eibela24.com
শুক্রবার, ২৯, মার্চ, ২০২৪
 

 
লাদাখের বিভিন্ন স্থান থেকেও পিছাচ্ছে ভারত–চীন
আপডেট: ০৪:৫৯ pm ০৮-০৭-২০২০
 
 


লাদাখে বরফ গলতে শুরু করল। গালওয়ান উপত্যকায় ঢিল ছোড়া দূরত্বে থাকা অবস্থান থেকে বেশ খানিকটা পিছিয়ে গেল চীন ও ভারতের সেনারা। শুধু গলওয়ান উপত্যকাই নয়, চীন ও ভারত মুখোমুখি অবস্থান থেকে পিছিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছে লাদাখের অন্যত্রও। দুই দিনের মধ্যে সেই প্রক্রিয়া শেষ হবে। ভারতের সরকারি ও সামরিক সূত্রে পাওয়া এই খবর বিভিন্ন সংবাদ সংস্থা গত মঙ্গলবার প্রচার করেছে। দুই দেশের মধ্যে উচ্চপর্যায়ের আলোচনার পর গত সোমবার থেকে উত্তেজনা প্রশমনের এই প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।

সীমান্ত পরিস্থিতি নিয়ে ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল ও চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ইর মধ্যে আলোচনার পর এ সেনা প্রত্যাহারের খবর এল। সরাসরি সেনা প্রত্যাহারের বিষয়টি নিশ্চিত না করলেও সীমান্ত উত্তেজনা কমানোর বিষয়ে দুই দেশ একমত হয়েছে বলে জানিয়েছে ভারত ও চীন। সোমবার দেশ দুটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে পৃথক বিবৃতি দিয়ে এ কথা জানানো হয়।

গলওয়ান উপত্যকা থেকে সোমবার চীন প্রায় দুই কিলোমিটার পিছিয়ে যায়। ভারতও পিছিয়ে এসে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায় একটা ‘বাফার জোন’ তৈরিতে সহায়তা করে। গত ১৫ জুন যেখানে দুই দেশের সেনাবাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষ বেধেছিল, সেই ১৪ নম্বর প্যাট্রলিং পয়েন্ট (পিপি) থেকে চীনা সৈন্যদের অবকাঠামো ভেঙে চলে যেতে দেখা গেছে। সেনা সূত্র এই খবর দিয়ে জানিয়েছে, আজ সকালে পিপি ১৪ থেকে প্রায় ৪০ কিলোমিটার দূরে গোগরা ও হট স্প্রিংয়েও চীনা ফৌজ প্রায় দুই কিলোমিটার পিছিয়ে যায়। লাল ফৌজের সাঁজোয়া গাড়িবহরকেও চলে যেতে দেখা গেছে। দুই দেশের সমঝোতা অনুযায়ী ভারতীয় বাহিনীও পিপি ১৪ সহ বিতর্কিত এলাকায় টহলদারি থেকে বিরত থাকছে।

তবে সমঝোতা সত্ত্বেও প্যাংগং লেক থেকে চীন এখনো সরেনি। সরকারি সূত্র মনে করছে, জুলাইয়ের মাঝামাঝি চীন সব কটা জায়গা থেকেই সরে যাবে। তারপর দুই দেশের উচ্চপর্যায়ের কর্তারা আরও একবার পরিস্থিতি পর্যালোচনা করবেন।


সেনা সরানোর মধ্য দিয়ে উত্তেজনা প্রশমিত হলেও ভারত প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর তার উপস্থিতি শিথিল করতে রাজি নয়। কারগিলে টহলদারিতে ঢিলেমি দিয়ে যে ভুল করা হয়েছিল, লাদাখে তা হবে না। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি লাদাখ সফরে সেনাকর্তাদের বিষয়টি স্পষ্ট করে জানিয়েছেন। বাহিনীকে বলা হয়েছে, কোথাও কোনো ঢিলেমি নয়। কাউকে বিশ্বাসের প্রশ্নই ওঠে না।

এই কারণেই সুখোই-৩০ ও মিগ-২৯ যুদ্ধবিমানের পাশাপাশি লাদাখে মার্কিন যুদ্ধ চপার অ্যাপাচে-৬৪ মোতায়েন করা হচ্ছে। অত্যাধুনিক এই যুদ্ধ চপার একসঙ্গে ১২টি লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে পারে। 

ভারতের মানুষের মধ্যে চীনা বিরোধিতা দিন দিন বাড়ছে। চীনা পণ্য বয়কট করার তীব্রতাও বেড়ে চলেছে। পাঞ্জাবের অন্যতম বৃহত্তম সাইকেল প্রস্তুতকারী সংস্থা ‘হিরো সাইকেলস’ এই অবস্থায় চীনের সঙ্গে ৯০০ কোটি রুপির চুক্তি বাতিল করে দিয়েছে। সংস্থার চেয়ারম্যান পঙ্কজ মুঞ্জল এই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে বলেছেন, তাঁরা জার্মানির সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হওয়ার কথা ভাবছেন।

ভারতের সামরিক বিশেষজ্ঞদের অভিমত, চীন বরাবরই বিতর্কিত এলাকায় দুই পা এগিয়ে এক পা পিছিয়ে যাওয়ার নীতি নিয়ে থাকে। গালওয়ানের একাধিক এলাকাতেও তাই করতে চায়। ভারতীয় সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল সৌমিত্র রায়ের বিশ্বাস, পূর্ব লাদাখেও চীন তেমনই করতে চাইছে। অনেকটা ঢুকে এসে কিছুটা পিছিয়ে যাবে। তাঁর মতে, ভারতের উচিত হবে না তা করতে দেওয়া। চীনকে দখলে রাখা এলাকা থেকে পুরোপুরি সরাতে ভারতকে ক্রমাগত চাপ সৃষ্টি করে যেতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী মোদি সম্প্রতি লাদাখ সফরে গিয়ে সেই কাজটাই শুরু করেছেন। চীনের ওপর রাজনৈতিক, সামরিক ও কূটনৈতিক চাপ সৃষ্টি করেছেন। অর্থনীতিতেও চাপ সৃষ্টির চেষ্টা চালানো হচ্ছে। মোদি স্বনির্ভরতার স্লোগান নতুনভাবে তুলেছেন। চীনা পণ্য বর্জনের আন্দোলন জোরদার হচ্ছে। সরকারিভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে ৫৯টি চীনা অ্যাপ। বহু সরকারি প্রকল্পে চীনা সংস্থার যোগদানে বাধা সৃষ্টি হয়েছে। অন্যান্য দেশের সঙ্গেও সম্মিলিত চাপ সৃষ্টির চেষ্টা চালানো হচ্ছে। তবে চীনও পিছিয়ে নেই। তাদের দিক থেকেও ভারতের ওপর চাপ সৃষ্টি হচ্ছে। যেমন সেনা পেছানোর খবরের মধ্যেই জানা যাচ্ছে, পাকিস্তানকে চারটি সশস্ত্র ড্রোন সরবরাহ করতে চলেছে।

প্রসঙ্গত, চীনের বিদেশমন্ত্রক গত ১৯ জুন দাবি করেছিল, ভারত-চীন সীমান্তে গালওয়ান ভ্যালি চীনের ভূখণ্ডের মধ্যে পড়ে৷

নি এম/