সাহিত্য ও সংস্কৃতি :: আধুনিক বাংলা গদ্য সাহিত্যের প্রথম মুসলিম রূপকার, বিষাদসিন্ধু ও জমিদার দর্পণখ্যাত মীর মশাররফ হোসেনের আজ ১০৫তম মৃত্যুবার্ষিকী। রাজবাড়ী জেলার বালিয়াকান্দি উপজেলার নবাবপুর ইউনিয়নের পদমদী গ্রামে অবস্থিত মীর মশাররফ হোসেন স্মৃতিকেন্দ্রে মীর মশাররফ হোসেন সাহিত্য পরিষদ, মীর মশাররফ হোসেন বিশ্ববিদ্যালয় কলেজসহ স্থানীয় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তাঁর সমাধিতে পুষ্পস্তবক প্রদান, আলোচনা সভা ও মিলাদ মাহফিলসহ নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। তবে সরকারিভাবে কোনো কর্মসূচি নেওয়া হয় নাই।
মীর মশাররফ হোসেনের নবম পূর্ব পুরুষ সৈয়দ সাদুল্লা ষোড়শ শতাব্দীতে বাগদাদ নগরী থেকে তাঁর নিখোঁজ পিতার সন্ধানে এসে বালিয়াকান্দির পদমদী নিকটবর্তী শেকাড়া গ্রামে তাঁর গুরুপুত্র শাহ্পালোয়ানের মেয়েকে বিয়ে করে এখানেই স্থায়ী বসতি স্থাপন করেন। সৈয়দ সাদুল্লার পরবর্তী বংশধরগণ মীর উপাধি প্রাপ্ত হন এবং শেকাড়া, দক্ষিণবাড়ী ও পদমদী গ্রামে বিস্তার লাভ করেন। সৈয়দ সাদুল্লার উত্তর প্রজন্ম, মীর মশাররফ হোসেনের পিতামহ মীর ইব্রাহিম হোসেন ব্রিটিশ শাসনামলের সূচনা লগ্নে পিতার সঙ্গে অভিমান করে পদমদীর গৃহ ত্যাগ করে বর্তমান কুষ্টিয়া জেলার কুমারখালীর সাঁওতা গ্রামের বিধবা জমিদার আনার খাতুনের জমিদারি লাভ করেন এবং পর্যায়ক্রমে লাহিনী পাড়া গ্রামে নিবাস স্থাপন করেন। ১৮৪৭ সালের ১৩ই নভেম্বর এই লাহিনী পাড়া গ্রামেই মীর মশাররফ হোসেন জন্ম গ্রহণ করলেও তাঁর পূর্বপুরুষের বাস্তু ভিটা পদমদী গ্রামে তাঁর জ্ঞাতি ভ্রাতা নবান মীর মহম্মদ আলী প্রতিষ্ঠিত পদমদী ইংরেজী বাংলা স্কুলে লেখা পড়া করেন। পরবর্তীকালে তিনি এই নবাব স্টেটেই চাকরি গ্রহণ করেন এবং সাহিত্য সাধনায় মনোনিবেশ করেন। পদমদীতে বসেই তাঁর সাহিত্য জীবনের শ্রেষ্ঠ কীর্তি বিষাদ সিন্ধু, উদাসীন পথিকের মনের কথাসহ বিভিন্ন গ্রন্থ রচনা করেন। তাঁর সাহিত্য কর্মের উল্লেখযোগ্য স্থান দখল করে রয়েছে পদমদী জীবনের নানা স্মৃতি ও আলেখ্য।
পদমদী গ্রামের পাশ দিয়ে প্রবাহিত চন্দনা নদী পথেই তিনি গড়াই নদী হয়ে কুমারখালীর লাহিনী পাড়া গ্রামে যাতায়াত, তাঁর সাহিত্য গুরু কাঙ্গাল হরিনাথ মজুমদারের “গ্রামবার্তা প্রকাশিকা” পত্রিকায় লেখালেখি, মহাত্মা লালন ফকিরের ছেঁউড়িয়া গ্রামে যাতায়াত ও যোগাযোগ রক্ষা করতেন।
মধ্যযুগের পুথি সাহিত্য শাসিত রুচির বিপরীতে মীর মশাররফ হোসেন ১৯ শতকের শেষার্ধে প্রথম আধুনিক বাংলা গদ্য সাহিত্য রচনার সূচনা করেন। নীল বিদ্রোহের উপরে “জমিদার দর্পণ” সহ প্রায় ২৫টি গদ্য গ্রন্থ রচনা করে তিনি বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে প্রথম আধুনিক মুসলিম গদ্য শিল্পীর মর্যাদা লাভ করেন। তাঁর সম্পাদিত “হিতকরী” (১৮৯০) পত্রিকায় বাউল শিরোমনি লালন ফকিরের উপরে প্রথম লালন জীবন দর্শন মহাত্মা লালন ফকির প্রকাশিত হয়। জীবনের শেষ দিনগুলোও রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দির পদমদীতে অতিবাহিত করেন। ত৭ার সহধর্মিণী বিবি কুলসুমও এখানে মারা যায়। তাঁর পিতা মীর মোয়াজ্জেম হোসেনসহ পরিবারের অন্য সদস্যদেরও পদমদীর নবাব বাড়ির পারিবারিক কবরস্থানে সমাহিত করা হয়। তিনি ১৯১১ সালের ১৯ ডিসেম্বর পদমদীতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
মীর মশাররফ হোসেন পদমদী স্টেটের ১০৪ একর জমি ওয়াকফ করে যান শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের জন্য যা আজ সম্পূর্ণ বেদখল হয়ে গেছে। মীর মশাররফ হোসেন সাহিত্য পরিষদের পক্ষ থেকে উক্ত সম্পত্তি দখলমুক্ত করে মীর মশাররফ হোসেন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবি জানান হয়েছে।
এইবেলাডটকম/নীল
![]() |
সম্পাদক : সুকৃতি কুমার মন্ডল খবর প্রেরণ করুন # info.eibela@gmail.com ফোন : +8801517-29 00 02 +8801711-98 15 52 a concern of Eibela Foundation |
|