বুধবার, ০১ মে ২০২৪
বুধবার, ১৮ই বৈশাখ ১৪৩১
সর্বশেষ
 
 
মুসলিমদের মধ্যে করোনা সন্ত্রাস দেশে দেশে; অভিযুক্ত তবলিগ জামাত !
প্রকাশ: ০৪:৫৭ pm ১২-০৪-২০২০ হালনাগাদ: ০৫:০৪ pm ১২-০৪-২০২০
 
দিল্লী থেকে
 
 
 
 


তবলিগ জামাতের সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করার কূফল ভুগতে হচ্ছে বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানকে। মালেশিয়ার ছবিটাও একই। সেখান থেকেই তবলিগের করোনা ছড়ানোর প্রক্রিয়া শুরু। বাংলাদেশ সরকারের মতো আগে থেকেই বাকি এই তিন দেশও সতর্ক করেছিল। কিন্তু শোনেনি। মুসলিম সমাজই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বেশি। তাই তবলিগির সমালোচনা করছেন ভারতের মুসলিম সুশীলসমাজ। বাংলাদেশে অবশ্য তবলিগ জামাত এখন সরকারি নির্দেশনা মেনে চলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কিন্তু পাকিস্তানি প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের নির্দেশ এখনও মানছেন না সে দেশের মুসল্লিরা।

দুনিয়া জুড়ে করোনা সন্ত্রাসের মধ্যেই ২৭ ফেব্রুয়ারি মালেশিয়ার শ্রীপেটলিং মসজিদে আয়োজন করা হয় তবলিগ জামাত। বাংলাদেশ-সহ বিভিন্ন দেশ থেকে মুসল্লিরা সেখানে যোগ দেন। মালেশিয়া সরকারের ভূমিকা ছিল নির্রব দর্শকের। ফলে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে কোভিড ১৯।  পরবর্তীতে মালেশিয়ার স্বাস্থ্যমন্ত্রকের মহাপরিচালক মূর হিশাম আবদুল্লাহ নিজেই জানিয়েছেন, তাঁদের দেশের ৪২৮ জন করোনা আক্রান্তের মধ্যে ২৪৩ জনেরই রয়েছে তবলিগ যোগ। এরপরও হুঁশ ফেরেনি তবলিগ জামাতের। তাঁদের কারও কারও দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরনের জন্য মানব সভ্যতাই আজ ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির সামনে দাঁড়িয়ে। আশার কথা, বাংলাদেশের  মুসল্লিরা  প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কথা শুনে আপাতত জমায়েত বন্ধ রেখেছেন।
মার্চ মাসে সরকারি নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে দিল্লির নিজামুদ্দিনে মারকাজের অনুসারিরা যোগ দেন তবলিগ জামাতে। বিভিন্ন দেশের আড়াই হাজার অনুসারী সেখানে যোগ দেন। সেই জামাত থেকে গোটা ভারতে মুসলিমদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে করোনা সংক্রমণ। তারপরও হুঁশ ফেরেনি ভারতের তবলিগ অনুসারীদের। বিভিন্ন চিকিতসালয়ে তবলিগ আক্রান্তদের চিকিতসাকর্মীদের সঙ্গে অসভ্যতা করতে দেখা গিয়েছে। অথচ ভারত সরকার কোয়ারেন্টাইনে থাকা সকলের জন্য বিলাসবহুল থাকা-খাওয়ার বন্দোবস্ত করেছে। চিকিৎসা করা হচ্ছে বিনি পয়সায়। বার বার আবেদন করা হয়েছে নিজামুদ্দিন ফেরতদের স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যোগাযোগ করার জন্য। সেই সহযোগিতাও তাঁরা অনেকেই করছেন না। দিল্লির তবলিগ জামাত ফেরত এক করোনা আক্রান্ত যুবক মহারাষ্ট্রের একটি হাসপাতালে চিকিৎসার বদলে আত্মহত্যার পথ বেছে নেন। পরিস্থিতি উদ্বেগজনক হলেও ভারতের তবলিগ জামাতের মূল কারিগর মৌলানা সাদ এখনও প্ররোচনামূলক কথাবার্তা বলে চলেছেন। আর ভারতের প্রায় সিংহভাগ মুসলিম করোনা আক্রান্তই হচ্ছে তবলিগ জামাতের সৃষ্টি।

