও খারিজ হয়ে গেলে খালেদার আইনজীবী মাহবুব উদ্দিন খোকন উত্তেজিত হয়ে আদালতের ওপর অনাস্থা জানিয়ে বক্তব্য দিতে থাকেন। পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হওয়ার পর বিচারক আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য নতুন তারিখ নির্ধারণ করেন।
খালেদার আইনজীবীরা তদন্ত কর্মকর্তার আগের জবানবন্দি নিয়ে আপত্তিতে তোলেন। তারা বলেন, তদন্তের কাগজ দেখে সাক্ষ্য দেওয়ার নিয়ম না থাকলেও হারুনুর রশিদ সেটাই করেছেন। এই যুক্তিতে নতুন করে তদন্ত কর্মকর্তার সাক্ষ্যগ্রহণের দাবী করেন তারা।
জেরা নিয়ে আপত্তিতে খালেদার আইনজীবীরা বলেন, হারুনুর রশিদ এর আগে বিলুপ্ত দুর্নীতি দমন ব্যুরোর চাকরি থেকে অব্যাহতি নেন। তিনি দুর্নীতি দমন কমিশনে আত্মীকরণের জন্য হাই কোর্টে গেলে তার আবেদন খারিজ হয়ে যায়।
আইনজীবী এজে মোহাম্মদ আলী বলেন, হাই কোর্টের ওই আদেশের ফলে হারুনুর রশিদ তদন্ত কর্মকর্তা হওয়ার যোগ্যতা হারিয়েছেন। সুতরাং তার দেওয়া সাক্ষ্যও বেআইনি।
জবাবে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা বলেন, মামলার এ পর্যায়ে এসে তদন্ত কর্মকর্তার সাক্ষ্য ও জেরা নিয়ে আপত্তি তোলার সুযোগ নেই।
দুদকের আইনজীবী মোশারফ হোসেন কাজল বলেন, এতোদিন পরে এ কোন আবেদন? এ কীসেল আলামত? এ মামলার বিচার পিছিয়ে দেওয়ার জন্য আর কতো পদ্ধতি অবলম্বন করবেন?
আদালত এই আবেদনটি খারিজ করে দিলে খালেদার আইনজীবীরা ফৌজদারি কার্যবিধির ১৭২ (২) ধারা অনুযায়ী এই মামলার কেস ডায়রি আসামিপক্ষের আইনজীবীদের দেখানোর আবেদন করেন। পরে রাষ্ট্র এ আসামিপক্ষের শুনানি শেষে ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৩ এর বিচারক আবু আহমেদ জমাদার এ আবেদনটিও খারিজ করে দেন।
জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের নামে অবৈধভাবে তিন কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ২০১০ সালের ৮ অগাস্ট পাঁচজনের বিরুদ্ধে তেজগাঁও থানায় এই মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
খালেদা জিয়া ছাড়া অন্য আসামিরা হলেন- তার সাবেক রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, হারিছের তখনকার সহকারী একান্ত সচিব ও বিআইডব্লিউটিএ-এর নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক বিভাগের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক জিয়াউল ইসলাম মুন্না এবং ঢাকার সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার একান্ত সচিব মনিরুল ইসলাম খান।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা হারুনুর রশিদ ২০১২ সালের ১৬ জানুয়ারি খালেদা জিয়াসহ চারজনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র দেন। এরপর ২০১৩ সালের ১৯ মার্চ অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে আসামিদের বিচার শুরু করে আদালত।
এইবেলা ডটকম/এডি/এসজি
Editor & Publisher : Sukriti Mondal.
E-mail: eibelanews2022@gmail.com