মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি চান বীরাঙ্গনা চিনুরানী দাস
প্রকাশ: ০১:২৫ pm ১৯-১২-২০১৫ হালনাগাদ: ০১:২৫ pm ১৯-১২-২০১৫
ময়মনসিংহঃ বাধীনতার ৪৪ বছরেও মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পাননি ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলার চরকামারিয়া গ্রামের বীরাঙ্গনা চিনুরানী দাস (৬৬)। জীবন সায়াহ্নে মুক্তিযোদ্ধার খেতাব নিয়ে চিতায় যেতে চান এ বীরাঙ্গনা। এ ব্যাপরে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার শেখ সেলিম আহম্মেদ জানান, বীরাঙ্গনা চিরুরানী দাসের নাম মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গেজেটে অন্তর্ভুক্তি জন্য মুক্তিযোদ্ধাবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে একাধিকবার আবেদন করেও কাজে আসছে না।
সরেজমিনে গিয়ে কথা হয় চিনুরানী দাসের সঙ্গে। উপজেলার চরআলগী ইউনিয়নের চরকামারিয়া গ্রামের প্রমোদ চন্দ্র দাসের স্ত্রী বীরাঙ্গনা চিনুরানী দাসের বসবাস। বৃদ্ধ স্বামী ও আর চার ছেলে নিয়ে নানা অভাব অনটনের মধ্যে দিয়ে কোনো রকম খেয়ে না খেয়ে দিন কাটছে তার। ১৯৭১ সালে তার উপর চালানো পাকবাহিনীর নির্যাতনের ভয়াল সেই স্মৃতিগুলো আজও তার চোখের সামনে ভেসে উঠে। মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে উপজেলার হাতিখলা গ্রামে বাবা কৃষ চন্দ্র দাস সহ পরিবারের ১০ জন লোক বসবাস করতেন। তখন তার বয়স ২২ বছর। হঠাৎ এক দিন দুপুর বেলায় সালটিয়া ইউনিয়নের ধামাইল গ্রামের বকুল রাজাকার পাকবাহিনী নিয়ে বাড়িতে হামলা চালায়। জ্বালিয়ে দেয় ঘরবাড়ি ও গোলার ধান। লোকজন তখন ভয়ে ছোটাছুটি করছিল। এক পর্যায়ে ধামাইল গ্রামের বকুল রাজাকারের নেতৃত্বে হানাদাররা তার ওপর চালায় পাশবিক নির্যাতন। রক্ষা করতে এসে পাকবাহিনী ও বকুল রাজাকারের হাতে গুলিতে নিহত হয় বড় ভাই ডা. রতনেশ্বর দাস। এ সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হয় আরেক বড় ভাই জনার্দন দাস।
পরবর্তীতে নিজ বসত ছেড়ে পরিবার-পরিজন নিয়ে আশ্রয় নেয় পার্শ্ববর্তী ভালুকা উপজেলার কাচিনা এলাকায়। ১১ নম্বর সেক্টরে মেজর আফছার বাহিনীর সঙ্গে যোগ দিয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। মেজর আফছার বাহিনীর সঙ্গে ভালুকার বিরুনিয়া ও কাচিনাসহ বেশ কয়েকটি সম্মুখ যুদ্ধে অংশ নেন চিনুরানী দাস। দেশ স্বাধীন হয়েছে আজ ৪৪ বছর। কিন্তু এখনও মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি পাননি এ বীরাঙ্গনা চিনুরানী দাস। ১৯৭১ সালের পাকবাহিনীর সেই বর্বর নির্যাতনের কথা এখনও মনে পরলে কান্নায় ভেঙে পড়েন চিনুরানী দাস। চিনুরানীর স্বামী প্রমোদ দাসের অভিযোগ, দেশ স্বাধীন হওয়ার পর গফরগাঁও উপজেলায় অনেক ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা হয়েছে। কিন্তু বহু আবেদন-নিবেদন করার পরও পাকবাহিনীর হাতে নির্যাতনের শিকার বীরাঙ্গনা স্ত্রীর নাম মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে অন্তর্ভুক্তি হয়নি স্বাধীনতার ৪৪ বছরে। তাই সরকারের কাছে বীরাঙ্গনা স্ত্রী চিনুরানী দাসের নাম মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় অন্তর্ভুক্তির দাবি জানান তিনি।
এইবেলা/ এস এস ওয়াই