হিন্দু পুরাণ অনুযায়ী বিষ্ণু দেবতা বৈষ্ণব সম্প্রদায়ের সর্ব্বোচ্চ দেবতা৷ বিষ্ণু দেবতা বিশ্বের দেবতা হিসেবে বিবেচিত হন৷ বিষ্ণুদেবতাকে পরমাত্মা কিংবা পরমেশ্বর হিসেবেও ঘোষণা করা হয়৷ বিষ্ণু দেবতার একাধারে রয়েছে দুটি দিক৷ বিষ্ণু দেবতার একদিকে রয়েছে যেমন শান্ত এবং স্নিগ্ধ রূপ৷ অপরদিকে তারও রয়েছে একটি ভয়ংকর রূপ৷ কালস্বরূপ শেষনাগের উপরে শুয়ে থাকেন তিনি৷
সুদর্শন চক্র উৎপত্তির বিভিন্ন কাহিনী প্রচলিত আছে। সেগুলো হল:
১) ভগবান বিষ্ণু এই বিশ্বকে প্রতিপালন করার জন্য এমন একটি অস্ত্র চাইছিলেন যেটি হবে অস্ত্রদের ভিতর শ্রেষ্ঠ। সে জন্য ভগবান বিষ্ণু কৈলাস পর্বতে গিয়ে ভগবান শিবের আরাধনা করতেন। ভগবান বিষ্ণু অনেক অনেক মন্ত্র উচ্চারণ পূর্বক ভগবান শিবের আরাধনা করলেও ভগবান শিব দেখা দিচ্ছিলেন না। ভগবান শিবের ১০০০ নাম আছে। এর পর ভগবান বিষ্ণু শিবের ১০০০ নাম উচ্চারণ করে ভগবান শিবের আরাধনা করতে লাগলেন। প্রতিদিন ভগবান বিষ্ণু ভগবান শিবের ১০০০ নাম উচ্চারণ করতেন এবং ১০০০ পদ্মফুল ভগবান শিবের উদ্দেশ্যে অর্পণ করতেন।একদিন মহাদেব তাঁর উদ্দেশ্যে অর্পিত ১০০০ পদ্মফুলের মধ্যে থেকে একটি ফুল সরিয়ে নিলেন। বিষ্ণু বুঝতে পারলেন যে একটি পদ্মফুল কম আছে। তখন তিনি নিজের একটি চোখ উৎপাটন করলেন এবং সেটি হারানো পদ্মফুল হিসেবে অর্পণ করলেন। ভগবান শিব ভগবান বিষ্ণুর ভক্তিতে খুশি হয়ে তখন ভগবান বিষ্ণুর সামনে উপস্থিত হলেন এবং তাঁকে তখন উপহার হিসেবে সুদর্শন চক্র দান করলেন। সুদর্শন চক্র এতটাই শক্তিশালী ছিল যে সেটি ভগবান বিষ্ণুর একার জন্য ধারণ করা বেশ কঠিন ছিল। তাই ভগবান শিব তখন এটিকে তিন ভাগ করলেন, একটি ভগবান বিষ্ণুকে দিলেন, একটি দিলেন দেবী শক্তিকে এবং একটি নিজের কাছে রাখলেন। ভগবান বিষ্ণু এই চক্র দিয়ে ধর্ম প্রতিপালন করে চলেছেন। ভগবান শিবের ভগবান বিষ্ণুকে সুদর্শন চক্র দান করার এই মূর্তিকে বলা হয় চক্রপ্রদ মূর্তি। আর এই ঘটনার পর থেকে ভগবান বিষ্ণুকে বলা হয় পদ্মলোচন।
২) বিশ্বকর্মার কন্যা সন্ধ্যার বিবাহ হয় সূর্যদেবতার সাথে। সূর্যদেবের অসহনীয় তেজ এবং আলোর জন্য সন্ধ্যা তাঁর নিকটে যেতে পারতেন না । তাই সন্ধ্যা তাঁর পিতার নিকট এই বিষয়ে অভিযোগ করলে বিশ্বকর্মা সূর্যদেবকে ডেকে তাঁর তেজ এবং দীপ্তি কিছুটা কমিয়ে দেন যাতে সন্ধ্যা তাঁর নিকটবর্তী হতে পারেন। এর পর সূর্যদেব সন্ধ্যাকে নিয়ে সূর্যলোকে চলে যান। এর পর বিশ্বকর্মা সূর্যের ফেলে যাওয়া অতি দীপ্তিময় স্বর্ণস্বরূপ ধুলা দিয়ে তিনটি জিনিস তৈরি করেন। একটি হল অতি দিপ্তীময় পুস্পক রথ, দ্বিতীয়টি সুদর্শন চক্র, এবং তৃতীয়টি ভগবান শিবের ত্রিশূল।সুদর্শন চক্রের ১ কোটি তীক্ষ্ণ ফলা রয়েছে। এই ফলা দুটি সারিতে সজ্জিত হয়ে সর্বদা বিপরীত দিকে ঘুরে চলেছে।
এই চক্র দেবী সতীর দেহ বিচ্ছিন্ন করার কাজে ব্যবহৃত হয়। দেবী সতী যখন প্রজাপতি দক্ষের যজ্ঞে আত্মাহুতি দেন তখন ভগবান শিব সতীর মৃতদেহ নিয়ে প্রলয় নৃত্য শুরু করেন। তখন ভগবান শিবকে থামানোর জন্য এবং সৃষ্টিকে সংরক্ষণ করার জন্য ভগবান বিষ্ণু সতীর দেহ সুদর্শন চক্র দিয়ে ৫১ টুকরা করে ফেলেন। সতীর এই ৫১ টুকরা দেহাবশেষ ভারতবর্ষের ৫১ জায়গায় পতিত হয় যাহা আজকের দিনে পবিত্র সতীপীঠ নামে খ্যাত।
আজকের দিনে যজ্ঞ করার সময় যে হোম করা হয় সেই হোমে ভগবান সুদর্শনকে তাঁর স্ত্রী বিজয়বালীর সহিত আহবান করা হয়।
আরডি/
![]() |
সম্পাদক : সুকৃতি কুমার মন্ডল খবর প্রেরণ করুন # info.eibela@gmail.com ফোন : +8801517-29 00 02 +8801711-98 15 52 a concern of Eibela Foundation |
|