শুধু গ্রামাঞ্চলে নয়, শহর কলকাতার আনাচে-কানাচেও এমন গাছ খুঁজে পাওয়া অসম্ভব নয়, যার কাণ্ডে বাঁধা রয়েছে বান্ডিল বান্ডিল সুতো। বট বা অশ্বত্থ গাছের গায়েই সুতোর সংখ্যা বেশি। তবে, নিম বা ওই জাতীয় গাছেও বাঁধা হয় 'মনস্কামনার সুতো'। কেবল সনাতনী হিন্দু ধর্ম নয়, পির-ফকির সংস্কৃতিতে হিন্দু-মুসলমান উভয় সম্প্রদায়ই ডোর বাঁধেন গাছে। এই প্রথা এতটাই কমন যে, আমরা আজ আর তেমন বিস্মিত হই না গছের গা বেড় দিয়ে থাকা সুতো দেখলে।
কিন্তু কেন, ঠিক কী কারণে এই প্রথা? জেনে নেওয়া যাক।
সুতো ভারতীয় সংস্কৃতিতে এক অসামান্য জায়গা অধিকার করে রয়েছে। সুতো সম্পর্কের দ্যোতক, বন্ধনের দ্যোতক। আমরা কথাতেই বলি- 'সম্পর্কসূত্র', 'বন্ধনসূত্র'। রাখি জিনিসটাও আসলে রক্ষাসূত্র।
বৃক্ষ যে কোনও সংস্কৃতিরই শিকড়ের বিষয়। অতি প্রাচীন কাল থেকে বৃক্ষ দেবতাজ্ঞানে পূজিত বিশ্বের প্রায় সব সংস্কৃতিতই। ভারতের মতো দেশেব়, অশ্বত্থ কেবল তার বৃহত্ আকারের জন্য নয়, তাদের ওষধি ক্ষমতা ও আশ্রয়প্রদায়ক চরিত্রের কারণেও শ্রদ্ধেয়। আর নিমের মতো গাছের কথা আলাদা করে বলার কিছুই নেই। সহস্র রোগহারী নিমকে এদেশের মানুষ নিজোর আত্মীয় বলেই মনে করে এসেছে।
বট বা অশ্বত্থ বৃক্ষের আয়ু মানুষের চাইতে ঢের বেশি। তাই এক কালে মানুষ এদের অবিনশ্বর বলে ভাবত। তাকে ডোর পরিয়ে অনন্তের সঙ্গে নিজের মনস্কামনাকে যুক্ত করার প্রথা সম্ভবত সেই কাল থেকেই চলে আসছে বলে সমাজ-নৃতাত্ত্বিকরা জানান।
সংস্কৃতি বিশেষজ্ঞ পুপুল জয়াকর দেখিয়েছেন, ভারতীয় ঐতিহ্যে সুতো জড়িয়ে রয়েছে তাঁত, কাপড় বোনা, রং করা, ছাপাই- বস্ত্র নির্মাণের এক বিস্তৃত প্রক্রিয়ার সঙ্গে। তাঁত বোনাকে সঙ্গীতের সঙ্গেও তুলনা করা হয়। সন্ত কবীর তাঁর গানে, দোহায় বার বার নিয়ে এসেছেন সুতো আর বস্ত্রের উপমা।
সুতোকে বার বার জীবনের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। এবং জীবন যে বহমান, তা বোঝানো হয়েছে সুতোর অনন্ত প্রবাহ দিয়ে।
এই সব কারণে ভারতীয় সংস্কৃতিতে সুতো হয়ে ওঠে মনস্কামনা বা মঙ্গলকামনারও প্রতীক। বাংলায় বিপত্তারিণী পূজায় হাতে ডোর বাঁধা হয়। হিন্দু বিবাহে হাতে সুতো বাঁধার প্রথা সর্বত্রই রয়েছে। এই ভাবেই সুতোর সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে ইচ্ছা বা বাসনার অসংখ্য বর্ণ।
গাছে সুতো বাঁধার মাধ্যমে নিজের মনস্কামকে যেমন ব্যক্ত করার বিষয়টি যুক্ত। তেমনই, এই সুতোর বন্ধন একত্র রাখে প্রজন্মের পর প্রজন্মকে। মহিলাদের শুভকামনা আর মঙ্গলভাবনার প্রতীক হয়ে বৃক্ষ আর তাতে বেঁধে রাখা সুতো মনে করিয়ে দেয় শত অশান্তির মধ্যেও সুসময় বহমান, শুভকামনা বহমান।
![]() |
সম্পাদক : সুকৃতি কুমার মন্ডল খবর প্রেরণ করুন # info.eibela@gmail.com ফোন : +8801517-29 00 02 +8801711-98 15 52 a concern of Eibela Foundation |
|