সোমবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৫
সোমবার, ১৫ই বৈশাখ ১৪৩২
সর্বশেষ
 
 
মানবিক সংকটে পড়তে পারে বাংলাদেশ: গার্ডিয়ান
প্রকাশ: ১১:২৩ pm ২৪-০৭-২০২০ হালনাগাদ: ১১:২৩ pm ২৪-০৭-২০২০
 
এইবেলা ডেস্ক
 
 
 
 


আম্পানসহ কয়েক প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের পাশাপাশি দেশে করোনা ভাইরারেস সংকটের মধ্যেই ভয় দেখাচ্ছে বন্যা। বলা হয়েছে- এবারের বন্যা দীর্ঘমেয়াদি হতে পারে, যা কয়েক দশকেও বাংলাদেশে ঘটেনি। বাংলাদেশে ১৯৮৮ সালের পর এবারের বন্যাই সবচেয়ে দীর্ঘায়িত হতে পারে।

এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ চরম মানবিক সংকটে পড়তে পারে বলে এক প্রতিবেদনে তুলে ধরেছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ান।

বাংলাদেশের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের হিসেবে ইতোমধ্যে দেশের এক তৃতীয়াংশ এলাকা বন্যা কবলিত হয়েছে জানিয়েছে গার্ডিয়ান বলছে, বন্যা মোকাবিলায় বাংলাদেশের প্রস্তুতি অতীতের চেয়ে এবারে অনেক ভালো ছিল। তবে স্থানীয় ও জাতীয় সংকটের সমন্বয়ে বন্যা কবলিত এলাকার মানুষ মারাত্মক অভাবের মধ্যে পড়তে পারে।

গত মে মাসে বাংলাদেশ, ভারত ও নেপালের ওপর দিয়ে বয়ে যায় সুপার সাইক্লোন আম্পান। দুর্যোগটি মোকাবিলায় নেওয়া প্রস্তুতির জন্য এসব দেশ জাতিসংঘের প্রশংসা কুড়ায়। তারপরও এই সাইক্লোনে এসব দেশে প্রায় ৫৫০ জন মানুষের মৃত্যু হয়। আর আক্রান্ত হয় এসব দেশের প্রায় ৯৬ লাখ মানুষ। ওই ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার মধ্যেই বাংলাদেশে শুরু হয়েছে মৌসুমী বন্যা। যা এবছর দীর্ঘায়িত হতে পারে বলে সতর্ক করেছে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা।

বাংলাদেশি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা (এনজিও) কোস্ট-এর নির্বাহী পরিচালক রেজাউল করিম চৌধুরী গার্ডিয়ানকে জানিয়েছেন, অতীতের চেয়ে এবারে বাংলাদেশের বন্যা মোকাবিলার প্রস্তুতি ভালো ছিল। তবে তারপরও বন্যা কবলিত এলাকার মানুষ মারাত্মক অভাবের মধ্যে পড়তে পারে। এজন্য তিনি বিদ্যমান স্থানীয় ও জাতীয় সংকটের সমন্বয়কে দায়ী করেন। তিনি বলেন, ২৫টি রাষ্ট্রায়ত্ত্ব পাটকল বন্ধের সরকারি সিদ্ধান্ত এবং কোভিড-১৯ মহামারির কারণে ইতোমধ্যে মানুষের আয় কমে গেছে। এসব পাটকলের অধিকাংশই বন্যা কবলিত উত্তরাঞ্চলে অবস্থিত বলে জানান তিনি।

রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, ‘চার মাস ধরে দেশে লকডাউন চলছে আর এর মারাত্মক প্রভাব রয়েছে। গ্রামীণ অঞ্চলের আয়ের প্রায় ৪০ শতাংশই আসতো শহর এলাকা থেকে। আর সেই অবস্থাতে হঠাৎ করেই শ্রমিক ও রিকশাওয়ালারা বাড়িতে টাকা পাঠানো বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছেন।’ তিনি বলেন, ‘প্রায় এক তৃতীয়াংশ জনগোষ্ঠী দারিদ্র সীমার নিচে চলে গেছে। খাদ্য নিরাপত্তা ও জ্বালানি ক্রয়ের ওপর এর প্রভাব রয়েছে, এই জটিল পরিস্থিতি আমাদের পার করতে হবে।’

কোস্ট-এর নির্বাহী পরিচালক রেজাউল করিম চৌধুরী জানান, মহামারি মোকাবিলা করতে গিয়ে স্থানীয় সংস্থাগুলোর তহবিলে টান পড়তে শুরু করেছে আর সেকারণে জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে। বিশেষ করে সেইসব কৃষকদের সহায়তায় এগিয়ে আসতে হবে যাদের ফসল আগস্টে ঘরে তোলার আগেই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

