ব্যাংক মালিকদের দাবির মুখে এরই মধ্যে সংশোধন হয়েছে ব্যাংক কোম্পানি আইন। এতে ব্যাংকের পর্ষদে পারিবারিক কর্তৃত্ব সংহত হওয়ার পাশাপাশি বেড়েছে পরিচালক পদ ধরে রাখার মেয়াদ। ব্যাংক মালিকদের মতো এবার বীমা আইনের সংশোধন চাইছেন বীমা খাতের উদ্যোক্তারা। বীমা কোম্পানির সঙ্গে ব্যাংকের পর্ষদেও যাতে থাকতে পারেন, সেজন্য বীমা আইন ২০১০-এর ৭৫ ধারা বাতিল চেয়েছেন তারা। বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে এ খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)।
একই সঙ্গে ব্যাংক ও অন্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পরিচালক থাকার নিষেধাজ্ঞা সংবলিত ধারাটি নিয়ে আপত্তি জানিয়ে আসছিলেন বীমা মালিকরা। এরই পরিপ্রেক্ষিতে আইনের এ ধারাটিসহ আর কী কী সংশোধন জরুরি, বীমা মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশনকে (বিআইএ) তার একটি তালিকা করতে বলেছে আইডিআরএ। সর্বশেষ ২৭ ফেব্রুয়ারির বৈঠকে বিআইএ চিহ্নিত ধারা ও বিধিগুলো যাচাই-বাছাইয়ে একটি কমিটি গঠনের ঘোষণা দেয় নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি। সে অনুযায়ী আইনের ৭৫ নম্বর ধারাটি ত্রুটিপূর্ণ উল্লেখ করে তা বাতিলের জন্য নিয়ন্ত্রক সংস্থায় প্রস্তাব জমা দিচ্ছে বিআইএ।
বিষয়টি নিশ্চিত করে বিআইএ চেয়ারম্যান শেখ কবীর হোসেন বলেন, বীমা আইনে একই সঙ্গে অন্য কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পরিচালক পদ ধরে রাখায় নিষেধাজ্ঞা থাকলেও ব্যাংক কোম্পানি আইনে নেই। আইনটি সাংঘর্ষিক হওয়ায় বাতিল করা জরুরি। বীমার ত্রুটিপূর্ণ আইনের তালিকায় ৭৫ নং ধারাটি আমরা অন্তর্ভুক্ত করেছি। পরিচালক পদে নিষেধাজ্ঞার এ ধারা বাতিলে আগেও আমরা নিয়ন্ত্রণ সংস্থার সঙ্গে বসেছি। এবার আনুষ্ঠানিকভাবে প্রস্তাব পাঠানো হচ্ছে।
ধারাটিতে বলা হয়েছে, অন্য কোনো আইনে যা-ই থাকুক না কেন, কোনো বীমা কোম্পানির পরিচালক একই শ্রেণীর বীমা ব্যবসার জন্য নিবন্ধীকৃত অন্য কোনো বীমা কোম্পানি, কোনো ব্যাংক কোম্পানি বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পরিচালক হতে পারবেন না। এখানে ব্যাংক কোম্পানি বলতে ব্যাংক আইন, ১৯৯১-এ সংজ্ঞায়িত ব্যাংক কোম্পানি এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান বলতে আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইন ১৯৯৩-এ সংজ্ঞায়িত আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে বোঝানো হয়েছে।
বীমা আইনের ত্রুটি চিহ্নিতে বিআইএর পাশাপাশি নিয়ন্ত্রক সংস্থার পক্ষ থেকেও কাজ চলছে বলে জানান আইডিআরএর চেয়ারম্যান শফিকুর রহমান পাটওয়ারী। তিনি বলেন, বীমা আইন ২০১০-এ কিছু ত্রুটি আছে, যা আমরা নিজেরা স্বীকার করেছি। এগুলো সংশোধন, বিয়োজন, সংযোজন বা বাতিলের জন্য সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গেই আমরা আলোচনা চালাচ্ছি। বীমা আইনের ৭৫ নং ধারাটির পাশাপাশি আরো কিছু বিষয় সংশোধনের প্রস্তাব আছে।
