চিকিৎসা পেশার আড়ালে ডা. জাহিদুল আলম কাদির আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবসা করতেন বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের (সিটিটিসি) প্রধান মনিরুল ইসলাম।
বৃহস্পতিবার ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, জাহিদুল অস্ত্র ব্যবসার পাশাপাশি কন্ট্রাক্ট কিলিংয়ে অংশ নিতেন। সর্বশেষ এক লন্ডন প্রবাসীর কাছ থেকে সিলেট অঞ্চলের একজন সংসদ সদস্যকে হত্যার কন্ট্রাক্ট পেয়েছিলেন জাহিদুল। এর আগেই গ্রেফতার করা হয়েছে তাকে।
জাহিদুলের স্থায়ী বাড়ি কুষ্টিয়া জেলার পোড়াদহের বাবুপাড়ায়। তার বাবার নাম হাবিবুর রহমান। বড় হয়েছেন পাবনায়। এইচএসসি পাস করার পর ময়মনসিংহে চলে যান। পরে সেখানেই থেকে যান তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ১৫ মে জাহিদুল আলমকে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকা থেকে দুটি পিস্তল, ৮ রাউন্ড গুলিসহ গ্রেফতার করে সিটিটিসি। পরে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় তাকে। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি জানান, স্ত্রী মাসুমা আক্তার তার সঙ্গে অস্ত্র ব্যবসায় জড়িত। এর বেশি তথ্য তিনি দেননি। ময়মনসিংহের বাগমারায় তার বাসায় অভিযান চালিয়েও প্রথমে কিছু পাওয়া যায়নি। তার দেওয়া তথ্যে ৩ জুন ঢাকার গাবতলী এলাকা থেকে তার স্ত্রী মাসুমাকে একটি বিদেশি পিস্তল, ৪ রাউন্ড গুলিসহ গ্রেফতার করা হয়। পরে আবারও রিমান্ডে নেওয়া হয় জাহিদুলকে। স্বামী-স্ত্রীকে মুখোমুখি জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানান, ময়মনসিংহের বাগমারা এলাকায় তাদের নিজের বাসায় আরও আগ্নেয়াস্ত্র রয়েছে। বৃহস্পতিবার ভোরে ওই বাসা থেকে ১২টি আগ্নেয়াস্ত্র ও ১ হাজার ৬১০ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়। এর মধ্যে পয়েন্ট টু টু বোরের রাইফেল তিনটি, পয়েন্ট থ্রি নট থ্রি রাইফেল একটি, পয়েন্ট থ্রি টু বোর রিভলবার চারটি, পয়েন্ট টু টু রিভলবার একটি, সেভেন পয়েন্ট সিক্সটি ফাইভ পিস্তল দুটি ও পয়েন্ট টু ফাইভ পিস্তল একটি। এসব অস্ত্র ও গুলি বিশেষভাবে তৈরি একটি স্টিল কেবিনেটের পেছনে লুকানো ছিল।
মনিরুল ইসলাম বলেন, রাইফেলগুলো জার্মানি, চেক প্রজাতন্ত্র ও যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি। পিস্তলগুলো ব্রাজিল ও তুরস্কের। বেশ কিছু অস্ত্র বৈধ অস্ত্র বিক্রেতার কাছ থেকে সংগ্রহ করেছিলেন জাহিদুল। বিষয়টি খতিয়ে দেখছে পুলিশ। যেসব বৈধ অস্ত্র বিক্রেতা তার কাছে অবৈধভাবে অস্ত্র বিক্রি করেছেন, তাদেরও আইনের আওতায় আনা হবে বলে জানান সিটিটিসিপ্রধান। জাহিদুল তার সহযোগীদের বলতেন, পুলিশ কখনও তাকে গ্রেফতার করতে পারবে না। পুলিশ তাকে ধরতে এলেও কমপক্ষে তিন দিন তিনি এই অস্ত্র দিয়ে ঠেকিয়ে রাখতে পারবেন।
সিটিটিসিপ্রধান বলেন, জাহিদুল ছাত্রজীবনে ছাত্রদলের রাজনীতি করতেন। ১৯৯২ সালে ঈশ্বরদীর একটি স্কুল থেকে এসএসসি এবং ১৯৯৪ সালে কুষ্টিয়ার একটি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। ২০০২ সালে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করার পর তখনও সরকারি চাকরির জন্য চেষ্টা করেননি। ২০১৪ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিপ্লোমা করেন। লাকসাম, ফেনী, কসবা, চকোরিয়াসহ বিভিন্ন এলাকার হাসপাতাল ও ক্লিনিকে চাকরি করেছেন। কোনো প্রতিষ্ঠানে তিনি ১-২ মাসের বেশি চাকরি করতেন না। সর্বশেষ নবীনগরে একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে কর্মরত ছিলেন। উপজেলা শহরের হাসপাতালে চিকিৎসা পেশার আড়ালে আগ্নেয়াস্ত্র সংগ্রহ এবং বিক্রি করতেন। প্রথমে অস্ত্র সংগ্রহ ছিল তার শখ। এই শখ থেকেই তিনি অস্ত্র ব্যবসায়ী হয়ে ওঠেন।
জিজ্ঞাসাবাদে তিনি বলেছেন, অস্ত্র চালাতে তিনি পারদর্শী। তার নিশানা কখনও ব্যর্থ হয় না। বিভিন্ন ধরনের আগ্নেয়াস্ত্র তৈরি ও মেরামতেও বিশেষভাবে পারদর্শী তিনি। এ ছাড়া বিভিন্ন যন্ত্রাংশ ব্যবহার করে অস্ত্রের আকার-আকৃতি পরিবর্তন এবং কর্মক্ষমতা বাড়াতে দক্ষ এই চিকিৎসক। তার সঙ্গে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের সন্ত্রাসী ও পেশাদার খুনিদের সখ্য ছিল। সিলেট ও সুনামগঞ্জ জেলায় তার কয়েকজন সহযোগী রয়েছে। প্রথমে একজন চিকিৎসককে বিয়ে করেছিলেন। জাহিদুলের সন্ত্রাসী কার্যক্রমের কারণে ওই নারী বিবাহ বিচ্ছেদ করে চলে যান তার কাছ থেকে। পরে মাসুমাকে বিয়ে করেন। তাকে অস্ত্র ব্যবসায় জড়াতে বাধ্য করেন জাহিদুল।
বিডি