শাঁখা সনাতন ধর্মাবলম্বীদের কাছে মহামূল্যবান। শাঁখা ছাড়া সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিয়ে অসম্ভব। শাঁখা হচ্ছে শঙ্খ দিয়ে তৈরি এক ধরনের সাদা অলঙ্কার।
পুরাণে আছে, শঙ্খাসুরের স্ত্রী তুলসী দেবী ছিলেন ভগবান নারায়ণে বিশ্বাসী এক সতীসাধ্বী নারী। আর শঙ্খাসুর ছিল ভগবানবিমুখ অত্যাচারী। তার (শঙ্খাসুর) পাপের শাস্তিস্বরূপ তাকে বধ করার পর ভারত মহাসাগরে ভাসিয়ে দেওয়া হয়। স্বামীব্রতী তুলসী দেবী তা সইতে না পেরে স্বামী এবং নিজের অমরত্বের জন্য ভগবানের কাছে প্রার্থনা করেন। ভগবান প্রার্থনা মঞ্জুর করে তার দেহ থেকে তুলসী গাছ এবং সমুদ্রে হত্যা করা স্বামীর রক্ত বা অস্থি থেকে শঙ্খ বা শাঁখার উৎপত্তি করেন। তুলসী দেবীর ধর্মপরায়ণতায় সন্তুষ্ট হয়ে ভগবান দু'জনকেই ধর্মীয় কাজে নির্ধারণ করে দেন। সেই থেকে পতিব্রতা তুলসীকে চিরস্মরণীয় করে রাখতে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের তুলসী ও শাঁখা ব্যবহারের প্রচলন হয়। ইতিহাসে খ্রিস্টপূর্ব পাঁচ হাজার বছর আগে (মহাভারতের যুগে) শাঁখা ব্যবহারের কথা উল্লেখ আছে।
তা ছাড়া সনাতনদের পূজা-অর্চনা, সামাজিক, মাঙ্গলিকসহ যে কোনো শুভ অনুষ্ঠান শঙ্খের ধ্বনি ছাড়া হয় না বললেই চলে। শঙ্খধ্বনি ছাড়া যে কোনো পূজাই অসমাপ্ত। শঙ্খধ্বনি আমাদের কাছে পবিত্র। শঙ্খ দর্শনে পাপ ক্ষয় হয়। সে জন্য পূজায় সন্ধ্যার সময় বিয়েতে অথবা যে কোনো ধর্মীয় অনুষ্ঠানে শুভ পরিণতির জন্য শঙ্খ বাজানো হয়ে থাকে। শঙ্খ অশুভ শক্তি বিনাশের প্রতীক। কখনও পূজা-পার্বণের ধ্বনিতে কখনও শ্রীকৃষ্ণের রণবাদ্য আবার কখনও নারায়ণের হাতের পরশে কখনও বা সাবিত্রীর সতীত্ব বলয়ে।
শঙ্খ হিন্দু রমণীর সতীত্বের প্রতীক। বিবাহিত হিন্দু রমণীর সঙ্গে জড়িত রয়েছে একজোড়া শাঁখা। কারণ কুমারী অবস্থায় শাঁখা পরা যায় না। তাই সে গুনতে থাকে প্রহর কখন তার হাতে উঠবে বিয়ের প্রতীক হিসেবে একজোড়া শঙ্খবালা। তাদের ধারণা, এ শঙ্খবালা যতদিন হাতে থাকবে ততদিন তার স্বামী সুস্থ দেহে বেঁচে থাকবে। তাদের বিশ্বাস, হাত শাঁখাহীন থাকলে স্বামীর অমঙ্গল হয়। তবে শঙ্খ শুধু বিবাহিত ও হিন্দু রমণীর হাতের শোভা হিসেবে ব্যবহৃত হয় না, আরও অনেক কাজে ব্যবহৃত হয় ধর্ম ও বিশ্বাসের আধার হিসেবে। দেবতার পূজায় শঙ্খে কপিলা গাভীর দুধ ভরে নারায়ণকে স্নান করানো হয়। বলা হয়, শঙ্খধ্বনি যতদূর পর্যন্ত যায় ততদূর পর্যন্ত লক্ষ্মী দেবী অবস্থান করেন। শঙ্খ কূটরস পুষ্টিবর্ধক, বলকারক। শূলকফ-শ্বাস-বিষ দোষনাশক হিসেবেও ব্যবহৃত হয়। মুখের যে কোনো দাগ মোচন করে শঙ্খ চুন।
সাধারণত শঙ্খ পাওয়া যায় ভারত মহাসাগর ও বঙ্গোপসাগরে। আরব সাগরেও কিছু প্রাপ্তি ঘটে। প্রাপ্তির ওপর ভিত্তি করে শঙ্খের বিভিন্ন নামকরণ করা হয়। বিভিন্ন জাতের শঙ্খ রয়েছে। এদের মধ্যে উন্নতমানের হচ্ছে কন্যা কুমারী, রামেশ্বরী, কেপি, জাজি, পাটি, মতি সালামত, ওমেনি, দোয়ালি, সারভি কি, তিতকুটি, ধলা ইত্যাদি। 'মতি সালামত' সর্বশ্রেষ্ঠ। কারণ এর মধ্যে মুক্তা পাওয়া যায়। শঙ্খের মুখ, লেজ ও পিঠ আছে। সাধারণত বামদিকে শঙ্খের মুখ থাকে। যদি শঙ্খের মুখ ডান দিকে থাকে তবে তার মূল্য অনেক। এটাকে নারায়ণের হাতের শঙ্খের অনুরূপ মনে করা হয়। এ দক্ষিণমুখী শঙ্খকে সৌভাগ্যের লক্ষণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এ শঙ্খ দিয়ে পূজা করলে ঘরে সৌভাগ্য আসে, বিপদ-আপদ দূর হয়। শঙ্খ একটি প্রাচীন শিল্প। হরপ্পা ও মহেঞ্জোদারো সভ্যতা আবিষ্কারের সময় শঙ্খশিল্পের বিভিন্ন কারুকাজের নিদর্শন পাওয়া যায়।
নি এম/
Editor & Publisher : Sukriti Mondal.
E-mail: eibelanews2022@gmail.com