রবিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৫
রবিবার, ১৪ই বৈশাখ ১৪৩২
সর্বশেষ
 
 
শিক্ষা ব্যবস্থা স্বাভাবিকীকরণের কিছু পদক্ষেপ 
প্রকাশ: ০৪:২৬ pm ০৪-১০-২০২০ হালনাগাদ: ০৪:২৬ pm ০৪-১০-২০২০
 
এইবেলা ডেস্ক
 
 
 
 


করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে গত মার্চ মাসের শেষভাগ হতে আমাদের দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। এমতাবস্থায় দেশের শিক্ষাব্যবস্থার যেমন ক্ষতি হচ্ছে, তেমনি অনেক ব্যক্তি মালিকানাধীন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে। কিন্তু করোনা ভাইরাসের ঝুঁকি নিয়ে সরকার কিছুতেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার পক্ষে নয়, কারণ ইতোমধ্যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দিয়ে উন্নত বিশ্বের কয়েকটি দেশে করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব বেড়ে গিয়েছিল। তাই হয়তো সার্বিক বিষয় বিবেচনা করে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত আবার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছুটি বর্ধিত করা হয়েছে, তবে এর মধ্যে স্থগিত থাকা উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার রুটিন ও একাদশ শ্রেণির অনলাইন ক্লাস আরম্ভের বিষয়ে দিক নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। কিন্তু ইতোমধ্যে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও স্কুল–কলেজে অনলাইন ক্লাস চালু হলেও নানাবিধ কারণে কার্যত তা শিক্ষার্থীদের জন্য ফলপ্রসূ হয়নি। তাই সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করলে স্বাস্থ্যবিধি মেনে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার কোন বিকল্প নেই।

করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব রোধ করতে এপ্রিলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি সকল সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানেই সাধারণ কিছু ঘোষণা করা হয়। কিন্তু নির্দিষ্ট একটা সময় পর সরকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ব্যতীত সকল প্রতিষ্ঠানই খুলে দেয়, তখন অবশ্য দেশের অনেকেই ধারণা করেছিল এই খোলার চৌদ্দ দিন পর হতে বাংলাদেশে ব্যাপক সংক্রমণ দেখা দিবে। কারণ শিল্প কারখানায় যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মানা সম্ভব নয়, তবে আশার কথা হচ্ছে সে সংক্রমণ আর হয়নি। ফলে জনজীবন এখন অনেকটা স্বাভাবিক; অনেক কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থীও এখন শহরগুলোতে বিভিন্ন মেসে অবস্থান করে তাদের ব্যক্তিগত কাজগুলো করে চলেছেন। তাহলে প্রশ্ন উঠা স্বাভাবিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলতে অসুবিধা কোথায়? আমাদের মতো জনবহুল দেশে অসুবিধা অবশ্যই আছে, তবে সঠিক কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করলে এ অসুবিধা বোধ করি অনেকাংশে কমিয়ে আনা সম্ভব এবং ঝুঁকি কমিয়ে প্রয়োজনবোধে পরীক্ষামূকলভাবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চালু করাও সম্ভব; অতঃপর সংক্রমণ বৃদ্ধি পেলে তখন না হয় অন্য সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা যেতে পারে।

