আজ কাল ইলেক্ট্রনিক্স ডিভাইসের যুগে বাচ্চারা মোবাইল, ল্যাপটপ গেইমস ইত্যাদি নিয়েই বেশি ব্যস্ত থাকতে পছন্দ করে। গেইমের একেকটা লেভেল পার হওয়ার তুলনায় তাদের কাছে বই পড়া, মুখস্ত করা ইত্যাদি একেবারেই পানশে লাগে। অন্য দিকে মন পরে থাকলে পড়ায় মনোযোগ ধরে রাখা যায় না। তাছাড়া একটানা বসে পড়তেও ভালো লাগে না ঘন্টার পর ঘন্টা। কিন্তু বাবা মা হিসেবে আমরা সন্তানদের পড়ায় মনোযোগী করে তুলতে কিছু সাহায্য করতে পারি। আসুন জেনে নেই কিভাবে তাদের পড়ায় আরো মনোযোগী করে তোলা যায়।
সন্তানের পড়ালেখায় মনোযোগী করার উপায়
১. পড়ার জন্য একটি সহজ রুটিন তৈরি করে দিন: এই রুটিন বাচ্চাদের পড়ার সময় নিশ্চিন্ত থাকতে সাহায্য করবে। রুটিন থাকার কারণে অতিরিক্ত সময় ধরে পড়ার চিন্তা থাকবে না বা কখন উঠবো পড়া থেকে এই চিন্তাও করা লাগবে না। রুটিনে প্রতি ৪৫মিনিট থেকে ১ ঘন্টা পরপর একটু ব্রেক এর ব্যবস্থা করলে এক টানা পড়ার একঘেয়েমি কাজ করবে না।
২.পড়ার জন্য একটি শান্ত ও আরামদায়ক জায়গার ব্যবস্থা করে দিন:
পড়ার টেবিল একটু বড় হলে ভালো হয় যাতে বই খাতা ছড়িয়ে আরাম করে পড়া যায়। পড়ার সময় যা যা প্রয়োজন যেমন পেন্সিল, কলম, রাবার, শার্পনার, স্কেল ইত্যাদি পড়ার টেবিলে হাতের কাছে থাকতে হবে এবং সবচেয়ে প্রয়োজনীয় হলো পড়ার টেবিল এমন রুমে বা জায়গায় রাখতে হবে যেখান দিয়ে বাসার সবাইকে প্রয়োজনে বার বার যাতায়াত করতে না হয়। কারণ পাশ দিয়ে কেও গেলে কথা বলে পড়ায় মনোযোগের ব্যাঘাত সৃষ্টি করতে পারে। অনেকক্ষণ বসে পড়লে পিঠ ব্যথা করতে পারে বলে পিছের কাছে একটা কুশান রাখা যেতে পারে। অনেকের পড়তে বসলে খুদা পায় এজন্য হালকা স্ন্যাক্স, যেমন বিস্কুট, চানাচুর ইত্যাদি টেবিলে রাখা যেতে পারে।
৩. পড়ার সময় সকল ডিভাইস বা এমন কিছু যা মনোযোগ নষ্ট করে তা দূরে সরিয়ে ফেলুন: এভাবে পড়ায় মনোযোগ দেয়া খুবই কষ্টকর যদি বাচ্চার এক চোখ থাকে টিভির দিকে বা কান থাকে পাশের রুমে কি কথা হচ্ছে বা টিভির সাউন্ডের দিকে। তাই পড়ার সময় মনোযোগ নষ্ট করতে পারে এমন জিনিস দূরে রাখা বা সরিয়ে রাখা উচিৎ।
৪. সহজে মুখস্থ হওয়ার জন্য কিছু উপায় অবলম্বন করতে পারেন:
বাচ্চারা যাতে সহজেই পড়া বুঝে ও মুখস্থ করতে পারে সে জন্য কিছু উপায় অবলম্বন করতে পারেন। যেমন, বাচ্চা যদি ছোট হয় তবে পড়া যাতে সহজে বুঝে এজন্য গল্পের মাধ্যমে বা ছবি এঁকে পড়া বুঝাতে পারেন। যাতে পড়তে মজা লাগে এবং পড়া বোঝা না লাগে।
নোট করার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। নোট করার সময় বিভিন্ন পয়েন্ট কালার পেন দিয়ে লিখলে সহজে চোখে পরবে, দেখতেও ভালো লাগবে। প্রতিদিন কি শিখেছে তা আপনাকে একবার এমনভাবে বুঝাতে বলবেন যেন আপনি ছাত্র ও আপনার সন্তান শিক্ষক। এতে সারাদিনের পড়া একবার রিভিশন দেয়া হয়ে যাবে।
যা পড়লো তা থেকে কুইজের ব্যবস্থা করতে পারেন।
পড়া মনে রাখার সবচেয়ে কার্যকর উপায় হচ্ছে যা পড়বে তা সাথে সাথে লিখে ফেলতে হবে। এবং লেখার সময় জোরে জোরে বলে লিখতে হবে। বাচ্চাদের মধ্যে ছোটবেলা থেকেই এই অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।
৫. প্রয়োজনে পুরষ্কারের ব্যবস্থা করতে পারেন: বাচ্চারা সহজে পড়তে বসতে চাইনা। যেদিন অনেক পড়া বাকি কিন্তু পড়তে চাচ্ছে না আপনার সন্তানের জন্য সেদিন পুরষ্কারের ব্যবস্থা করতে পারেন। পুরষ্কার অনেক ধরনের হতে পারে, যেমন: আজ যদি ৩০ মিনিট বেশি পড় তাহলে কাল ৩০ মিনিট বেশি খেলতে দিবো বাইরে। বা যদি ৬টার মধ্যে এই পড়াটা শেষ করতে পারো তবে বিকালে তোমার প্রিয় নাস্তা বানাবো ইত্যাদি।
তবে অবশ্যই পুরষ্কার হিসেবে চিপ্স, চকলেট বা দামী খেলনা ইত্যাদি দিবেন না যা ক্ষতিকর। এগুলো পুরষ্কার হিসেবে দিলে বাচ্চারা এগুলোকে ভালো ভাবতে থাকবে যা ভালো কাজের ফলে পাওয়া যায়। কিন্তু সত্যিকার অর্থে এসব ক্ষতি ছাড়া ভালো কিছু করে না।
৬.পড়তে যাতে বোর না লাগে তাই আরো কিছু জিনিস মাথায় রাখতে হবে: এক বসায় একটানা পড়ে একটা চ্যাপ্টার শেষ করা বিরক্তিকর। তাই ভাগ ভাগ করে চ্যাপ্টার পড়া শেষ করা যেতে পারে। পড়ার মাঝে মিনিমাম ৪৫ মিনিট পর একবার ব্রেক দিতে হবে নয়তো এতক্ষণ মনোযোগ ধরে রাখা কষ্ট। নিজের যোগ্যতা সম্পর্কে আত্মবিশ্বাসী হতে হবে এবং হার মানতে দেয়া যাবেনা।
নি এম/
Editor & Publisher : Sukriti Mondal.
E-mail: eibelanews2022@gmail.com