পাকিস্তানে প্রথম করোনা সংক্রমণ ধরা পড়ে ২৬ ফেব্রুয়ারি। ইরান ফেরত এক তীর্থযাত্রীর শরীরে মেলে কোবিড ১৯।  তারপর পাকিস্তানি প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান জনগণের উদ্দেশে বলেন, 'ঘাবরাবার কিছু নেই। তবে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে।' তিনি জনসাধারণকে সতর্ক করে দিলেও লাহোরে বসে তবলিগ জামাত। দুনিয়ার বিভিন্ন দেশ থেকে আড়াই লাখ মুসল্লি তাতে যোগ দেন বলে পাকিস্তানের জনপ্রিয় সংবাদ পত্র ডন-এর খবর। 

পাকিস্তান পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের রিপোর্ট, ৭০ হাজার বিদেশি লাহোরের তবলিগ জামাতে যোগ দেন। পরিস্থিতি ভয়াবহ চেহারা নেয়। ইমরান খানের নির্দেশে পাকিস্তানি ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রনালয় কঠোর ভাবে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার কথা বলেন। কিন্তু ধর্মীয় নেতারা সেটা শুনছেন না। বেশিরভাগ মসজিদই খোলা। জুম্মার নামাজও চলছে। আর বাড়ছে করোনার প্রকোপ। আফগান সীমান্তেত টাপতানে গড়ে তোলা হয়েছে কোয়ারেন্টাইন সেন্টার। পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীরেও রাখা হচ্ছে করোনার সন্দেহভাজন আক্রান্তদের। লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা। ইমরান জনগণকে সতর্ক করে দিয়ে বলে চলেছেন, 'সাবধান। করোনার কোনও প্রতিষেধক নেই। সামাজিক দূরত্ব বজায় না রাখলে বিপদ হবে।' কিন্তু পাক-সেনা বা ধর্মীয় নেতারা সেকথায় কান দিচ্ছেন না। তবলিগ জামাতে কাণ্ডজ্ঞানের অভাব নিয়ে আগেই কটাক্ষ করেছেন পাকিস্তানি স্বাস্থ্য দপ্তরের কর্তারা। বাংলাদেশের পরিস্থিতি অবশ্য কিছুটা ভালো। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সমস্ত ধরনের ধর্মীয় জমায়েতের থেকে জনগণকে বিরত থাকার অনুরোধ জানিয়েছেন। সকলকে এই সময়ে ঘরে থাকার অনুরোধ জানান তিনি। বাংলাদেশের ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ মোহম্মাদ আবদুল্লাহ জানিয়েছেন, মসজিদে ৫ এবং জুম্মায় ১০ জনের বেশি মানুষের জমায়েত নিষিদ্ধ। সেই নির্দেশনা মেনে চলার কথা বলেছেন তবলিগ জামাতের বাংলাদেশে আহলে শুরা প্রফেসর ইউনুস শিকদার।  তাই বাংলাদেশে এখন তবলিগ জামাত প্রায় বন্ধ। বন্ধ জুম্মার নামাজে ব্যাপক ভিড়ও। পরিস্থিতি অনুধাবন করে বাংলাদেশের বেশিরভাগ মানুষই ঘরবন্দি। স্থগিত রাখা হয়েছে টঙ্গির তবলিগ ইজতেমাও। কিন্তু পাকিস্তান বা ভারতের মারকাজের অনুসারিরা সেই পথে না হাঁটায় মুসলিমদের মধ্যে বাড়ছে করোনার সংক্রমণও।

