ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জীর ক্ষমতাসীন দল তৃণমূল কংগ্রেসে ভাঙনের সুর বাজছে। আগামী বছরের এপ্রিল-মে মাসে রাজ্য বিধানসভার নির্বাচনের আগেই এ বাগান আরও তছনছ হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
শুক্রবার মমতার দল বড় ধাক্কা খেল। মমতার এককালের ডান হাত হিসেবে পরিচিত নেতা শুভেন্দু অধিকারীর রাজ্য মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করলেন। পূর্ব মেদিনীপুরের শুভেন্দু অধিকারীর পরিবার এর আগে ছিল মমতাকে ক্ষমতায় নেওয়ার এক বিরাট কারিগর। নন্দীগ্রাম আন্দোলনের পুরোধা ছিল এই অধিকারী পরিবার। এই পরিবারের সন্তান শুভেন্দু অধিকারী নন্দীগ্রাম আন্দোলনের মূল কান্ডারি হয়ে বিলিয়ে দিয়েছিলেন নিজেকে। তাঁর নন্দীগ্রাম ও সিঙ্গুর আন্দোলনের জেরেই পশ্চিমবঙ্গে ৩৪ বছরের বাম শাসনের অবসান হয়। ২০১১ সালে ক্ষমতায় আসেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এখন মনে করা হচ্ছে, ভবিষ্যতে মমতারই হাতে গড়া বহু নেতা তাঁরই দল ছেড়ে চলে যেতে পারেন অন্য দলে। আর তাঁরা ঠাঁই নিতে পারেন বিজেপিতে।
তৃণমূলের ভাঙনের শব্দ বেজে ওঠে ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে। পশ্চিমবঙ্গের লোকসভার ৪২টি আসনের মধ্যে বিজেপি ছিনিয়ে নেয় একাই ১৮টি আসন। যদিও এই নির্বাচনের আগের নির্বাচনে ২০১৪ সালে বিজেপির ঝুলিতে ছিল মাত্র ২টি আসন।
২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচন এবং ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের পরে একে একে দল ছাড়ছেন তৃণমূলের অনেকেই। ইতিমধ্যে মমতার দল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন কলকাতা পৌরসভার তৎকালীন মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়, বিধাননগর (সল্টলেক) পৌরসভার মেয়র সব্যসাচী দত্ত, তৃণমূল সাংসদ সৌমিত্র খাঁ, অর্জুন সিংসহ বহু নেতা।
সর্বশেষ তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে এসেছেন কোচবিহার (দক্ষিণ) আসনের তৃণমূল বিধায়ক মিহির গোস্বামী। শুক্রবার তিনি রাজধানী দিল্লিতে গিয়ে বিজেপির কেন্দ্রীয় দপ্তরে উপস্থিত হয়ে যোগ দেন বিজেপিতে।
গতকাল রাতেই শুভেন্দু অধিকারীর পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেছেন মমতা। তাঁর দপ্তরে দায়িত্ব নিয়েছেন মমতা নিজেই।
মমতার এককালের ডান হাত হিসেবে পরিচিত নেতা শুভেন্দু অধিকারীর রাজ্য মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করেছেন
এদিকে শুভেন্দু অধিকারীর পদত্যাগের পর রাজ্যব্যাপী গুঞ্জন শুরু হয়ে গেছে, এবার কি এবার শুভেন্দু অধিকারী বিজেপিতে যোগদান করতে যাচ্ছেন? কারণ, রাজনৈতিক অঙ্গনে এখন যে প্রচার রয়েছে, তাতে বলা হচ্ছে শুভেন্দু অধিকারী বিজেপিতে যোগদান করতে পারেন। বিজেপি আসন্ন রাজ্য বিধানসভা নির্বাচনে শুভেন্দুকে রাজ্যের পরবর্তী মুখ্যমন্ত্রীর মুখ তুলে ধরে প্রচারে নামতে পারে।
এ নিয়ে এখনো মুখ খোলেননি শুভেন্দু। তবে শুক্রবার তাঁর মন্ত্রিত্ব ছাড়ার পর বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেছেন, ‘ভালো মানুষ আর থাকতে চায় না তৃণমূলে। তাই তো ওদের ভাঙন শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যে ৩ সাংসদসহ ১০ বিধায়ক তাঁদের দলে এসেছেন। আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের আগে আরও আসবেন। যে–ই আসুক না কেন, সবাইকে আমাদের দলে স্বাগত।’
নি এম/
Editor & Publisher : Sukriti Mondal.
E-mail: eibelanews2022@gmail.com