পানির অপর নাম জীবন। সেই পানিই যেন যশোর সদরের অংশ বিশেষ, অভয়নগর, মনিরামপুর, কেশবপুর ও খুলনা জেলার ডুমুরিয়া এবং ফুলতলার কয়েক লক্ষ লোকের মরন ফাঁদ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর এ ফাঁদ এমন ফাঁদ যে ফাঁদে পড়লে বের হওয়ার কোন রাস্তা নেই। অভিমন্যু যেমন চক্রব্যুহ ভেদ করার উপায় জানতেন কিন্তু বের হওয়ার উপায় জানতেন না তেমন ভবদহ এলাকার জনগণেরও সেই একই অবস্থা। ভবদহের জলাবদ্ধতা নিয়ে যে রাজনৈতিক চক্রব্যুহ রচিত হয়েছে তা থেকে বের হওয়া সত্যিসত্যিই কঠিন।এই ভবদহকে নিয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড এক ধরনের চক্রব্যুহ রচনা করেছেন আবার রাজনৈতিক মোহল আরেক ধরনের জটিল কুটিল চাল চালছেন। ভবদহ এলাকার লোকের অবস্থা শীল আর পাটায় ঘষাঘসি মধ্যে পড়ে মরিচের যত যন্ত্রনা। ভবদহ এলাকার যত যন্ত্রনা। এর পরে মরার উপর খাড়ার ঘা হিসাবে আছে মাছ চাষের সাথে জড়িত ঘের মালিকগন। তারাও তাদের সুবিধার্থে চায় পানি যদি না কমে তাহলে মাছ চাষে সুবিধা হয়। পানি সরলে কৃষক যদি চাষাবাদ করে স্বাবলম্বী হয় তাহলে তারা নিজেরাই সমবায়ের মাধ্যমে মাছ চাষসহ অন্য ফসল উৎপাদন করে নিজের ও দেশের উন্নয়নে সহযোগীতা করতে পারতেন। কিন্তু দীর্ঘদিন যাবত জলাবদ্ধতার কারনে অত্র এলাকার কৃষি ব্যবস্থা ধ্বংসের শেষ সীমায় অবস্থান করছে।
বাংলাদেশের বর্তমান সরকার ও সরকার প্রধান খুবই কৃষিবান্ধব তাই সরকারের কাছে কৃষকের প্রত্যাশাও অনেক বেশী। অত্র এলাকার জলাবদ্ধতা আশির দশক থেকে শুরু। আর তখন থেকে এলাকার জনগন আন্দোলন সংগ্রাম করে আসছে। কিন্তু তখনকার প্রেক্ষাপট আর এখনকার প্রেক্ষাপট সম্পূর্ণ ভিন্ন। বর্তমান সরকার কৃষিকে খুবই গুরুত্বের সাথে নিয়ে থাকেন। কৃষকের জন্য ভূর্তকিসহ নানা প্রকার প্রণাদনার ব্যবস্থা করেছেন। ভবদহ এলাকার কৃষি ও কৃষক দুই-ই বছরের পর বছর ফসল না হওয়ায়কঙ্কালসার ও মৃতপ্রায়। অত্র এলাকার জনগন রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট পরিবর্তনের অপেক্ষায় থেকেছে আশির দশক থেকে।
রাজনৈতিক পট পরিবর্তনও মাঝে ১০/ ১২ বছর এখানকার জনগন ভালও ছিল। কিন্তু আবার পানি উন্নয়ন বোর্ডের বিভিন্ন অপরিকল্পিত ও কল্পনা প্রসূতঃ কর্মসূচি নেয় যা নদীর নাব্যতা ওগভীরতা বাড়েনি বরং অবস্থা পূর্বের থেকে খারাপ হতে হতে ২০১৬ সালে যে পরিমানে খারাপ ছিল তার থেকে অনেক অনেক বেশী খারাপ অবস্থায় আছে নদীর নাব্যতা ও অত্র এলাকার জনগন। জলাবদ্ধতা থেকে পরিত্রানের জন্য জলভাসী মানুষেরা পথসভা, হাটসভা,জলের মধ্যে মানব বন্ধন, সুধীজনের সাথে আলোচনা করেছেন।
