eibela24.com
শুক্রবার, ১৯, এপ্রিল, ২০২৪
 

 
শ্রিংলার আকস্মিক ঢাকা সফর
আপডেট: ১০:৪৮ pm ১৮-০৮-২০২০
 
 


মহামারির মধ্যেই মঙ্গলবার (১৮ আগস্ট) সকালে অনেকটা আকস্মিকভাবেই ঢাকায় আসেন ভারতের পররাষ্ট্র সচিব। সাধারণত এ ধরনের উচ্চ পর্যায়ের সফর আগে থেকেই নির্ধারণের রেওয়াজ থাকলেও হর্ষবর্ধন শ্রিংলার ঢাকায় আসার কথা জানাজানি হয় আগের দিন সোমবার (১৭ আগস্ট) রাতে।

ভারতের পররাষ্ট্রসচিব হর্ষ বর্ষণ শ্রিংলার বাংলাদেশ সফরে গুরুত্ব পেতে যাচ্ছে করোনা পরিস্থিতি, কোভিডের টিকা, রোহিঙ্গা ইস্যু, ঢাকা-দিল্লি সম্পর্ক টানাপোড়েনের জল্পনা নিয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত সাম্প্রতিক খবরসহ দ্বিপাক্ষিক নানা বিষয়।

সফরের দ্বিতীয় দিন বুধবার (১৯ আগস্ট) দুপুরে দুই দেশের পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের বৈঠকে এসব বিষয়ই হতে যাচ্ছে আলোচনার মূল এজেন্ডা।

তবে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন দাবি করেন, ভারতের পররাষ্ট্রসচিবের ঢাকা সফর আকস্মিক নয়। বরং দুই দেশের নিবিড় সম্পর্ক পরিচর্যার অংশ হিসেবেই এ সফর। ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশন সংক্ষিপ্ত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, আজ ও আগামীকাল তিনি বাংলাদেশে কাটাবেন। 

মঙ্গলবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেন, 'ভারতের সঙ্গে বিভিন্ন পর্যায়ে প্রচুর ইন্টারেকশন (আলোচনা) হয়। সে হিসেবে কোভিডের কারণে এ বছর কমই হয়েছে।'

করোনা মহামারির এ সময়ে ঢাকায় আসা ভারতের পররাষ্ট্র সচিবের সফরে যে গুরুত্ব পাচ্ছে কোভিড-কূটনীতি, তার আভাস পাওয়া গেলো বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিবের বক্তব্যে। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় উদ্ভাবিত টিকা উৎপাদনে কাজ করছে ভারতের একটি প্রতিষ্ঠানও। আর করোনা মহামারি সামাল দিতে টিকা পাওয়ার বিষয়টিকে আলোচনার টেবিলে তুলে ধরবে বাংলাদেশ। 

পররাষ্ট্র সচিব বলেন, 'আমরা অফার করবো আমাদের এখানেও যদি ট্রায়ালের সুযোগ থাকে! কেননা অক্সফোর্ডের টিকা নিয়ে যে কোম্পানি কাজ করছে, তাদের সাথেও আমরা লন্ডন মারফত যোগাযোগ করেছি। ভারতের বিভিন্ন ভ্যাকসিন প্রডিউসার এই মুহূর্তে এটার ব্যবসায়ীক দিকটা দেখছে। সুতরাং আমাদের একটা প্রচেষ্টা আছে, বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় যে ভ্যাকসিন ইতিমধ্যে তৈরি হয়েছে বা চালু হচ্ছে; সেটা চীনেরই হোক, রাশিয়ার হোক, আমেরিকার হোক কিংবা অক্সফোর্ডের যেটা ভারতে ট্রায়াল দিচ্ছে---এগুলোর সবগুলোর এক্সেস আমরা কিভাবে পেতে পারি দ্রুত, সে ব্যাপারে সবার সাথেই আমাদের আলাপ-আলোচনা চলছে। সেটার অংশ হিসেবে উনাদের (ভারতের) সাথেও আমরা আলোচনা করবো।'

'আমাদের যেটা সবচেয়ে বেশি নিরাপদ (ভ্যাকসিন) মনে হবে, আমরা সেদিকেই যাবো। সব বিকল্পই আমাদের জন্য থাকা উচিত' যোগ করেন পররাষ্ট্রসচিব। 

সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের শীতলতা ইঙ্গিত করে গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে নানা খবর। যাতে তৈরি হয়েছে বেশ জল্পনা। বিশেষ করে কোভিড-কুটনীতিতে চীনের সক্রিয় ভূমিকা, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের ফোন, ভারতীয় হাইকমিশনারের অনেক চেষ্টার পরও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাক্ষাৎ না পাওয়ার খবর ভারতের জন্য অস্বস্তির কারণ, এমন সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে খোদ ভারতীয় সংবাদমাধ্যমেই। বুধবারের বৈঠকে এসব বিষয়েও পারস্পরিক বক্তব্য তুলে ধরতে চায় ঢাকা-দিল্লি। 

পররাষ্ট্র সচিব বলেন, 'আমরা সাম্প্রতিক সময়ে দেখেছি,  বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় নানা রকমের স্পেকুলেটিভ (জল্পনামূলক) নিউজ এসেছে। সেগুলো নিয়েও আমরা আলোচনা করবো। এগুলোর কোনো ভিত্তি আমরা দেখি না।'

'ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক আমাদের অনেক নিবিড়। সেটা আমাদের  স্বাধীনতাযুদ্ধের সঙ্গে প্রোথিত। সে কারণে আমাদের মধ্যে যেনো কোনো গ্যাপ (ফাঁকফোকর) না থাকে, সে ব্যাপারেও আমরা আলোচনা করবো', জানান পররাষ্ট্রসচিব। 

মাসুদ বিন মোমেন বলেন, 'আমাদের দুই দেশের সম্পর্ক অনেক গভীর। আর সে গভীর সম্পর্ক সারাক্ষণ পরিচর্যা করতে হয়। যাতে ভুল বোঝাবুঝির কোনো সুযোগ না থাকে।'

বৈঠকে এছাড়াও ট্রানশিপমেন্ট, রেলখাতে সহযোগিতাসহ দ্বিপাক্ষিক বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হবে বলে জানান পররাষ্ট্র সচিব। তিনি বলেন, 'দুই দেশের মধ্যে কিভাবে সহযোগিতা আরো জোরদার হতে পারে, সামনে কি করা যায়, সে বিষয়ে আলোচনা হবে।'

ঢাকা সফরের পর ভারতীয় পররাষ্ট্র সচিবের মিয়ানমার যাওয়ার কথা রয়েছে।

নি এম/