সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধিঃ সিরাজগঞ্জ জেলা সহ উত্তরাঞ্চলের গ্রামাঞ্চল, চরাঞ্চল ও বিলাঞ্চলের মানুষের মাঝে জেকে বসেছে মাঘের শীত।
তাই কবির ভাষায় বলতে হয়- মাঘের এই দিনগুলোতে উত্তর দিগন্তে হিমালয়ের বরফচূড়া থেকে ছড়িয়ে পড়ে শীতবুড়ির হিম শীতল নিঃশ্বাস। ধরণী হঠাৎ হয়ে পড়ে জড়সড়। বিবর্ণ হলুদ পাতারা চুপিসারে খসে পড়ে পথের ধুলায়।
শীতের দীর্ঘ রাতের কুয়াশার আবরণ গায়ে মেখে সুবহে সাদিকে ভেসে আসে আজানের ধ্বনি। তখন গাছে গাছে পাখিদের কলকাকলীতে ঘুম ভাঙে মানুষের।
শিশু এবং ছোট ছোট ছেলে মেয়েরা লেপের নিচে মা-বাবা- বা দাদা-দাদীর গা-ঘেঁষে জড়িয়ে ঘুমায় অবিরাম। গ্রামে শীতের আবহমান সত্যিই ভিন্ন রূপ তৈরি করে মানুষের মাঝে।
মাঘের শীত নিয়ে অনেকেই লিখেছে ভিন্ন ভিন্ন কবিতা-
মাঘ মাসে হিমহিম কুয়াশার জাল
কুয়াশায় ঢেকে থাকে শীতের সকাল।
থরথর কাঁপে দেহ ঠকঠক দাঁত
কাঁথা থেকে বের করা যায় না তো হাত।
মেঘ ছিঁড়ে ধীরে ধীরে সূর্যের মুখ
রোদে রোদে ভরে দেয় জীবনের সুখ।
গ্রামের কৃষকরা সকাল বেলা শীত উপেক্ষা করে লাঙ্গল-গরু নিয়ে ছোটে মাঠের দিকে। বাড়ি থেকে কিছুটা দূরে গেলেই তারা হারিয়ে যায় কুয়াশার মধ্যে। আর উত্তরাঞ্চলে গাছিরা খেজুর গাছ থেকে পেড়ে আনে রসের হাঁড়ি।
গাছতলাতেই গাছের মালিকের সঙ্গে ভাগাভাগি করে রস। তারপর ভাগের রস কাঁধে করে ছোটে বাড়ির পথে। সেই সকালেই রস জ্বাল দিয়ে তারা তৈরি করে গুড় আর পাটালি। রোদে উঠোনে পাটি বিছিয়ে ছেলেমেয়েরা কাঁচা রসে চুমুক দিয়ে কাঁপে থরথরিয়ে।
তবু খেজুরের কাঁচা রস তাদের চাই-ই চাই। কোনো মা আবার সেই ভোরবেলা ওঠে ভাপা পিঠা তৈরি করে লেপ-কাঁথার নিচ থেকে ডেকে তোলেন তাদের ছেলেমেয়েদের।
গরম পিঠার লোভে ছেলেমেয়েরাও হৈ হৈ করে উঠে পড়ে বিছানা থেকে। গ্রামে যারা বাস করে বলতে গেলে তারা প্রায় সবাই গরিব। শীতের সকালেও খালি পায়ে থাকে অনেকে।
শীত নিবারণের জন্য তেমন কোনো গরম কাপড়ও তাদের নেই। যে কারণে শীতের সকালে প্রতিটি বাড়ির আঙিনাতেই ছোট-বড় সবাইতে খড়কুটা জ্বালিয়ে শরীর থেকে শীত তাড়াতে দেখা যায়। তবু শীতের সকালটা দুর্লভ এক মজার মতোই মনে হয় সবার কাছে।
মাঘের সকালের মিষ্টি আলো ফোটার আগেই কাকের কা-কা রবে ঘুম ভাঙে গ্রামবাসীর। তবু লেপের নিচে মিষ্টি উত্তাপে আবার ডুবে যায় গভীর ঘুমে।
সকালে সূর্যের তাপ তাদের শরীরের হিম কুয়াশা চুষে না নেওয়া পর্যন্ত তারা জাগতে পারে না। কেউ আবার জেগে ওঠে খড় ও বাঁশ জ্বেলে আগুন পোহায়।
শীতের সময় যেন পোশাকের প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে যায় জেলা ও উপজেলার শহর ও উপ-শহর এলাকার মানুষের মধ্যে। ঘুম থেকে ওঠে তারা নাশতা খেয়ে, এক কাপ চা পান করে দিনের কাজ শুরু করে।
ছেলেমেয়েরা স্কুল-কলেজে যায়। গ্রামের মতো এখন শহরেও দেখা যায় সকাল-বিকাল রাস্তার মোড়ে মোড়ে চিতই আর ভাপা পিঠা তৈরি করছে কেউ কেউ। বিক্রিও হয় প্রচুর। শহর এলাকাতেও অতিথি পাখিদের আগমন ঘটে থাকে প্রতি বছর।
মাঘের শীত চলে গেলে, শীতবুড়ির সকাল বেলার দাগ কেটে যায় প্রতিটি মানুষের বুকের মধ্যে। আবার অপেক্ষায় বছর গড়ায়, নানা সাজে সাজা শীতের এমন মধুর সকালের জন্য।
এইবেলাডটকম/চন্দন/গোপাল
![]() |
সম্পাদক : সুকৃতি কুমার মন্ডল খবর প্রেরণ করুন # info.eibela@gmail.com ফোন : +8801517-29 00 02 +8801711-98 15 52 a concern of Eibela Foundation |
|