বাংলাদেশে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর স্তর ভেদে ঝুঁকির ভিন্নতা রয়েছে। যেমন: বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যেখানে বড় সমস্যা হলগুলোর গণরুম সেখানে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সমস্যা শিশুদের সচেতনতা। তাই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ভেদে ব্যবস্থা গ্রহণেও ভিন্নতা থাকবে। প্রথমত, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীরা সাধারণত পরিবারে থেকেই পড়াশোনা করেন। এক্ষেত্রে সরকারকে যে বিষয়টি ভাবতে হবে তা হলো, শ্রেণি কক্ষে যেন কিছুতেই ভিড় তৈরি না হয়। এ লক্ষ্যে শিক্ষার্থীদের ক্লাস রুটিন অর্ধেক করে দুটো গ্রুপে ভাগ করে ক্লাস নেওয়া যেতে পারে। অর্থাৎ একটি শ্রেণিতে পঞ্চাশ জন শিক্ষার্থী থাকলে পূর্বে যেখানে প্রতিদিন তাদের সকাল দশটা হতে বিকাল চারটা পর্যন্ত ছয় ঘণ্টায় ছয়টি ক্লাস হতো; সেখানে এখন ওই শ্রেণিতে পঁচিশ জনের দুটো গ্রুপ করে (জোড়–বিজোড় রোল নম্বরের ভিত্তিতে গ্রুপ দুটো হতে পারে) সকাল দশটা হতে দুপুর একটা পর্যন্ত তিন ঘণ্টা একটা গ্রুপের তিনটি ক্লাস হবে এবং পরবর্তী গ্রুপটি পরের তিন ঘণ্টা ক্লাস করবে। এতে করে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করা সম্ভব হবে, তবে প্রাথমিকের বাচ্চাদের সচেতনতার জন্য একটু বেশি উদ্বুদ্ধ করতে হবে। বিশেষ সর্তকতা হিসেবে শ্রেণি কক্ষে মাস্ক পরিধান বাধ্যমূলক করতে হবে, প্রতিটা শ্রেণি কক্ষে জীবাণুনাশক মিশ্রিত পানির স্প্রে রাখতে হবে এবং শিক্ষার্থীরা ক্লাসে প্রবেশ ও বাহির হওয়ার সময় তা হাত-পায়ে স্প্রে করবে, স্কুল প্রাঙ্গণে খোলা খাবারের দোকানগুলো আপাতত বন্ধ রাখতে হবে। উপরোক্ত উপায়ে ক্লাস একটু কম হলেও কিছু তো হবে। প্রবাদ আছে, নাই মামার থেকে কানা মামা অনেক ভাল। দ্বিতীয়ত, কলেজগুলোতেও একই নিয়মে ক্লাস চালু করতে হবে। তবে অনেক কলেজ শিক্ষার্থী পরিবারের বাহিরে হোস্টেলে কিংবা মেসে থেকে পড়াশোনা করেন, এক্ষেত্রে হোস্টেলে বা মেসে তাদের নিজেদের মতো করে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সচেতন থাকতে হবে। কারণ হোস্টেল কিংবা মেসে স্বাস্থ্যবিধি মেনে থাকা সম্ভব, এ মুহূর্তে অসংখ্য কর্মজীবী সাধারণ মানুষ ও শিক্ষার্থী এভাবেই মেসে কিংবা হোস্টেলে অবস্থান করছেন। তবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে এইচএসসি শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা সম্পন্ন করতে কলেজগুলোতে যদি জায়গা সংকুলান না হয়, সেক্ষেত্রে বিভিন্ন স্কুলের শরণাপন্ন হওয়া যায় এবং পরীক্ষা দিনে সেখানে পরীক্ষা অনুষ্ঠান করা যায়। 

