"স্যার, ওরা তো খুব ছোট। তাই আমি সবসময় চেষ্টা করি, যেন ওরা বেশি ব্যথা না পায়। আমি তো ওদের শিক্ষক, ওরা ব্যথা পেয়ে কান্নাকাটি করলে আমার খুব কষ্ট লাগে"। ভাষ্যটি রাঙ্গুনিয়ার একটি কওমি মাদ্রাসার শিক্ষক নাছির উদ্দিন (৩৫)এর। নিয়মিত অগণিত শিশুকে তার লালসার শিকারে পরিণত করলেও গ্রেপ্তার হবার পর পুলিশের প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে ধর্ষিতদের প্রতি এমনই সদয় তিনি!
রাঙ্গুনিয়া সার্কেলের এএসপি আনোয়ার হোসেন শামীম বলেন, নাছিরের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের ফিরিস্তি শুনলে এই মায়াবাক্যাকে আপনার কাছে পরিহাসই মনে হবে। মাদ্রাসার হোস্টেলের ইনচার্জ হিসেবে দায়িত্বে থাকার সুযোগ নিয়ে ভয়ভীতি দেখিয়ে অনেক শিশু ছাত্রকেই নিয়মিত বিছানার সঙ্গী করেন তিনি। ঘটনা সংক্রান্তে প্রাথমিক অনুসন্ধান চালাতে গিয়ে যা বের হয়ে আসে, তাতে শিউরে উঠবেন যেকোনো বিবেকবান মানুষই। ধর্ষণ করার জন্য মূলত দশ বছরের নিচে বয়সী ছেলে শিশুদেরকেই টার্গেট করতেন তিনি। কোন শিশু তার আহ্বানে সাড়া না দিলে তাকে বাধ্য করার জন্য কারণে অকারণে তাকে বেধড়ক মারধোর করা হতো। যেহেতু সেখানে বেশিরভাগ শিশুই এতিম/দরিদ্র পরিবার থেকে আসা, শেষ পর্যন্ত তার পক্ষে হুজুরের প্রস্তাবে হ্যাঁ বলা ভিন্ন কোন উপায় থাকতো না। নাছিরের ছেলে শিশু আসক্তি এমন পর্যায়ে উন্নীত হয়েছিলো যে, বিষয়টি টের পেয়ে তার স্ত্রী তিন বছরের সন্তানকে নিয়ে তাকে ছেড়ে চলে যান।
ধর্ষিত শিশুর প্রতি সহমর্মি হবার পাশাপাশি নাছির আবার ভীষণ রকম নিয়মনিষ্ঠও। বিশৃঙ্খলা তার একদমই না পছন্দ। তাই তো তিনি একেবারে রুটিন করে দিয়েছেন, ওস্তাদের খেদমতে কবে কখন কোন শিশু হাজির হবে। এই করে বেশ ভালমতোই চলে আসছিল শিক্ষকতার আড়ালে তার বেপরোয়া বিকৃত যৌনজীবন। ছাত্ররাও মারধর, হুমকিধামকির ভয়ে নীরবে নিশ্চুপে সব সয়ে যাচ্ছিলো।
ঝামেলা শুরু হয় সোমবার সন্ধ্যায়। এক অভিভাবকের কাছ থেকে প্রাথমিক অভিযোগ পাবার পর পুলিশের বিশদ অনুসন্ধানে উঠে আসে বলাৎকারকারী নাছিরের গোপন বিকৃত যৌনজীবনের অবিশ্বাস্য সব খতিয়ান। তারপর আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দায়ের এবং মধ্যরাতে পরিচালিত পুলিশি অভিযানে গ্রেপ্তার ভণ্ড হুজুর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন। কিন্তু গ্রেপ্তারের পর রীতিমতো ভোল পাল্টে ফেলেন তিনি। বারবার পুলিশের নিকট দাবি করতে থাকেন, তিনি নাকি কাউকে জোর করে বিছানায় নিতেন না, ছাত্ররাই নাকি স্বেচ্ছায় তার সঙ্গ নিতে আসতো। যদিও গরিব ঘরের অসহায় ছেলেগুলোর সাথে দিনের পর দিন কোন কৌশলে, কি কি ঘটিয়েছে নরপশু নাছির, তা তাদের অজানা ছিল না।
মঙ্গলবার সকালে আদালতে পাঠানো হলে গ্রেপ্তারকৃত নাছির ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়ে তার বিরুদ্ধে আনীত বলাৎকারের অভিযোগ স্বীকার করে নেন। পাশাপাশি বলাৎকারের শিকার শিশুদের মধ্যে চারজনও আদালতে উপস্থিত হয়ে তাদের উপর চালানো নির্মমতার বর্ণনা দেয়।
নি এম/
Editor & Publisher : Sukriti Mondal.
E-mail: eibelanews2022@gmail.com