অথচ, ভারতের মুসলিমদের একটা বড় অংশ বহুদিন ধরেই সরকারি নির্দেশনা মেনে চলার কথা বলে আসছিলেন। ভারত সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন রাজ্য সরকার বলছেন, দিল্লির নিজামুদ্দিনে তবলিগ জামাত ফেরতদের এখনই স্বাস্থ্য কেন্দ্রে যোগাযোগ করার জন্য। কিন্তু এখনও অনেকে সেইকথা তাঁরা শুনছেন না। অথচ পরিস্থিতি এখন ভয়াবহ। আসামের উদাহরণ দিলেই বিষয়টি অনেকটা স্পষ্ট হবে। আসামে মোট করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ৩০। এরমধ্যে ২৯ জনেরই রয়েছে তবলিগ জামাত-যোগ। পশ্চিবঙ্গে চিহ্ণিত তবলিগ ফেরতদের অনেককেই কলকাতার রাজারহাটে বিশাল হজ হাউজে বিলাসবহুলভাবেই রাখা হয়েছে। একইরকম ভাবে  ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে কোয়ারেন্টাইন সেন্টার খুলে রাখা হচ্ছে নিজামুদ্দিন ফেরতদের। তবু অনেকে এখনও আত্মগোপন করে সমাজের ক্ষতি করে চলেছে। তাই মুসলিম সম্প্রদায়ের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয় দিল্লির স্বাস্থ্যমন্ত্রী সত্যেন্দ জৈনও দেশের এই করোনা প্রকোপের জন্য তবলিগকেই দায়ি করছেন।

দুনিয়ার পরিস্থিতি ভয়াবহ, এটা বুঝতে পেরেছে খোদ সৌদি আরবও। তাই সেখানকার হাজি ও উমরাহ  মন্ত্রী মোহাম্মদ সালেহ বিন তাহের বেন্টেন জানিয়েছেন, আপাতত হজ হচ্ছেনা। দুনিয়ার মুসলিম সম্প্রদায়ের উদ্দেশে তিনি বলেন, 'আমরা প্রস্তুত। কিন্তু দুনিয়ার পরিস্থিতি ভয়াবহ। তাই মুসলিম ভাইদের কাছে আমাদের অনুরোধ, দয়া করে আপনারা পবিত্র হজ যাত্রার পরিকল্পনা এখন পিছিয়ে দেন।' সৌদি আরব হজ পিছিয়ে দিলেও ভারত বা পাকিস্তানের তবলিগরা তাঁদের জামাত পিছিয়ে দিতে অস্বীকার করে। তাঁদের এই আচরনের কড়া সমালোচনা করছে ভারতীয় মুসলিম সুশীল সমাজ। জমিয়ত-ই-উলেমা-হিন্দ-এর সভাপতি মোহম্মদ আর্শাদ মাদানি দিল্লির তবলিগ জামাতকে 'দেশ বিরেোধী' বলে বর্ণনা করেন। এই সংগঠনেরই অসম শাখার সভাপতি, ভারতের জাতীয় সংসদের সদস্য বদরুদ্দিন আজমলের মতে, মুসলিমদের সর্বনাশ ডেকে এনেছেন তবলিগ জামাতের আয়োজকরা। ভারত জুড়ে সতর্কতা জারি থাকলেও তবলিগ জামাতের আয়োজনে বাড়তি সতর্কতার প্রয়োজন ছিল বলে মনে করেন দিল্লি জামা মসজিদের শাহি ইমাম সৈয়দ আহমেদ বুখারি। 

পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্বের অন্যান্য রাষ্ট্রনায়কদের মতোই দেশবাসীকে সতর্ক করেছেন। জারি করেছেন একাধিক নিষেধাজ্ঞা। অথচ সেই নির্দেশনা না মেনে ধর্মীয় নেতারা নিজেদের সম্প্রদায়েরই বিপদ ডেকে এনেছেন। তাই মারাত্মক চেহারা নিচ্ছে করোনার সন্ত্রাস। নিজেদের ভুল সংশোধন করুক তবলিগ। সদস্যদের অবিলম্বে করোনা পরীক্ষার জন্য এগিয়ে আসার নির্দেশনা জারি হোক। চাইছে ভারত। চাইছেন মুসলিম ধর্মের বহু বুদ্ধিজীবীও। এখন দেখার মারকাজের অনুসারীরা দুনিয়ার এই করোনা দুর্যোগের দিনে কোন্ পথ বেছে নেন।

নি এম/

 
 
 
   
  Print  
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
আরও খবর

 
 
 

 

Editor & Publisher : Sukriti Mondal.

E-mail: eibelanews2022@gmail.com

a concern of Eibela Ltd.

Request Mobile Site

Copyright © 2024 Eibela.Com
Developed by: coder71