জাতীয় সংসদে পাসের পর নতুন বীমা আইন গেজেট আকারে প্রকাশিত হয় ২০১০ সালের ১৮ মার্চ। এরপর ২০১১ সালের ১০ অক্টোবর আইনের ৭৫ নং ধারাটি পরিপালনের জন্য প্রতিটি বীমা কোম্পানিকে চিঠি পাঠায় আইডিআরএ। যদিও ধারাটির শতভাগ বাস্তবায়ন এখনো সম্ভব হয়নি। বীমা কোম্পানির পাশাপাশি ব্যাংকের পরিচালকের পদও ধরে রেখেছেন অনেকে।
জানা গেছে, সাধারণ বীমা খাতের কোম্পানি এশিয়া ইন্স্যুরেন্সের পরিচালক আলমগীর কবীর সাউথইস্ট ব্যাংকের চেয়ারম্যানের দায়িত্বে আছেন। ফিনিক্স ইন্স্যুরেন্সের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শোয়েব সিটি ব্যাংকেরও চেয়ারম্যান। বীমা কোম্পানিটির আরেক পরিচালক দীন মোহাম্মদও রয়েছেন সিটি ব্যাংকের পরিচালক পদে। এছাড়া সিটি ইন্স্যুরেন্সের ভাইস চেয়ারম্যান হোসাইন মেহমুদ আছেন সিটি ব্যাংকের পরিচালক হিসেবে। ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্সের চেয়ারম্যান মনজুরুর রহমান আছেন পূবালী ব্যাংকের পর্ষদে।
এক্সিম ব্যাংকের সাবেক পরিচালক ও ইসলামিক ব্যাংকস কনসালটেটিভ ফোরামের ভাইস চেয়ারম্যান একেএম নুরুল ফজল বুলবুল বলেন, ব্যাংক ও বীমা আলাদা দুটি খাত। তাই বীমা কোম্পানির পরিচালক ব্যাংকের পর্ষদে থাকলে কোনো সমস্যা হবে বলে আমি মনে করি না। এছাড়া বিশ্বের অন্য কোনো দেশেও এ ধরনের নিয়ম নেই।
তবে নিয়ন্ত্রক সংস্থার নির্দেশনা মেনে ওই সময় ব্যাংক, বীমা বা অন্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পদ ছেড়ে দেন বীমা খাতের কয়েকজন পরিচালক। আইনি বাধ্যবাধকতার কারণে গ্রীনডেল্টা ইন্স্যুরেন্সের পরিচালকের পদ ছেড়ে দেন প্রতিষ্ঠানটির উদ্যোক্তা পরিচালক নাসির এ চৌধুরী। বর্তমানে আর্থিক প্রতিষ্ঠান ডেল্টা ব্র্যাক হাউজিংয়ের চেয়ারম্যান ও গ্রীনডেল্টা ইন্স্যুরেন্সের পরামর্শক হিসেবে আছেন তিনি। একইভাবে মেঘনা ব্যাংকের পরিচালকের পদ ছেড়ে দিয়ে মেঘনা লাইফ ও কর্ণফুলী ইন্স্যুরেন্সের চেয়ারম্যান পদ ধরে রেখেছেন নিজাম উদ্দীন।
জানতে চাইলে নিজাম উদ্দীন আহমদ বলেন, অন্য কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পরিচালক হওয়ার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা থাকায় আমি মেঘনা ব্যাংকের পরিচালক পদ ছেড়ে দিয়েছি। কিন্তু বীমা আইনের এ ধারাটি বাতিলের পক্ষে আমি নিজেও। ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন খাতে ব্যবসা করবেন এটাই স্বাভাবিক। নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের বরং উচিত কোথাও অনিয়ম বা প্রতারণা হচ্ছে কিনা, সেদিকে বেশি নজর দেয়া।
বিএম/
![]() |
সম্পাদক : সুকৃতি কুমার মন্ডল খবর প্রেরণ করুন # info.eibela@gmail.com ফোন : +8801517-29 00 02 +8801711-98 15 52 a concern of Eibela Foundation |
|