রবিবার ১লা নভেম্বর যশোরের ভবদহ অঞ্চলের জলভাসী সহস্রাধিক মানুষ পানি নিষ্কাশনের দাবিতে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে গিয়ে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন। দুপুরে ভবদহে টিআরএম চালু; আমডাঙ্গা খাল সংস্কার; হরি, শ্রী, টেকা, মুক্তেশ্বরী নদীর সঙ্গে ভৈরবের সংযোগ; ২১ ও ৯ ভেন্টের মাঝ দিয়ে সরাসরি নদী সংযোগ; নদী ও খালের ওপর সব ধরনের পাটা-বাঁধ অপসারণ ও প্রায় ৮০৮ কোটি টাকার অপরিকল্পিত প্রকল্প বন্ধের দাবিতে ” ভবদহ পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটি”র উদ্যোগে এই কর্মসূচি পালন করা হয়। ভবদহ পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির একটি প্রতিনিধি দল যশোরের জেলা প্রশাসক মো. তমিজুল ইসলাম- এর কাছে স্মারকলিপি দেন। স্মারকলিপি পেয়ে জেলা প্রশাসক নিচে নেমে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের আশ্বস্ত করেন, তাদের দাবি প্রধানমন্ত্রীর কাছে যথাযথভাবে পৌঁছে দেওয়া হবে। বেলা ১২টার দিকে ভবদহ অঞ্চলের সহস্রাধিক নারী-পুরুষ মিছিল সহকারে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে মিলিত হন।
অবস্থান কর্মসুচি চলাকালে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে নেতারা বলেন, গত তিন মাস ধরে আমাদের অঞ্চলে জলাবদ্ধতার সমস্যা চলছে। এরই মধ্যে তলিয়ে গেছে হাজার হাজার হেক্টর ফসলের ক্ষেত, মাছের ঘের। পানি উঠেছে ঘর-বাড়িতে। রান্নাকরা,খাওয়া দাওয়া, চিকিৎসা সেবাসহ সবই বন্ধের উপক্রম।চরম দুর্ভোগে রয়েছে জেলার ৪০ গ্রামের কয়েক লক্ষ জলভাসী মানুষ।
বক্তারা আরও বলেন, এই অবস্থা চলতে থাকলে এই অঞ্চলের মানুষ নিঃস্ব হয়ে যাবে এবং উপায় না পেয়ে করোনাকে উপেক্ষা রাজপথে থাকতে হবে। প্রয়োজনে আমরা সব ধরনের ভোট বর্জন করতে বাধ্য হবো। তারা আরও বলেন, ভবদহের সমস্যা প্রায় ৬০ বছরের। ভবদহের জলাবদ্ধতা নিরসনের নামে জনপ্রতিনিধি ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা লুটপাট ও বাণিজ্য করে চলেছেন। স্থানীয়রা এর থেকে পরিত্রাণ পেতে স্থায়ী সমাধান চান। এ জন্য সেনাবাহিনীর মাধ্যমে পরিকল্পিত জোয়ারাধার প্রকল্প বাস্তবায়ন এবং পানি বের হওয়ার অন্যতম পথ আমডাঙ্গা খালটি ফের খননের মাধ্যমে প্রশস্ত করার দাবি জানান তারা।
সংগঠনের আহ্বায়ক রণজিৎ বাওয়ালীর সভাপতিত্বে সমাবেশে বতৃতা করেন কমিটির উপদেষ্টা ইকবাল কবির জাহিদ, সদস্য সচিব অধ্যাপক চৈতন্য পাল, বীর মুক্তিযোদ্ধা গাজী আব্দুল হামিদ, শেখর চন্দ্র বিশ্বাস, ইলিয়াস হোসেন, সুকৃতি রায়, শিরিন সুলতানা সোহেলী, কার্তিক বকশী প্রমুখ।
নি এম/
Editor & Publisher : Sukriti Mondal.
E-mail: eibelanews2022@gmail.com