eibela24.com
শুক্রবার, ২৯, মার্চ, ২০২৪
 

 
গীতায় জীবনের পাঁচটি শিক্ষা
আপডেট: ০৯:১২ pm ০৬-০১-২০২১
 
 


ভগবান শ্রীকৃষ্ণ আমাদের অন্যতম প্রধান আরাধ্য দেবতা। তাঁর সমস্ত মাহাত্ম্য কথা লেখা আছে শ্রীমদ্ভাগবত পুরান ও মহাভারতে। কুরুক্ষেত্র যুদ্ধে অর্জুন যখন প্রয়োজনে আত্মীয় স্বজনদের হত্যা করতে অনিচ্ছুক, মর্মাহত ও বিতুখ। তখনই অর্জুনকে জীবনের মূল স্রোতে ফিরিয়ে নিয়ে আসার জন্য, শ্রীকৃষ্ণ যে উপদেশ দিয়েছিলেন তাই আমাদের পরম পবিত্র ধর্মগ্রন্থ 'শ্রীমদ্ভগবদ গীতা' নামে পরিচিত। "পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের পাঁচটি উপদেশ মেনে চললে জীবনের সব সমস্যা দূর হতে বাধ্য। আমাদের জীবনধারা, চিন্তাভাবনা এমনকি আচার আচরণও বদলাবে। আমাদের জীবনে চলার পথে এই কথা গুলোর গুরুত্ব অপরিসীম। এই কথা গুলো প্রতিটা পদে পদে আমাদের দরকার। আজ আমরা এই প্রতিবেদনে শ্রীকৃষ্ণের তেমনই ৫ টি উপদেশ জানবো যেগুলো আমাদের চলার পথে, মন খারাপের সময়, জীবনের নানা সমস্যার সময় মেনে চললে সকল সমস্যায় মিটে যাবে। তাহলে দেখে নেই সেই উপদেশ গুলো।

১) কখনো অতীতকে নিয়ে পড়ে থাকতে নেই, কারণ ঠিক ভুল নিয়েই জীবন। তাই অতীতকে পিছনে এগিয়ে যেতে হবে জীবনে। কারণ বর্তমানের উপরেই নির্ভর করছে আমাদের ভবিষ্যত। তাই যদি বর্তমান ভালো হয়, তাহলে আমাদের ভবিষ্যৎ ভালো হবে, কিন্তু যদি অতীত নিয়ে পড়ে থাকি, তাহলে বর্তমান, ভবিষ্যত দুটোই খারাপ হবে। যেমন আগুনের তাপে জল বাষ্প হয়ে যায়, তেমনই অতীত নিয়ে পড়ে থাকলে পুরো জীবনটাই নষ্ট হয়ে যায়। তাই সময় থাকতে অতীতকে ভুলে, বর্তমানের সাথে ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। জীবনে এগোতে হবে।

২) কে কি আমাকে বললো তা নিয়ে বেশি ভাববো না। কিছু মানুষের জীবনে কাজই হলো অন্যের সমালোচনা করা। ভালো বললেও বলবে, আর খারাপ হলে তো কোনো কথাই নেই। আমি যদি মনে করি, আমি ভালো কাজ করছি, তাহলে কে কি বললো, তাতে কান না দেয়াই উত্তম। নিজের কাজ নিজে করে যাওয়া, অতি আবশ্যক। মানুষতো ভগবানকে নিয়েও বিচার করতে ছাড়ে না, ভগবানেরও ভুলত্রুটি ধরে। নদীতে যখন বান আসে, তখন সেই বানকে কেউ আটকাতে পারে না, তেমনই আমাদেরও সেই বানের মতো হতে হবে। কে কি বললো তাতে কোনো পাত্তা দিলে হবে না।

৩) সময়কে কখনোই পরিহাস করা উচিত নয়। কারণ সময়ই হলো সবচেয়ে বেশি শক্তিশালী। আজ যারা আমাদের পরিহাস করছে, উপহাস করছে, তারা সময়ের শক্তিকে জানে না। সময়ের সাথে সাথে যেমন লোহায় জং পড়ে যায়, তেমনই সময়ের সাথে সাথেই কয়লাও হীরেতে পরিণত হয়। সেই রকমই সময়ের সাথে সাথেই শক্তিশালী মানুষও দূর্বল হয়, আবার দূর্বলও শক্তিশালী হয়ে যায়।

৪) নিজের জীবনকে কখনোই অন্যের জীবনের সাথে তুলনা করা উচিত নয়। সবার জীবনেই নিজস্ব আলাদা পথ থাকে, সেই পথ ধরেই জীবন এগিয়ে চলে। আমি যদি কাউকে দেখে ভাবি যে ওর বাড়ি আছে, অনেক টাকা আছে এবং আমাকেও ওর মতো হতে হবে, ওর মতোই টাকা, গাড়ি বাড়ি আমারও লাগবে। এবং এতে যদি আমি সফল হই, তাহলে আমার মনে আসবে অহংকার, এবং যদি সফল না হই, তাহলে আসবে দ্বেষ, হিংসা, রাগ, হীনমন্যতা। আর এই সবকটি জিনিসই আমার পতনের কারণ হবে। তাই কে কি করছে সেটা না দেখে নিজে কি করছি, কিভাবে জীবনে নিজে এগোবো সেটা নিয়েই ভাবাই সঠিক সিদ্ধান্ত।

৫) শুনলে মনে হয় কি সহজ কাজ, কিন্তু করার সময় মনে হয় কি কঠিন কাজ। আজ আত্ম অহংকারের জন্যেই মানুষ ভুল করেও ক্ষমা চাইতে দ্বিধা করে। ভাবে, আমি ওর কাছে কেনো ছোট হবো। একটা মানুষ যে সব জানবে তার কোনো মানে নেই, মানুষ মাত্রই ভুল করে। আর এই ভুল করেই মাথা নত করার সময় মানুষের মধ্যে আত্ম অহংকার জেগে ওঠে। এ জন্যই মানুষ ভাবে ও আমার থেকে ছোটো, ও আমার থেকে কি করে বেশি জানতে পারে! আমি কিছুতেই মাথা নত করবো না। কিন্তু কারো জ্ঞান বয়স দেখে বিচার হয় না। একটা পিপড়ের থেকেও অনেক অনেক কিছু শেখার আছে। আমাদের চারপাশ হচ্ছে জ্ঞানের ভান্ডার। তাই আত্ম অহংকার ছেড়ে নম্র হতে শিখতে হবে। ভুল করলে মাথা নত করতে জানতে হবে, মাথা নত করলে কেউ ছোট হয়ে যায় না। তাতে আরও সম্মান বাড়ে।

নি এম/