জাতিসংঘ বলছে, আগাম তথ্য ও পূর্ভাবাস বিশ্লেষণ করে তারা জীবিকার ক্ষয়ক্ষতি প্রাক্কলনের চেষ্টা করছে। যাতে করে সময়ের আগেই কোথায় সহায়তা দরকার তা নির্ধারণ করা যায়। এই প্রাক্কলনের ভিত্তিতেই জাতিসংঘের রিজার্ভ তহবিল থেকে ইতোমধ্যে গত সপ্তাহে ৫২ লাখ ডলারের ত্রাণ ছাড় করা হয়েছে। নগদ অর্থ, পরিচ্ছন্নতা ও স্বাস্থ্য সরঞ্জাম এবং পানির ক্ষয়ক্ষতি থেকে কৃষকের উপকরণ রক্ষার সরঞ্জামের আকারে এসব ত্রাণ ছাড় করা হয়েছে।

জাতিসংঘের মানবিক বিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল এবং জরুরি ত্রাণ সমন্বয়ক মার্ক লোকক বলেছেন, দুর্যোগ আঘাত হানার পর সংস্থাটির আর বিস্মিত হওয়া চলবে না। তিনি বলেন, ‘সংকট আঘাত হানার আগেই কিছু করা গেলে আরও বেশি জীবন রক্ষা করা যায় এবং কম অর্থের ক্ষতি হয়। এছাড়া এটি আমাদের সহায়তা দেওয়া মানুষের বেশি কাজে আসে।’

লোকক বলেন, ‘যদি জানতে পারি বন্যা আঘাত হানতে যাচ্ছে তাহলে আমরা কেন প্লাবন আসার আগেই নদী তীরবর্তী জনগোষ্ঠীর প্রাণী সম্পদ ও সরঞ্জাম রক্ষার মতো অর্থপূর্ণ সহায়তা দেবো না। এর বদলে কেন আমরা তাদের সবকিছু হারানোর অপেক্ষা করবো, আর তারপরে চেষ্টা এবং সহায়তা দেবো?’

ক্যাম্পেইন গ্রুপ রিভারাইন পিউপিল এর প্রতিষ্ঠাতা শেখ রোকন বলেন, বাংলাদেশের মানুষের জীবনের জন্য মৌসুমি বৃষ্টিপাত গুরুত্বপূর্ণ। এতে নদ-নদীর পানির লেভেল পূর্বের অবস্থায় ফিরে আসে আর মৌসুমি জলাভূমিগুলো প্রাণ ফিরে পায়। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে স্থানীয় জনগোষ্ঠীগুলোর জীবন কঠিন হয়ে পড়ছে।

তিনি বলেন, ‘নদী ভাঙন পরিস্থিতিকে আরও খারাপ করে ফেলেছে। সবকিছু হারানোর পরও তারা বহুদিন ধরে লড়াই চালানোর আশা জিইয়ে রেখেছে। এই বছর ব্রহ্মপূত্র এবং তিস্তা নদীর অববাহিকা এলাকার নদী নির্ভর জনগোষ্ঠীগুলো মারাত্মক ভাঙনের মুখে পড়েছে।’

শেখ রোকন বলেন, ‘নদী নির্ভর একটি ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠী বেদে সম্প্রদায় নদীতে নৌকার ওপরে বসবাস করে। তাদের জীবন ও জীবিকাকে কঠিন করে তুলেছে বন্যা।’ 

রিভারাইন পিউপিল এর প্রতিষ্ঠাতা শেখ রোকন বলেন, ‘সাধারণত জনগোষ্ঠীগুলো প্রস্তুতির জন্য খুবই কম সময় পায়। সাধারণত এই প্রস্তুতির মধ্যে থাকে নিজেদের প্রয়োজনীয় সরঞ্জামগুলো বাঁধ দিয়ে সুরক্ষিত এলাকায় সরিয়ে নেওয়া।’

বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির (ডব্লিউএফপি) নির্বাহী পরিচালক ডেভিড বেসলি বলেন, পূর্বাভাসের ভিত্তিতে কাজ করার পরিকল্পনায় উন্নয়ন ঘটানো হলে পরিবারগুলো দীর্ঘমেয়াদে সহায়তা পাবে।

তিনি বলেন, ‘বছরের পর বছর ধরে বাংলাদেশ বন্যায় বিধ্বস্ত হয়েছে। পানি কেবল মানুষের বাড়ি এবং জীবন ভাসিয়ে নিয়ে যায় না এর সঙ্গে বাংলাদেশের মানুষের উন্নতি ও আশাও ভাসিয়ে নিয়ে যায়।’

তিনি বলেন, ‘এই ধরণের দুর্যোগ থেকে তাদের রক্ষায় এবং প্রস্তুত করতে স্থানীয় জনগোষ্ঠীগুলোর সরঞ্জাম সক্ষমতা বাড়ানো কতোটা গুরুত্বপূর্ণ তা আমি যথেষ্ট জোর দিয়ে প্রকাশ করতে সক্ষম নই।’

নি এম/

 
 
 
   
  Print  
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
আরও খবর

 
 
 

 

Editor & Publisher : Sukriti Mondal.

E-mail: eibelanews2022@gmail.com

a concern of Eibela Ltd.

Request Mobile Site

Copyright © 2025 Eibela.Com
Developed by: coder71