পয়সার গরম তো জীবনে অনেক দেখলেন। কিন্ত বিদ্যার এমন গরম দেখেছেন না শুনেছেন কখনও? সবটা শুনলে মাথা ঝিমঝিম করবে আপনার, হাত পাও অবশ হয়ে যেতে পারে বৈকি। এক জীবনে এত পড়াশোনা কোন রক্ত মাংসের মানুষ করতে পারেন? না পড়লে বিশ্বাস হবে না; তাও আবার সেই ভদ্রলোক যদি ভারতীয় হন!
মারাঠি এই ভদ্রলোকের নাম শ্রীকান্ত জিচকার। তার পড়াশোনার জীবনটা একবার হাল্কা করে চোখ বুলিয়ে নিন শুধু। তাহলেই বুঝবেন, ভদ্রলোক কি কাণ্ডটাই না করেছেন!
জীবন শুরু 'M.B.B.S.' ও 'M.D.'- এ' দিয়ে। এরপর 'L.L.B.' করলেন। সাথে করলেন 'International Law'-এর উপর স্নাতকোত্তর।
এরপর 'Business Management'-এর উপর 'Diploma' ; সাথে 'M.B.A.। এরপর 'Journalism' নিয়ে স্নাতক।
এতদূর পড়ার পর আপনার যখন মনে হচ্ছে, লোকটা পাগল নাকি? তখন আপনাকে বলতেই হচ্ছে, এ তো সবে কলির সন্ধ্যে। এখনো গোটা রাত বাকি।
এই ভদ্রলোকের শুধু স্নাতকোত্তর 'ডিগ্রী'ই আছে দশটা বিষয়ের উপর। স্নাতকোত্তরের বিষয়ের তালিকাটা একবার দেখুন-
(১) 'Public Administration'
(২) 'Sociology'
(৩) 'Economics'
(৪) 'Sanskrit' (ডি.লিট)
(৫) 'History'
(৬) 'English'
(৭) 'Philosophy'
(৮) 'Political Science'
(৯) 'Encient India History', 'Culture' and 'Arciolog'
(১০) 'Cytology'
উপরের যতগুলো বিষয় দেখছেন সব কটিতেই প্রথম শ্রেণীর সঙ্গে স্নাতকোত্তর এবং ২৮টি স্বর্ণপদক বিজয়ী তিনি। সব মিলিয়ে ১৯৭৩ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত প্রতি গ্রীষ্মে ও প্রতি শীতেই উনি কোন না কোন স্নাতকোত্তরের বিষয়ের পরীক্ষা দিয়ে গেছেন। ১৯৭৮ সাথে 'I.P.S.' পরীক্ষায় বসলেন তিনি এবং পাশ করলেন
কিন্তু পোষালো না চাকরীটা। ফলে সেটা ছেড়ে দিয়ে বসলেন 'I.A.S.' পরীক্ষায়। ১৯৮০ সালে উনি 'I.A.S.' হলেন। চারমাসের মধ্যে 'I.A.S.'- এর চাকরিটাও ছেড়ে দিলেন মহারাষ্ট্রের বিধান সভা ভোটে লড়বেন বলে। ১৯৮০ সালে উনি যখন বিধায়ক নির্বাচিত হলেন তখন ওনার বয়স সবে ২৫ বছর। উনি হলেন ভারতের সবচেয়ে কমবয়সী বিধায়ক। সবই হল যখন, তখন মন্ত্রী হওয়াটাই বা আর বাকী থাকে কেন? সেটাও হলেন এবং একটা কিংবা দু'টো দপ্তরের নয়, একেবারে ১৪ টা দপ্তরের। ১৯৯২ সাল নাগাদ রাজ্যসভার সদস্যও নির্বাচিত হলেন।
ওনার এই ‘সামান্য’ কয়েকটি গুণ ছাড়াও উনি-অসাধারণ চিত্রশিল্পী, পেশাদার আলোকচিত্রকর, মঞ্চাভিনেতা এবং সখের বেতার চালক।
এছাড়া তিনি জ্যোতিষশাস্ত্রেও বিশেষ পারদর্শী ছিলেন। পরে তিনি 'সম্মিলিত জাতিপুঞ্জ' ও 'ইউনেস্কো'তে ভারতের প্রতিনিধিত্ব করেছেন।
ব্যক্তিগত সংগ্রহে মাত্র ৫২,০০০ বই রয়েছে তাঁর। ‘লিমকা বুক অফ রেকর্ডস’ওনাকে 'ভারতবর্ষের সবচেয়ে শিক্ষিত ব্যক্তি'র শিরোপা দিয়েছে। ১৯৮৩ সালে তিনি ‘বিশ্বের অসামান্য দশজন তরুণ’ হিসেবে নির্বাচিত হন।
২০০৪ সালে এক পথ দুর্ঘটনায় তাঁর মৃত্যু হয়। তখন বয়স হয়েছিল মাত্র ৪৯ বছর। তার মর্মান্তিক মৃত্যুতে একটি জ্বলন্ত নক্ষত্র নিভে যায়। তবে তিনি মৃত্যুর আগে এই শিক্ষা দিয়ে যান, 'যার যত জ্ঞান ; তার অহংকার তত কম'।
নি এম/
Editor & Publisher : Sukriti Mondal.
E-mail: eibelanews2022@gmail.com