সর্বশেষ করোনাকালীন ছুটিতে যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে তা হলো– বিশ্ববিদ্যালয়। কারণ দীর্ঘ এই ছুটিতে তৈরি হচ্ছে সেশনজট, আবার অনেক শিক্ষার্থীর পরীক্ষা আটকে আছে, কারো-বা রেজাল্ট, নিয়োগ পরীক্ষাগুলো বন্ধ রয়েছে, কমে আসছে সরকারি চাকরির বয়স, শিক্ষার্থীদের উপার্জনক্ষম দিকগুলোও বন্ধ রয়েছে। সার্বিক বিষয় বিবেচনায় বিশ্ববিদ্যালয় খোলার কোন বিকল্প নেই। তবে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সব থেকে বেশি ঝুঁকির জায়গাটি হচ্ছে হলগুলোর গণরুম এবং দলবদ্ধভাবে বিভিন্ন রাজনৈতিক বা অরাজনৈতিক প্রোগ্রামে অংশ গ্রহণ করা। তবে সঠিক পরিকল্পনায় এ ঝুঁকিগুলো কাটিয়ে উঠা সম্ভব। এ লক্ষ্যে গণরুমের সমস্যা সমাধানকল্পে কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করা যেতে পারে। যেমন– প্রথমত, গণরুমে চাপ কমাতে ক্যাম্পাসের বাহিরে চুক্তি ভিত্তিক বিভিন্ন সরকারি বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে অস্থায়ীভাবে অতিরিক্ত শিক্ষার্থীদের থাকার ব্যবস্থা করা যেতে পারে। করোনা ভাইরাস আক্রমনের শুরুতে সরকার যেমন বিভিন্ন ভাড়া প্রতিষ্ঠানে অস্থায়ী হাসপাতাল তৈরি করে রেখেছিল, অনেকটা সেরকম। দ্বিতীয়ত, হলগুলোর টিভি রুম, ইনডোর গেম রুম, গেস্ট রুম, বিভিন্ন সংগঠনের রুম এবং অন্যান্য অপ্রয়োজনীয় রুমগুলোতে আপদকালীন আবাসন ব্যবস্থা করে গণরুমের চাপ কমানো যায়। তৃতীয়ত, গণরুমে সাধারণত প্রথম ও দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীরা বেশি অবস্থান করেন। তাই অতিরিক্ত শিক্ষার্থীদের অস্থায়ী আবাসন ব্যবস্থা করতে না পারলে আপাতত প্রথম ও দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষা কার্যক্রম স্থগিত রাখা যায়। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন রাজনৈতিক এবং অরাজনৈতিক সংগঠনগুলোর প্রোগ্রাম বা অনুষ্ঠানগুলো আপাতত বন্ধ রাখা, যেগুলোতে সাধারণত জনসমাগম হয়। অপরদিকে, বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস ও পরীক্ষাগুলো পূর্বে উল্লেখিত স্কুল-কলেজের নিয়মে নেওয়া যেতে পারে। তবে এক্ষেত্রে বিশেষ সর্তকতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে যেসকল শিক্ষার্থীদের ডায়াবেটিস, হার্ট ও কিডনির সমস্যা সহ করোনা ভাইরাসের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত অন্যান্য রোগগুলো রয়েছে, তাদের বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল হতে পরীক্ষা করে কিংবা নির্ভরযোগ্য কোন মেডিকেল সার্টিফিকেট দেখে বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক তত্ত্বাবধানে অনলাইনে ক্লাস করার ব্যবস্থা করা যেতে পারে।

সর্বোপরি, করোনা ভাইরাস পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে এখনো অনেক দেরি। তাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে, করোনা মুক্ত সকালটির অপেক্ষায় বসে না থেকে অতিসত্বর সেই পন্থা অবলম্বন করা, যাতে করে আগামীদিনের ভোরটা সুন্দর হয়। অতএব এ পন্থাগুলো অবলম্বন করে সরকার পরীক্ষামূলকভাবে শিক্ষা-কার্যক্রম আরম্ভ করে ফলাফলটা দেখতে পারেন, যেটা ইতোমধ্যে বিভিন্ন দেশ করেছে। উদাহরণস্বরূপ, ‘প্রতিবেশী দেশ ভারতে আগামী ১৫ অক্টোবর হতে শর্ত সাপেক্ষে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলছে’। তথাপি যদি বোঝা যায় এতে করে অবস্থার অবনতি হচ্ছে, তখনি আবার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা যেতে পারে। তবে আশার কথা হচ্ছে, আমাদের দেশের অন্যান্য সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে তেমনটা করা লাগেনি।

নিউটন মজুমদার
লেখক এবং কলামিস্ট

 
 
 
   
  Print  
 
 
 
 
 
 
 
 
আরও খবর

 
 
 

 

Editor & Publisher : Sukriti Mondal.

E-mail: eibelanews2022@gmail.com

a concern of Eibela Ltd.

Request Mobile Site

Copyright © 2025 Eibela.Com
Developed by: coder71